অর্ধবছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে সংক্রমণ ছড়ানোর পরও কমেনি কোভিড ১৯-এর তীব্রতা। ফলে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেকেই জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। নতুন করে শুরু হয়েছে উপসর্গহীন মৃত্যু। এতে আতঙ্ক বাড়ছে। আতঙ্ক বাড়ার পেছনে রয়েছে বাজারে প্রতিষেধক না আসা। এর মধ্যে রয়েছে করোনার ঘনঘন জিন পরিবর্তন। বাংলাদেশে ৫৯০ বার জিন পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে আটটিই স্বতন্ত্র রূপ।
তথ্য মতে, বর্তমানে উপসর্গহীন অবস্থায় মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। নিহতের পরিবার থেকে বলা হচ্ছে, সদ্য প্রয়াত ব্যক্তির জ্বর-সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ ছিল না। নামমাত্র শ্বাসকষ্টে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় মৃতের রিপোর্ট এসেছে করোনা পজিটিভ। এদের সংখ্যা কম নয়, ক্রমেই বাড়ছে। আর সে কারণেই আতঙ্কও সংক্রমিত হচ্ছে। এদিকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম থাকায় শহরের পাশাপাশি গ্রামেও সংক্রমণের বিস্তার ঘটছে। সরকারের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। শহরের পাশাপাশি সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। তবে এখানে একটি কথা না বললেই নয়, ভাবনাটা একক সরকারের ওপর অর্পণ করে বসে থাকলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো অবস্থার জন্ম দেবে। তাই সবাইকে সচেতনভাবে যৌথ উদ্যোগে বিষয়টির মোকাবিলা করতে হবে। যেহেতু এখনো এর কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ বাজারে নেই, তাই সচেতন থেকে করোনা প্রতিরোধে মনোযোগী হওয়াই একমাত্র পথ। নিজেদের সর্বোচ্চভাবে অপরের ছোঁয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা এবং নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখাটাই সংক্রমণ রোধের প্রধান উপায়। আর বিষয়টি সরকারের এক্তিয়ারে কতটুকু—সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
যেহেতু জীবনটা আপনার-আমার-আমাদের। তাই এ যুদ্ধে আমাদের অংশগ্রহণই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনভাবে কিছু বিধিবিধান মেনে চলতে পারলে সংক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। মৃতের সংখ্যাও নামিয়ে আনা সম্ভব। বাস্তবতা বলছে, সাধারণ মানুষ যেখানে বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে জীবনযাপন করছে, সেখানেই সংক্রমণের আধিক্য ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই গ্রামমুখী হয়েছে শহরের মানুষ। যারা গ্রামে ফিরেছেন তারা জানেন না তারা করোনাভাইরাস বহন করছেন কি না। এ ক্ষেত্রে তাদের অনেক বেশি সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতায় তা হচ্ছে না। তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না। আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। একদিকে শহরের মতো গ্রামে চিকিৎসা সুবিধা নেই। তারপর করোনার চিকিৎসা। চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রামের সংক্রমণের জন্য আমারাই দায়ী থাকব। আমাদের অসচেতনতাই গ্রামীণ জনপদকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে। এ মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে না পারলে এ রোগে সেখানেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকবে এবং তা হবে দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত।
আমরা মনে করি, করোনার বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে তাতে শুধু সরকারের ওপর দায় অর্পণ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় আর নেই। সরকার তার কাজে আরো মনোযোগী হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং আমরাও যেন আমাদের দায়িত্ব পালনে আর অবহেলা না করি। কেননা জীবন একটাই। রক্ষার দায়িত্বও আমাদের।