সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

চাটমোহরে লোহার শিকলে বন্দী যুবক

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩, ৫:৩২ অপরাহ্ণ

চাটমোহর দোলং মহল্লার আদারপাড়া এলাকায় একটি বদ্ধ ঘরের দড়জার ফাঁক দিয়ে তাকালে চোখে পরে এক যুবককে। সে সময় ঘরের অপর প্রান্ত থেকে জানালা দিয়ে কেউ একজন এক থালা পান্তা ভাত দেন ওই যুবকের হাতে। খাবার দেওয়ার পর পরই বাহির থেকে আটকে দেওয়া হয় জানালা। যুবকটি খেতে শুরু করে। নাম ধরে ডাক দিলে সারা দেয় আমি আশিক। প্রতিবেশিরা ডাক দিলেও ভিতর থেকে টিনের তৈরি দড়জা খুলে দেয় আশিক। ছোট্ট ঘরটি সবসময় বন্ধ থাকায় ও ঘরের মধ্যে প্রাকৃতিক কাজ সারায় ঘরময় দূর্গন্ধ। এসময় আশিক জানায় সে সুস্থ্য। তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ঘরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ঘরের একপাশে পায়খানা স্থাপন করে দেওয়া হলেও ছিকল ছোট হওয়ায় পায়খানা পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব নয় আশিকের পক্ষে। তাই ঘরের মেঝেতেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় তাকে।

ঘটনাটি পাবনার চাটমোহরের দোলং মহল্লার আদারপাড়া এলাকায় আশিক মোহন্ত (২২) নামক এক যুবককে বদ্ধ অন্ধকার ঘরে লোহার শিকলে আটকে রাখা রয়েছে গত প্রায় পাঁচ মাস যাবত। শিকলের এক প্রান্ত আশিকের দুই পায়ে আটকানো অপর প্রান্ত ঘরের খুঁটির সাথে তালাবদ্ধ। এক হাতে লাগানো রয়েছে অপর একটি শিকল। আশিক উক্ত এলাকার রাখাল মোহন্ত ও মৃত আরতী মোহন্ত’র ছেলে। পরিবারের দাবী আশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। অপর দিকে আশিকের দাবী সে সুস্থ্য।

আশিকের বাবা রাখাল মোহন্ত জানান, গত প্রায় পাঁচ বছর যাবত আশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। ওর মাও মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। ওর মা মারা যাবার পর আমি দ্বিতীয় বিয়ে করি। পাবনা মানসিক হাসপাতালে কয়েক দফায় ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন ওকে আর ভর্তি নেয় না, বলে ও সুস্থ্য। আমি সহায় সম্বলহীন। ওই ছেলের চিকিৎসা বাবদ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছি। ছেলেটি কোন ওষুধ খায় না। নিজস্ব একটা দোকান করেছিলাম, সেটিও এখন নেই। স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করে কোন রকমে জীবন চালছে। ছেলে নেশা করতো। ওকে আগে ছেড়ে দিয়ে রাখতাম। রাস্তা ঘাটে প্রাকৃতিক কাজ সারতো। এতে প্রতিবেশিরা বিরক্ত হতো। আমাকে এবং প্রতিবেশিদের মারধোর করতে যেত। যে দোকানে কাজ করি সেখানেও দুইবার ভাংচুর করেছে। মালিককে আহত করেছে। সুযোগ পেলেই আমাকে আক্রমন করতো। বাধ্য হয়ে প্রাণ ভয়ে হাতে পায়ে শিকল লাগিয়ে ঘরে আটকে রেখেছি। আমার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং আমি সব সময় ওর সেবা যতœ করি। তবে, রাখাল মোহন্তর দ্বিতীয় স্ত্রী রানু রানী এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে প্রতিবেশিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। প্রতিবেশি আব্দুল আজিজ জানান, আশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। ছাড়া পেলেই কাউকে না কাউকে আক্রমন করতে যায়। আবার ছিকল দেয়ে বেঁধে রাখাও অন্যায়। পরিবারটি নিরুপায় ও অসহায় হয়ে ছিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছে। দোলং মহল্লার জহুরুল ইসলাম জানান, ছেলেটি প্রায় সময়ই ঠিক ঠাক কথা বার্তা বলে। কখনো কখনো ভুলও বলে। পুরোপুরি ভাল হওয়ার জন্য চিকিৎসা ও পরিবারের যথাযথ সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্য প্রতিবেশিরা জানান, রাখাল মোহন্তর মৃত স্ত্রীর আরো তিন সন্তান রয়েছে। ভরণ পোষণে রাখাল মোহন্তকে বেগ পেতে হয় বিধায় ঐ দুই সন্তান আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে মানুষ হচ্ছে। আশিকের ছোট একটি ভাই এ বাড়িতেই রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের মেয়েও রাখালের বাড়িতে রয়েছে। রাখালের পরিবারে এসে দ্বিতীয় স্ত্রীর আরেকটি সন্তান হয়েছে। সব মিলে এ পরিবারটি এখন অসহায়।

এ ব্যাপারে সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) হাবিুল ইসলাম জানান, বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে চাটমোহর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মমতাজ মহল জানান, শিকল দিয়ে বেধে রাখা খুবই অমানবিক কাজ হয়েছে। এটি মানবাধিকার লংঘন। মানসিক ভারসাম্যহীন হলে তার চিকিৎসা করানো দরকার। আমি এ ছেলেটির বাবা মা কে ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে বলবো এবং আমার দিক থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর