শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

বর্ষার আগমনী নিয়ে আসে সাদা শুভ্রতার সতেজ ফুল চালতা.

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০, ৫:১৬ অপরাহ্ণ

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
চালতা ফুল নিয়ে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের বিশেষ আবেগ ছিল। কবিতায় তিনি লিখেছিলেন, আমি চ’লে যাব ব’লে/চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে…।
কবি বেঁচে না থাকলেও এই বর্ষায় তার প্রিয় চালতা ফুল ফুটে আছে। বেঁচে আছে গ্রাম থেকে শহরের সর্বত্র। চালতা ফুল যেমন সুন্দর, তেমনি পাতাও। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বিষ্ণু দে তাই লিখেছিলেন, আকাশ নীলের তারাখচা পথে বৃষ্টি পড়ে/ চালতা ফুলে ফলের বাগান মদির করে…। সর্বত্র পরিচিত চালতা বাংলাদেশে বহুকাল ধরে সবার মাঝে বেচে আছে। এর আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশেও চালতা গাছ দেখা যায়। বিশেষত এটি ভারত বর্ষীয় উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। এ কারণেই বৈজ্ঞানিক নাম “ডিলেনিয়া ইন্ডিকা”। ‘ইন্ডিকা’ শব্দটি ইন্ডিয়া থেকে নেয়া। আর ‘ডিলেনিয়া’ নামটি নেয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের বিখ্যাত তরুবিদ জে. জে. ডিলেনিয়াসের নাম থেকে। চালতার ইংরেজী নাম “এলিফ্যান্ট আপেল”।

বাংলাদেশে চালতাকে চাইলতা, চালিতা, চাইলতে ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। বীজ থেকে এ গাছের বংশ বৃদ্ধি হয়ে আপনা আপনি বেঁচে থাকে। গাছে ফল পাকার অল্প দিনের মধ্যেই ফল ঝড়ে পড়ে। সেই বীজ থেকে গাছের নিচে আরও গাছ জন্ম নেয়। চালতার আয়তাকৃতি বড় পাতার খাঁজকাটা আউটলাইন। করাতের দাঁতের মতো দেখতে। ভয়ঙ্কর না হলেও পাতা শক্ত আলযুক্ত। মনে হবে, কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে চমৎকার নক্সা করে দিয়েছে। পাতার শিরা উঁচু সমান্তরাল। গাছের ঘন পাতার আড়ালে চোখ জোড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে থাকে চালতা ফুল। সাদা পাঁচটি পাপড়ি। বেশ মোটা ও মাংসল। গোলাকৃতি ফুলের পরাগকেশর অসংখ্য। সব মিলিয়ে চঅরতা ফুল দেখতে দৃষ্টিনন্দন, রয়েছে চমতকার গন্ধ। একারনে শহরের কোন কোন উদ্যানে যত্ন করে লাগানো হয় এ গাছটি। তবে চালতা মূলত বেঁচে আছে গ্রামে। বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে গাছটির দেখা মেলে। বাড়ির পেছনে ঝোপ-জঙ্গল ধরনের জায়গায় অযত্নে বেড়ে ওঠে। চেনা-জানা গাছের সৌন্দর্য হয়ত খুঁটিয়ে কেউ দেখেন না। তবে মেয়েরা সবুজ বৃতি আলাদা করে তাতে লবণ মিশিয়ে খায়। এই টক স্বাদের সঙ্গে শহুরেরাও পরিচিত।

উদ্ভিদবিদদের মতে, ঔষধী গুনে ভরপুর মধ্যমাকৃতি চিরহরিৎ বৃক্ষ চালতা। চালতার মধ্যের পিচ্ছিল অংশ ব্যবহার হয় বিভিন্ন ঔষধী কাজে। গাছের উচ্চতা ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। শাখা-প্রশাখা এলোমেলো। বাকল লালচে ও মসৃণ। গাছের গড় আয়ু মোটামুটি ২৫ থেকে ৫০ বছর। পাতা ৮ থেকে ১৪ ইঞ্চি দীর্ঘ হয়। বছরের মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল ফোটে। ফুলের ব্যাস হয় ১৫ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। বৃতি সবুজ, দলের শুভ্রতা, পরাগের হলুদ ও তারকাবৃতি গর্ভমুল, সব মিলিয়ে চালতা ফুলের গড়ন অত্যন্ত আকর্ষণীয়। চালতা ফুলের বৃতিই একসময় ফলে রূপান্তরিত হয়। টক স্বাদের ফল নারীদের ভীষণ পছন্দ। শরত-হেমন্ত কালে ফল পাকার সময়। বসন্তকাল পর্যন্ত পাওয়া যায় পাকা ফল। চালতা ফল হয় টক-মিষ্টি। আচার, চাটনি, টক ডাল রান্নায় ব্যবহৃত হয়। পাকা ফল পিষে নিয়ে লবণ, কাঁচামরিচ দিয়ে মেখে খাওয়া যায়। চালতার শাঁস নানা খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। জেলি ও শরবত তৈরির হয় চালতা ফল থেকে। গাছটি থেকে শক্ত কাঠ হয়। নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এ কাঠ।

 

ফার্নিচারে যথেষ্ট ব্যবহার লক্ষ করা যায় এ গাছের। ব্যবহৃত হয় বন্দুকের বাঁট তৈরিতেও। এমন আরও অনেক উপকারের কথা বলা যাবে। কিন্তু সৌন্দর্যগুণের কোন তুলনা হয় না। চালতা ফুলের পাপড়ির ওপর বৃষ্টির জল গড়িয়ে পরে যখন, যখন বিন্দু বিন্দু জলের কণা কোমল পাপড়ির গায়ে স্থির হয়ে থাকে তখন চোখ সরানো যায় না। বর্ষা যে এসেছে, অত্যান্ত আকর্ষণীয় এই ফুল তা জানিয়ে দেয়। বৃষ্টির জলে ধুয়ে সাফ প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর যারা খুঁজে বেড়ান, চালতা ফুল তাদের অভিভূত করে। বৃষ্টিভেজা সতেজ সাদা ফুল বর্ষার অমূল্য উপহার। প্রকৃতি প্রেমীরা ফুলের সৌন্দর্যে বুঁদ হয়ে থাকেন। অনিন্দ্যসুন্দর চালতা বেঁচে থাক সবার হৃদয়ে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com