শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:১২ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

পাবনা প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক আনোয়ারুল হককে স্মরণ

পাবনা প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৪৪ অপরাহ্ণ

পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ভাষা সংগ্রামী আনোয়ারুল হক ছিলেন সৎ ও আদর্শ সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃত। পাবনার সাংবাদিকসহ সকল মানুষ তাকে চীরদিন স্মরণ করবে। তার আর্দশকে ধারণ করে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে ভাবে।
তারা বলেন, সাংবাদিক আনোয়ারুল হক ছিলেন একজন নির্লোভ ব্যক্তি। সে ইচ্ছে করলে অনেক সম্পদের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু  তিনি তা করেননি। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ, আদর্শ সাংবাদিক।
সোমবার রাতে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ভাষা সংগ্রামী আনোয়ারুল হকের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পাবনা প্রেসক্লাব সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক আহমেদ উল হক রানা, প্রবীন সাংবাদিক বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ খান, পাবনা রির্পোটাস ইউনিটির সাবেক সম্পাদক কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা,
পাবনা প্রেসক্লাবের সহ সম্পাদক সরোয়ার উল্লাস, কল্যান সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুইট, ক্রীড়া সম্পাদক কলিট তালুকদার, প্রেসক্লাব সদস্য মনিরুজ্জামান শিপন, ফাহিমুল কবীর খান শান্তুনু, ইমরোজ খন্দকার বাপ্পী, রিজভী রাইসুল ইসলাম জয় প্রমুখ।
সভার শুরুতে আনোয়ারুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ভাষাসৈনিক ও বরেণ্য সামাজিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক আনোয়ারুল হক ২০১৯ সালের আজকের এই দিনে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া মহল্লার নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
সাংবাদিক আনোয়ারুল হক ১৯৩৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তাজউদ্দিন আহমেদ (বিএ) ব্রিটিশ আমলে কলকাতা করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। মা আমিরুন নেছা ছিলেন গৃহিণী।
সাংবাদিক আনোয়ারুল হক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেন। ১৯৫৩ সালে তাঁকে সাতদিনের জন্য কারাবরণ করতে হয়েছে। তিনি রাধানগর মজুমদার একাডেমি, পাবনা থেকে ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিক,  পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। কর্মজীবনের প্রথমে তিনি পূবালী ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাক-এর পাবনার সংবাদদাতা হিসেবে প্রথম সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬১ সালে পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য নিভৃতে কাজ করে গেছেন। তিনি একাধিকবার পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৬৭ সালে সরকারিভাবে আমদানিকৃত বিষাক্ত ভুট্টা খেয়ে পাবনার সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তিনি আইয়ুব সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করেন। সে সময় ভুট্টা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে পাবনার অনেক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আনোয়ারুল হককেও গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে অনেকেই জামিনে মুক্তি পেলেও আনোয়ারুল হককে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ফলে দুই বছর তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।
১৯৬৭ সালে কিছুদিনের জন্য দৈনিক ইত্তেফাক বন্ধ থাকলে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার পাবনার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। পুনরায় ইত্তেফাক চালু হলে তিনি আবার সে পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মৃত্যুর মুখেও আনোয়ারুল হক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসি ভূমিকা রাখেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি সর্বক্ষেত্রেই নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তিনি। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পাবনা জেলা শাখা প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন এবং সভাপতি নিযুক্ত হন।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া পাবনা অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন-সদস্য এবং জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, পাবনা জেলা শাখার সদস্য হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সাংবাদিক আনোয়ারুল হকের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন সম্মানজনক পেশা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত আছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com