বিএনপি’র দুর্গ খ্যাত বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভেঙে তছনছ করার কৌশলে মাঠে নেমেছে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ্যাড. কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু ও আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে বিএনপি’র শীর্ষ নেতার উপর হামলা করা মন্টু খান। এই দুই নেতার সাথে স¤প্রতি যোগ হয়েছেন চরবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাতকরা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট মাদক কারবারি জিয়াউল ইসলাম সাবু। সাবুর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসাসহ সংগঠন পরিপন্থী ও অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপক অভিযোগ।
ফটোসেশন করা বিএনপি নেতা কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু এবং নেতাকর্মীদের পদ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ধান্দাবাজী করা মন্টু খানের সাথে একত্রে বিএনপি ভাঙ্গার কাজে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন জিয়াউল ইসলাম সাবু। এই তিন নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্ষমতা আমলের দীর্ঘ ১৪ বছর যাবত সদর উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে থেকে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজী, দূর্নীতিতে নিমজ্জিত থেকে সংগঠন পরিপন্থী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার কারণে সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙ্গে পরে। এক পর্যায় তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সদর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথ ছেড়ে ঘুর মুখী হয়েপরে। দলের এমন দৈণ্যদশা থেকে উত্তরণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনদের নেতৃত্বে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করায় ঘুরে দাড়ায় বরিশাল বিএনপি।
কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে এসব ষড়যন্ত্রকারী নেতারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানারে ঝাড়ু পেটা পর্যন্ত করেছে।
নেতা কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্র ঘোষিত সদর উপজেলা বিএনপির কর্মসূচী পন্ড করতে তারা সদর উপজেলা বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের লোকজনের সহায়তায় চরবাড়ীয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা নামক একটি গ্রামে গিয়ে ১৫/২০ জন লোক নিয়ে মিছিল করে ফটো সেশন করে। এসব টাকা খরচ করে পত্রিকায় ছাপিয়ে হাইকমান্ডকে দেখায় আমরাও কর্মসূচী পালন করি।
সদর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানায়, দীর্ঘ ১৪ বছরের সদর উপজেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক কমিটির ঘোষিত সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি দলের পরি¶ীত ও ত্যাগী ২২ মামলায় ৪বার কারাবরণকারী সর্বজনপ্রিয় নেতা আলহাজ্ব নুরুল আমীনকে আহবায়ক এবং ৮মামলায় ৮বার কারাবরণকারী নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম সেলিমকে সদস্য সচিব করে বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে আসল রূপে ফিরে আসে দূর্গ খ্যাত বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি।
নতুন নেতৃত্বে বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপি যখন সাংগঠনিকভাবে পরিপূর্ণ শক্তিশালী হচ্ছে, ঠিক তখন আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলীয় কর্মসূচীর নামে অহেতুক গ্রুপিং সৃষ্টি করে সংগঠিত সদর উপজেলা বিএনপিকে ধ্বংস করার পায়তারা চালাচ্ছে ওই তিন নেতা।
এদিকে এ্যাড. কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু দলীয় পদে থেকেও সরকার দলের মামলা-হামলার শিকার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মামলা পরিচালনার নামে ব্যপক অর্থ বাণিজ্য করে দলীয় কর্মীদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। বাচ্চু সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে দলীয় সব কর্মসূচীতে দায়সারাভাবে উপস্থিত থেকে ফটোসেশান করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে। আতাঁত করার কারণে বর্তমান সরকারের আমলের একটি মামলারও আসামি হয়নি এ্যাড. কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে ফটোসেশান বাচ্চু।
ধান্দাবাজী করা মন্টু খান প্রতিদিন সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাসায় গিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা এনে বাজার করে বাসায় ফেরার কথা লোকমুখে সবার জানা। বাজারের ডিমওয়ালা, মুরগীওয়ালা, মাংসওয়ালদের কাছে এক আতংকের নাম মন্টু খান। তার স্বেচ্ছাচারীতা ও অনৈতিক কারণে তার নিজ এলাকা জাগুয়া ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ডা. হোসেন আলী, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, মোস্তাক আলম চৌধুরী, হাফেজ কুট্টিসহ প্রায় ২৫জন কর্মী বান্ধব বিএনপি নেতা দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
এছাড়াও মন্টু খান দলের হাইকমান্ডের সাথে ভালো সম্পর্কর সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে দুহাতে টাকা কামানোর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মন্টু খান বিএনপি অফিসের মাসের বিদ্যুৎ বিল দেয়ার কথা বলে কমপক্ষে ২০-২৫ জন নেতার কাছ থেকে টাকা তুলতেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। মুলত ধান্দাবাজিই তার মূল নেশা ও পেশা।
বিএনপি ক্ষমতার সময়ে মজিবর রহমান সরোয়ার অনুসারী হয়ে ফেরি করে ঔষধ বিক্রেতা জিয়াউল ইসলাম সাবু সক্রিয় রাজনীতি না করেও ব্যপক সুবিধা গ্রহণ করেন। সাবু সরোয়ারের জন্মস্থানের লোক হওয়ার সুবাদে দলীয় সমর্থন বাগিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের পক্ষে ক্ষমতায় গিয়ে সাবু মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পরায় চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সরকার সাবুকে ২ বছর বরখাস্ত করে রাখে। ক্ষমতার পালাবদলে সাবুও ভর করে আওয়ামী লীগের কাঁধে। আওয়ামী ক্ষমতার ১৪ বছরে সাবু মাদক ব্যবসা করে অর্থ কামানোর পাশাপাশি মাদক কারবারি খেতাবও অর্জন করেছেন।
সাবুর ঘনিষ্ট বিএনপি নেতা আব্বাস জানায়, বিগত ১৪ বছরে দলীয় সকল কর্মসূচীতে সাবু অনুপস্থিত থাকলেও মোটা অংকের আর্থিক লাভবান হয়ে তাকে নিয়ে মাঠে নামেন কন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন।
আব্বাসসহ একাধিক নেতা জানায়, আহবায়ক নুরুল আমীন ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে সদর উপজেলা বিএনপি বর্তমানে বেশ শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শিরিন আপা সদর আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন পেতে জোড়ালো চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে নিজ ঘরানার লোক দিয়ে কমিটি করার টার্গেট শিরিন আপার চেষ্টা দীর্ঘদিনের। তাছাড়া জিয়াউল ইসলাম সাবু, মজিবর রহমান সরোয়ার ও বিলকিস জাহান শিরিন আপার জন্মস্থান হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। একারণে তাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি বিদ্যমান রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ সদর উপজেলা বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ফটোসেশান নেতা কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু, মন্টু খান ও জিয়াউল ইসলাম সাবুর বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ড দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দলের ধংসের বাকী থাকবে না কিছুই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চু জানান, সদর উপজেলা বিএনপিতে অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। আমরা যা কিছু করছি শিরিন আপার নির্দেশেই করছি। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর আসন থেকে তিনি নির্বাচন করবেন! এনায়েত হোসেন ওরফে বাচ্চুর সুরে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেন চাঁদাবাজ খ্যাত মন্টু খানও।