ষোলশ’ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনীর বিশ্বনন্দিত সতীসাবিত্রী নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তৎকালীন নিচানীনগর বর্তমানে বিনসাড়া গ্রামে। বাছোবানিয়ার একমাত্র রূপসী কন্যা ছিল বেহুলা সুন্দরী।
এককালে তাড়াশের বিভিন্ন এলাকায় রাজা জমিদারের বসত ছিল। এখনও তাড়াশে অতীতের বহু পুরাকীর্তি রয়েছে। বেহুলার বাড়ি এবং জীয়ন কূপ তাড়াশে রয়েছে। এ গ্রামে আছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন, অসংখ্য পুরোনো মন্দির দালান কোঠা এখনও বিদ্যমান।
রূপে-গুণের অধিকারিণী বেহুলা সুন্দরী বাবা বাছোবানিয়ার সঙ্গে প্রায়ই বাজার করত। বেহুলা যে বাজারে যেত তার নাম চান্দেরবাজার। প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর চান্দেরবাজার লাগোয়া তাড়াশের বস্তুল গ্রামে। যে বট গাছের নিচে বসে দু’জন গল্প করত সেই বট গাছটি এখনো বিশাল জায়গাজুড়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চান্দেরবাজার বস্তুলে এখন স্কুল-কলেজ, ভূমি অফিস, হাটবাজার গড়ে উঠছে। তাড়াশ উপজেলার মধ্যে বস্তুলে খাসজমির পরিমাণ প্রায় ৭০০ বিঘা। একশ্রেণীর প্রভাবশালী খাসজমিগুলো দখল করে নিয়েছে। কেউ কেউ নিজের নামে ওইসব খাসজমির কাগজপত্র তৈরি করে নিয়েছে। অনেকেই এসব সম্পত্তির ওপর অট্টালিকা তৈরি করে বসবাস করছে।
বস্তুলের ৭০০ বিঘা খাসজমির মধ্যে কিছু আশ্রয়ণ কেন্দ্র তৈরি করলেও অধিকাংশ জমি প্রভাবশালীদের দখলে। সরকারিভাবে এসব খাসজমি লিজ দিলেও সেখান থেকে প্রতিবছর সরকারের ঘরে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে। ৫৬০টি বর দ্বারা বেহুলা ও লক্ষ্মীন্দরের বসে থাকার আসন ঘিরে রেখেছে। বট গাছের বরগুলো দেখতে অপরূপ সৌন্দর্যেঘেরা। দর্শনার্থীরা বট গাছের বরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে; কিন্তু বসার জায়গা না থাকায় আগত দর্শকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ইতোমধ্যে প্রভাবশালীরা কিছু বর কেটে নিয়ে গেছে।
জানা যায়, বিনসাড়া এক সময় জমিদারদের বড় শহর ছিল। এখানে ছিল বড় বড় অট্টালিকা। যার স্মৃতি এখনো মাটি খুঁড়লে পাওয়া যায়। এ গ্রামে মাটির নিচে আছে বহু ভূ-সম্পদ। সতী বেহুলার বাড়িতে আছে বেহুলার কূপ। ওই কূপের মধ্যে আছে আরো চারটি ছোট ছোট কূপ।
এ কূপের এক আশ্চর্য ঘটনা শোনা যায়, এককালে এ কূপের পানি অসুখ-বিসুখে যে যে নিয়তে খেতো তার সুস্থতা ফিরে পেত। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই কূপের ডেকোরেটর সুলভ আচরণ। ওই সময় কোনো অনুষ্ঠানের জন্য থালা বাসন, বাটি, জগ, পাতিলসহ যা প্রয়োজন হত কূপের কাছে গিয়ে বললে তা উঠে আসত।
ঘটনাক্রমে কোনো একদিন কোনো কুচক্রী লোক প্রয়োজন শেষে ওই সব বাসনপত্র ফেরত না দেওয়ায় সেই থেকে কূপ তার ডেকোরেটর সুলভ আচরণ বদলে ফেলে। আছে অনেক ভূ-সম্পদ-যা সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।