রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে আমাদের করণীয় – কাজী অলিদ ইসলাম

মোঃ সাইফুল ইসলাম, বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সকল শিক্ষার ভিত্তি ও সোপান। স্কুলে গমন উপযোগী সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা লাভ একটি সাংবিধানিক অধিকার। এ সত্য অনুধাবন করেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত সদ্য সাধীনতা প্রাপ্ত একটি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেই যে কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক তালিকা ভূক্ত করে ছিলেন তা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন। প্রাথমিক শিক্ষায় যে কালজয়ী সিদ্ধান্ত টি আজীবন মাইল ফলক হয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তা হচ্ছে ০১/০৭/১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ০১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীসহ ৩৬ হাজার ১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ করেন। যা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে আজীবন সমুজ্জল দ্বীপ শিখা হয়ে জ¦লবে। এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ০৯ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে শিক্ষকদের এক মহাসমাবেশে ০১ লক্ষ ০৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীসহ ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করনের ঘোষণা দেন , যা প্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসে বিরল। ইতো মধ্যে শিক্ষা বান্ধব গণতান্ত্রিক সরকার সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচী বাস্তবায়নে “মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস” এবং দারিদ্র বিমোচন কৌশল পত্রের আলোকে শত ভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি, নিয়মিত উপস্থিতি এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী চক্র অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ সমাপ্তির হার বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কর্ম সূচি গ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নীট ভর্তির হার ১০০ শতাংশে উন্নীত করন, ২০১৪ সালের মধ্যে “নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ”, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে প্রত্যাশিত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নিরক্ষর ও ক্ষুধামুক্ত তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর একটি উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশ বিশ্ব মুক্ত বাজার অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন সহম্রাব্দের শুরুতে বাংলাদেশে তথ্য ও প্রযুক্তির এক অভাবনীয় পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তির এ উন্নয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকার নিয়ামক হিসেবে অবদান রাখবে বলে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সব মানুষের দৃঢ় বিশ^াস। গত দশকের তুলনায় বাংলাদেশের বহু গ্রামে আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যম যেমনঃ টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। শহর অঞ্চল গুলোতে আধুনিক সুবিধা যেমনঃ বহুতল বিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা, দ্রুতযান, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ডিস এন্টিনা ব্যবহারের মাধ্যমে মুক্ত আকাশ সংস্কৃতিতে প্রবেশের সব সুযোগ মানুষের দোর গোড়ায় ইতোমধ্যে পৌছাতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের এ যুগে আমাদের শিশুদের ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নিজেদের কে প্রস্তুত করে তোলা ছাড়া অন্য কোন সহজ পথ খোলা নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দক্ষ জন গোষ্ঠির ব্যাপক চাহিদা বিদ্যমান। কর্ম সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতার কোন বিকল্প বাংলাদেশের শিশু শিক্ষার্থীদের সামনে খোলা নেই, সেজন্য তাদের আধুনিক শিক্ষার সব সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করে যোগ্য অবস্থানে নিজেদের কে নিয়ে যেতে হবে।

আমাদের শ্রদ্ধা ভাজন শিক্ষক মন্ডলীকে শিশুদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জন গোষ্ঠী রুপে আত্ম প্রকাশে কান্ডারীর ভূমিকা নিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অর্থবহ করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন দক্ষ ও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভাকে চিরজাগরুক করার দায়িত্ব আমাদের শিক্ষক মন্ডলীর যা অনস্বীকার্য।

দিন বদলের রুপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন নেত্রী শেখ হাসিনা সব শিশুকে বিদ্যালয় মূখী করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে ছেনতা গণ মানুষের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে হবে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার মূখ্য দায়িত্ব নির্ভর করছে সচেতন নাগরিকদের উপর। তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের অংশীদার হিসেবে দ্বায়িত্বশীল আচরনের মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে অবদানরা খতে পাবেন। প্রাথমিক শিক্ষায় সমাজ সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তা আজ অনস্বীকার্য। শিশু জরিপ, শিশু ভর্তি, উপস্থিতি এবং শিক্ষা সমাপনের হার বৃদ্ধিতে সমাজের সর্বস্তরের জন গণের অংশ গ্রহন একান্ত আবশ্যক। উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নৈতিক অধিকার ও কর্তব্যই হচ্ছে শিশুদের স্কুল মূখী করার কাজে আত্ম নিয়োগ করা। স্কুলের শিক্ষা মূলক কার্যক্রমে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও কাক্সিখত মতামত প্রদান এবং তা বাস্তবায়নে তাগিদ প্রদান অব্যাহত রাখা। স্কুল এলাকার জন গোষ্ঠীকে স্কুলের উন্নয়ন কাজে সফল ভাবে সম্পৃক্ত করে তাদের দৃষ্টি ভঙ্গিকে উদার ও ইতি বাচক পর্যায়ে উন্নীত করা। স্কুল এলাকার আপামর জন গোষ্ঠীকে স্কুল টি নিজের ভাববার যে বোধতা জাগ্রত করতে হবে এবং অর্জিত উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গর্ববোধ করার চেতনা জাগ্রত করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা একটি সামাজিক আন্দোলন। এ আন্দোলনে সফলতা অর্জন কোন বিশেষ ব্যক্তি, কোন একক গোষ্ঠীর এমন কি সরকারের একার পক্ষে ও সম্ভব নয়। উন্নয়নের চালিকা শক্তি হচ্ছে সমন্বিত উদ্যোগ। একটি সমগ্র উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুধু মাত্র সরকারের একার পক্ষে যেমন সফলতার শীর্ষে পৌছানো সম্ভব নয় তেমনি সরকারের সক্রিয়সহ যোগিতা ছাড়াও সম্ভব নয়। এটি একটি সুসমন্বিত চলমান প্রক্রিয়া।

মানব সম্পদ উন্নয়নের পূর্ব শর্তই হচ্ছে শিক্ষা আর প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সকল শিক্ষার ভিত্তি স্তর। ভিত্তি মজবুত না হলে যেমন কোন স্থাপনা স্থায়ীত্ব লাভ করে না ঠিক তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার গাঁথুনী মজবুত না হলে সে শিক্ষা মানব কল্যাণে কাজে আসে না। রবীঠাকুরের ভাষায় “বিদ্যা আহরণে আর শিক্ষা আচরণে”। আচরণিক পরিবর্তনের অপেক্ষা কৃত স্থায়ী রুপকেই শিক্ষা নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে যেমন চাই শিশু বান্ধব কারিকুলাম, শিশু বান্ধব পাঠ্য বই, শিশু বান্ধব স্কুল, শিশু বান্ধব শিখন -শেখানো উপকরণ, দরদী শিক্ষক যা ইতো মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন নন্দিত জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার গণ তান্ত্রিক সরকার সফল ভাবে যোগান দিয়ে সক্ষমতার বিচারে উত্তীর্ণ হয়ে জন মনে স্থায়ী আসন লাভ করেছে। প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নই পারে আমাদের কে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অবরোধ বাসিনী খ্যাত বেগম রোকেয়া, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, নড়াইলের শিশু স্বর্গের স্থপতি চিত্র শিল্পী এস.এম. সুলতান এবং সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন নন্দিত জন নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এর মতো মানব কল্যাণকামী কৃর্তি মান মানব সম্পদ যাঁদের আদর্শ যুগে যুগে আলোক বর্তিকা রুপে জ¦লজ¦ল করে আলোক রশ্মি জড়াবে এমন ভাবনা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে একজন সমাজ সেবক, একজন জন প্রতিনিধি সর্বোপরি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিশু বান্ধব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে, ক্ষেত্র মতে সকলের সহযোগিতা ও দৃঢ় প্রত্যয় একান্তকাম্য।

 

 

কাজী অলিদ ইসলাম, বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান, টাঙ্গাইল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর