আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনে দেহে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। পরিবেশের তাপমাত্রা কম, আর্দ্রতা বেশি, ধুলোবালি, ধোঁয়া, সুগন্ধি, ফুলের রেণু, ঠান্ডাসহ নানা কারণে এ সমস্যাগুলো দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ত্বক ও শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে।এছাড়াও হাত-পা ও ঠোঁট ও পায়ের পাতায় ফাটল ধরা,পুরো শরীর খসখসে হয়ে যাওয়ার মত বিব্রতকর অবস্থা হয়। শরীর সতেজ ও উপরোক্ত সমস্যা এড়াতে বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন-
হাতঃ
দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে হাতে কম লিপিড থাকে। এই কারণে শীতকালে হাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঠোঁট:
ঠোঁট খুবই নমনীয় হয় তাই শীতে সঠিক যত্ন না নিলে ঠোঁট রুক্ষ ও শুষ্ক হয় এবং সবসময় ঠোঁটকে রাখতে হবে হাইড্রেটেড। ঠোঁটের শুষ্কতা থেকে এড়িয়ে চলতে
ঘরোয়া বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
কনুই:
কনুই সব সময় সচল থাকে এবং ভাঁজ করতে হয়। তাই এই অংশ শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। নিয়মিত রাত্রে শোয়ার আগে কনুইতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজ লাগাবেন এবং পাশাপাশি তৈল ব্যবহার করতে পারেন।
পায়ের পাতা:
শরীরের সব থেকে উপেক্ষিত অংশ পায়ের পাতা।পায়ের পাতা দেখা যায় না বলে এর যত্নও কম হয়ে থাকে কিন্তু পায়ের পাতার যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ যত্ন না নিলে শীতে পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফেটে যায় এবং সূত্রপাত হয় অনেক রোগের।সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন স্ক্রাবার ব্যবহার করতে হবে এবং ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
হাঁটু:
হাঁটুর চামড়া অনেক শুষ্ক ও খুব মোটা হয়। কনুইয়ের মতো হাঁটুর ভাঁজ করতে সবসময় । এজন্যে হাঁটুকেও হাইড্রেটেড রাখা জরুরি।শীতে ময়েশ্চারাইজার লাগালে এই এই সমস্যা আর দেখা দিবে না।
দাড়ি :
দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়ায়। কিন্তু শীতে দাড়িতে শুষ্কতা দেখা দেয় ফলে দাড়ির লাব্যণ্য নষ্ট হয় এজন্য বিশেষ যত্ন নিতে হবে দাড়িতে।
নখে :
নখের গোঁড়ায় জমে থাকা ময়লা থেকে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে পায়ে এবং দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং শীতের সময় নকের যত্ন না নিলে নখেও শুষ্কতা দেখা দিতে পারে এজন্য ধারাবাহিক নখের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
শীতে শরীর ভাল রাখতে ৫ টি খাবার রুটিনে রাখা যেতে পারে-
খাঁটি ঘিঃ
অতিরিক্ত চর্বির ভয়ে ঘি খেতে চান না অনেকেই তবে সব খাবার পরিমাণমত খেলে খুব একটা সমস্যা হয় না। শীতে ঘি খেলে শরীর ভালো থাকে।
গুড়ঃ
গুড়ে আছে আয়রন, জিঙ্কসহ নানা মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে শরীর গরম থাকে।
তিলঃ
শীতকালে তিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তিল শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পানি পান :
শীতে আর গরম সব সময়ই ত্বকের জন্য পর্যাপ্ত পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। অনেকে শীতে কম পানি পান করে থাকেন ফলে শরীর ক্রমাগত দুর্বল ও ত্বক নষ্টসহ নানা ধরনের রোগে বাসা বাধে। এজন্য বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
শাকসবজিঃ
শীতে অধিক পরিমাণ শাকসবজি নিয়মিত খাবারের রুটিনে রাখুন ফলে শরীর সতেজ থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বর্জনীয়ঃ
শীতে বিষাক্ত, অ্যালার্জিবর্ধক উপাদান বর্জন করা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে অনেকেরই নানারকম ত্বকের সমস্যা দেখা যায়। যেমন, শ্বাসকষ্ট বাড়ে, অ্যালার্জি বৃদ্ধি হয় ইত্যাদি। তাই এই সময় কেমিক্যাল মিশ্রিত ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা জরুরি।
যথা সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ও শেষ কথাঃ
শরীর ঠিক রাখতে গরম ও শীতে আলাদা আলাদা কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় ফলে উভয়ই সময় শরীর ভাল থাকবে। শীতকালে একটু বেশী শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে কারন এই সময় শরীরে নানা রকম সমস্যা হতে পারে এবং জীবন হুমকীর মুখোমুখি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত জঠিল সমস্যা হতে পারে এজন্য শরীরে একটু খারাপ লাগা ভাব আসলে দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
লেখকঃ
সাংবাদিক ডা.এম.এ.মান্নান
ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও গবেষক
মুকতাদির হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র
নাগরপুর,টাঙ্গাইল।