শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:১২ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের হার

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ যেন থামছেই না। উল্টো আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের হারও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তীব্র জটিলতা দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে মৃতের হারও তুলনামূলক বেশি। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেই কোনো গবেষণা বা জরিপ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছর দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩৬ হাজার ১৯৯ জন। একইসঙ্গে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৫২ জন (২ নভেম্বর পর্যন্ত)।

বছরের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক হলেও গত একমাসে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে সারা দেশেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই হাজার ৩০৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি এক হাজার ২৭৫ জন।

বৃষ্টির পর প্রখর রোদে এডিস মশা বাড়ে বহুগুণ ব্লাড ট্রান্স-ফিউশন বিশেষজ্ঞ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, আমাদের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ডেঙ্গুর সাইকেলে সমস্যা হয়। অর্থাৎ ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে যেই সময়টা লাগে সেটা তাপমাত্রার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

তিনি বলেন, দেখা গেল কোনো জায়গায় বৃষ্টির কারণে পানি জমেছে এবং সেখান কিছু মশা ডিম পেড়েছে। এক্ষেত্রে বিষয়টা যদি এরকম হয় যে খুব বেশি বৃষ্টি হলো আবার সঙ্গে সঙ্গে রোদ হলো, এতে দ্রুত সময়ে ডিম থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মশা পরিণত হয়।

এই চিকিৎসকের মতে, দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই সে পূর্ণাঙ্গ জীবন পেয়ে যায়। কিন্তু আবার যদি কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হয় এবং রোদ না থাকে, তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে আসবে। কারণ ওই সময়ে ডিমটা কোনো এক জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকতে পারবে না। আর থাকলেও মশাটি খুব দ্রুত সময়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পারবে না। তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপটা চলছে, সেটা কিন্তু স্লো-ডাউন হয়ে যাবে। তাহলে রোগটি আমরা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবো।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান বলেন, এখন আমরা দেখছি সিটি করপোরেশনের অভিযান সব মানুষের বাসাবাড়ি কেন্দ্রিক। হঠাৎ তারা ডেঙ্গু মশা বাড়ার পেছনে সাধারণ মানুষকে দায়ী করতে চায়। কিন্তু পাড়া-মহল্লায়, এলাকায়-এলাকায়, রাস্তাঘাটে যে পানি জমে আছে, সেটার দায় কী সাধারণ মানুষের?

হাসপাতাল ভর্তি বেশি, মৃত্যুর হারও অনেক বেশি ডা. আশরাফুল হক বলেন, ডেঙ্গুতে এখন হাসপাতালে ভর্তি অনেক বেশি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় বার্ডেন। এখন নতুন করে যদি আবার একদিনের বৃষ্টি এবং পরে প্রখর রোদ ওঠে, তাহলে ডেঙ্গুর বিস্তার আরও অনেক বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে এবার মৃত্যুহার অনেক বেশি। কারণ আমাদের তো সুনির্দিষ্ট কোনো ডাটাবেজ নেই। ২০১৯ সালে দেশে যখন সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়, তখন কারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে কত সংখ্যক মানুষ একই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা পূর্বেও আক্রান্ত হয়েছিল কি না, এমন কোনো ডাটাবেজ আমাদের নেই।

দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের জটিলতা অনেক বেশি বিশিষ্ট এই ব্লাড ট্রান্স-ফিউশন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এখন যাদের ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে, তাদের অনেকেরই প্রথম দিন থেকেই জ্বরের মাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি হয়ে যাচ্ছে। যাদেরই এই তাপমাত্রায় জ্বর আসছে, হিস্ট্রি শুনে আমরা জানতে পারছি, সে আগেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। মেডিকেলের ভাষায় যেটাকে আমরা বলি প্রিভিয়াসলি এক্সপোজড। আর যারা প্রথমবার আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর তাপমাত্রা বাড়ছে। আর যারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছে তাদের তাপমাত্রা প্রথম দিন থেকেই অনেক বেশি। এমনকি তারা এত পরিমাণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে দ্রুততম সময়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগছে।

এডিস শহুরে মশা হলেও এবার গ্রামে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান বলেন, এডিস মশাটিকে বলা হয় ‘শহুরে মশা’। কিন্তু গ্রামেও এবার ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের মশার আবাসস্থলের সঙ্গে শহরের মশার আবাসস্থলের অনেক পার্থক্য। শহরে আমরা দেখি যে খুবই অল্প পানিতে মশাগুলো ডিম পাড়ে এবং জন্মাতে পারে। যেমন- ডাবের খোসা, ফুলের টব। এগুলোতে খুব অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও এর মধ্যেই মশা জন্মাতে পারে। আর গ্রামের মশাগুলো জন্মায় আবদ্ধ পুকুর, ডোবা, নালায়।

আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দায়টা আসলে কার জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে চিকিৎসার দায়দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু মশা কেন হলো বা ডেঙ্গু কেন বাড়ল সেজন্য জবাবদিহি করবে সিটি করপোরেশন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক বিষয়। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী যাই হোক না কেন শঙ্কার কোনো কারণ নেই, চিকিৎসা চলবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় আলাদা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করেছি। সেখানে চিকিৎসক-নার্সসহ পর্যাপ্ত জনবলের ব্যবস্থা করেছি। এর বাইরেও পুরাতন পাঁচটা হাসপাতালকে আমাদের পক্ষ থেকে একটা স্পেশাল অ্যাটেনশন দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালকের ধারণা, নভেম্বর মাসের মধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কমে আসবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com