রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ফলাতে হবে অধিক খাদ্য

এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৫০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির এদেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি বিরাট অংশ আসে কৃষিখাত থেকে। তাছাড়া কৃষি উৎপাদনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের খাদ্য উৎপাদন ও শিল্পোন্নয়ন।

গত ২৭ জুলাই বিবিএস- এর প্রকাশিত তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম শুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ। এরপর ১৯৮১ সালে জনশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জনে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে দেশে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৩ লাখে। ২০০১ সালে চতুর্থ আদমশুমারি ও গৃহগণনা করা হয়, এ সময় জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ২৪ লাখ। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জনশুমারিতে দেখা যায়, দেশের জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ। ষষ্ঠ ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।

১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তন ভূখণ্ডের দেশটির যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না খাদ্য উৎপাদন। ফলে কৃষিপ্রধান হলেও বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য খাদ্য সংস্থানে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে খাদ্য শস্য আমদানি করতে হয়। অথচ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে যদি খাদ্য আমদানি কমানো যেত তাহলে ওই বেঁচে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে অন্যান্য পণ্য আমদানি করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগতো, ঘটতো শিল্পোন্নয়ন।

যাই হোক, অন্যান্য দিকে উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় জীবনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন অপরিহার্য। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অন্যান্য দেশের খাদ্য উৎপাদনকারী দেশের পরমুখাপেক্ষী না হয়ে সরকার খাদ্য উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।
কৃষির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সার, বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস করেছে।
কৃষির যান্ত্রিকীকরণে কৃষকদের ভর্তুকি, ঋণ সুবিধা, উপকরণ সহযোগিতা, উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন মৌসুমে বিনামূল্যে সার, বীজ বিতরণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে উদ্ভাবিত হয়েছে বন্যা ও খরা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান। কৃষিবিদদের নিরলস পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ এক অনন্য উদাহরণ।

বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীতে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, আম এবং আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পাট এবং কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, অবস্থানে রয়েছে। এখন প্রায় ৭০ প্রকার সবজি আর ফল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। পাটসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য রপ্তানি করে প্রাপ্ত আয় ছাড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে। দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক মন্দা। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। করোনা মহামারির ধকল, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈরী জলবায়ু এবং বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব খাদ্য দিবস- ২০২২ -এর এবারের প্রতিপাদ্য, ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন।’

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্ব আরোপ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বলেই দিয়েছেন, ‘দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন আহবান যথার্থ। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তাঁর ( প্রধানমন্ত্রীর) এ আহবানে সাড়া দিয়ে খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। অধিক খাদ্য ফলাতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। আর এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ১৬ কোটি ৫১ লাখ বিশাল এ জনগোষ্ঠীর নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ খাদ্য এবং ক্ষুধামুক্ত হবে মানুষ। অন্যদিকে তেমনি কমবে খাদ্য আমদানির প্রবণতা, বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা। দেশে ঘটবে উন্নয়ন। সুখী ও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে দেশ। ঠিক যেমনটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন। আর সেটা আমাদেরও কাম্য।

 

এম এ মাসুদ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর