রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

কেন হিজামা গ্রহন করবো, হিজামার পদ্ধতি ও কি কি রোগে হিজামা করা উত্তম-ডা.এম.এ.মান্নান

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৫:১১ অপরাহ্ণ

হিজামা বা কাপিং হচ্ছে একটা চিকিৎসা পদ্ধতি। এবং অবশ্যই নববী (সুন্নাহ) চিকিৎসা। এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারিরীক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক  সুস্থতা রয়েছে। হিজামার ব্যবহার রাসুল (সাঃ) ও তারঁ সাহাবাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত ছিল। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুল (সাঃ) হিজামা লাগাতেন এবং কারো পারিশ্রমিক কম দিতেন না। (বুখারী, হাদিস নংঃ ২২৮০) হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত (Toxin) বের করা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ (blood circulation) দ্রুততর হয়। পেশী, চামড়া, ত্বক  ও শরীরের ভিতরের organ সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরে সতেজতা বৃদ্ধি পায় ও কর্ম চাঞ্চল্য ফিরে আসে।হিজামার ব্যাখ্যা অনেক রকমভাবে অনেকের কাছেই পাওয়া যায়। কারো কাছে এটা খারাপ রক্ত, কারো কাছে বিষ বা দূষিত রক্ত, অনেকের অনেক মত। কিন্তু হিজামার কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও আছে, রোগ ভালো হয় কিভাবে তা নিয়ে।নেগেটিভ সাকশানের মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে রক্ত চুষে আনা হয়।অনেকে এটাকে Wet Cupping therapy বলে থাকেন। অতি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়।
♥হিজামার পদ্ধতি:
শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশে প্লাস্টিক বা কাচের কাপ বসিয়ে সার্জিকাল ব্লেডের মাধ্যমে সূক্ষ সূক্ষ স্ক্র‍্যাচ করে মেশিনের সাহায্যে রক্ত চুষে নেয়া বা বের করে ফেলা হয়।হিজামা করতে তেমন ব্যাথা লাগেনা, একটু  সুড়সুড়ি মত লাগে বা অস্বস্তি বলা যায়। ১ থেকে ১.৫ ঘন্টা সময় লাগে। হিজামার পর হিজামার স্থানে যে কালার হয় ওটা যেতে ৩ থেকে ৭ ঘন্টা সময় লাগে আর দাগ যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৭ দিন ইন শা আল্লাহ।সাধারণত যে কোন রোগীকে কমপক্ষে ২ টা সেশন নিতে হয়, তবে রোগ ও তার উপশম অনুযায়ী সেশন সংখ্যা ভিন্ন হবে।মাথায় হিজামা করতে চুল কাটা ছাড়াও হিজামা করা যাবে তবে চুল সামান্য কাটলে বা ছোট থাকলে ভালো হয়।
♥হিজামা কেন করবেনঃ
হিজামা এক ধরনের নববী ও সুন্নাহ চিকিৎসা যা শরীরের জীবানু বের করে ফেলে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রক্ত পরিস্কার করে। এর মাধ্যমে সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে, নিয়মিত হিজামা করালে অনেক রোগ ভালো হয়। হিজামা একই সাথে সংক্রামক ও অসংক্রামক  উভয় ধরনের অসংখ্য রোগের চিকিৎসা।  মেরাজের রাতে ফেরেশতাগণ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে  হিজামা করতে ও তাঁর উম্মতদের হিজামা করাতে বলেছেন। রাসুল (সাঃ) যখন যাদু দ্বারা আক্রান্ত হলেন তখন তিনি মাথায় হিজামা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম  ঔষধ, যদি সঠিক ভাবে করা হয়। (যাদুল মা’আদ ৪/১২৫-১২৬), এমনকি, আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর পায়ে যে ব্যাথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম বাধা অবস্থায় হিজামা লাগিয়েছেন। (নাসাঈ হা/২৮৫২)
হিজামাতে অন্যান্য ঔষধের মতো কোন সাইড ইফেক্ট নাই। (আলহামদুলিল্লাহ)। ফলস্বরূপ, রোগ থেকে ইনশাআল্লাহ মুক্তি পাবেন এবং রাসূল সাঃ এর একটি সুন্নাতের উপরও আমল করা হলো।অনেকে আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসা বলে এক বা দুই সেশন নিয়েই হতাশ হয়ে পড়েন, কিন্তু রোগের ধরন বা প্রকারভেদ ও স্থায়ীত্ব এর জন্য একাধিক সেশন নিতে হতে পারে।বর্তমানে অনেক রোগের প্রকোপ বাড়ছে কিন্তু কোন চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় হচ্ছে না বা কার্যকরী ফল হচ্ছে না। এর মধ্যে আছেঃ Neck pain, frozen shoulder, immune disorder, hypertension, low back pain, asthma etc) এসব রোগের একক চিকিৎসা হিসেবে হিজামা ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে রোগের মেয়াদ অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য সবরের সাথে সময় দিতে হবে। যেকোন ধরনের ব্যাথার জন্য হিজামা অকল্পনীয় ভাবে ভাল ফল দেয়। (আলহামদুলিল্লাহ)
♥হিজামা (CUPPING) এর মাধ্যমে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকেঃ
#রক্ত পরিস্কার ও পরিশুদ্ধ হবে
#রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে
# স্মরনশক্তি বাড়বে
# অবসন্নতা,  অবসাদ দূর হবে
# সহজেই রোগাক্রান্ত হবেন না
# চুল পড়া কমে যাবে
# মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা
# রক্তদূষণ
# উচ্চরক্তচাপ
# ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia)
# স্মৃতিভ্রষ্টতা (perkinson’s disease)
# অস্থি সন্ধির ব্যাথা/ গেটে বাত/জয়েন্টের ব্যাথা
# ব্যাক পেইন
# হাঁটু ব্যাথা/সায়াটিক ব্যাথা
# দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথা ব্যাথা
# ঘাড়ে ব্যাথা
# কোমর ব্যাথা
# পায়ে ব্যাথা/পায়ের তালু ব্যাথা
# মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain)
# দীর্ঘমেয়াদী পেট ব্যথা
# হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথা
# থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
# সাইনোসাইটিস
# হাঁপানি (asthma)
# হৃদরোগ (Cardiac Disease)
# রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমন
# টনসিল
# দাঁত/মুখের/জিহ্বার সংক্রমন
# গ্যাস্ট্রিক পেইন
# মুটিয়ে যাওয়া (obesity)
# দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseses)
# ফোড়া পাচড়া
# চুল পড়া
# মানসিক সমস্যা
# পারকিনসন্স ডিজিজ
# স্পোর্টস ইঞ্জুরি
# কানের সমস্যা
# ক্যান্সারের ব্যাথা নিয়ন্ত্রণ
# হরমোনাল সমস্যা
# ক্রনিক কফ
# Erectile Dysfunction (ED)
# ব্রণ
# অনিয়মিত মাসিক, মেয়েদের অন্যান্য মেয়েলী সমস্যা
# এডিকশন বা ডিপেন্ডেন্সী ( স্লিপিং পিল, ড্রাগস, জর্দা, সিগারেট, এলকোহল, অন্যান্য নেশা দ্রব্য
# হাড় ক্ষয় (Osteoporosis)
# post menoposal hot flush
# মাথা ঘোড়া (vertigo)
# IBS সহ আরও অনেক জঠিক ও কঠিন রোগ আরোগ্য লাভ করে।
♥হিজামা করার পর করণীয়ঃ
হিজামা করার ১ ঘন্টা পর গোসল করা উত্তম, অন্যথায় শরীর খারাপ হতে পারে। ২৪ ঘন্ট পর্যন্ত ব্যায়াম বা স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দূরের যাত্রা করা যাবে না। ৪৮ ঘন্টা কোন গরম সেক ইত্যাদি দেয়া যাবে না।
♥হিজামা সংক্রান্ত হাদীসঃ
★ হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর: ৭৪৭০
★ হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবী মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে যেন তোমাদের কারো মৃত্যু না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর: ৩৪৮৬
★ হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর: ২০৫৩
★ হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৮২
★ হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় শেফা রয়েছে।” সহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর: ২২০৫
★ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম। এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর: ৩৪৮৭
★ হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হিজামাকারী কতইনা উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদন্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।”সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নম্বর: ২০৫৩।
 আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই চিকিৎসা গ্রহন করার এবং ইখলাসের সাথে একটি সুন্নাতকে জীবিত করার তাউফিক দান করুন। আমীন।
লেখক পরিচিতিঃ
সাংবাদিক ডা.এম.এ.মান্নান
ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও
প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা
মুকতাদির হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র.
নাগরপুর, টাংগাইল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর