অক্টোবরের আগে উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ‘পাওয়ার লোডিং’ শুরু হবে। তবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হতে পারে- এমন আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে উচ্চপর্যায় থেকে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছেও কোনো নির্দেশনা নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন প্রকল্পের কাজের যে অগ্রগতি, তাতে সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধনের সম্ভাবনা কম। অক্টোবরে এই প্রকল্পের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট শুরু হলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। সংকট উত্তরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয় সরকার। দেশব্যাপী ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং শুরুর আগে এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহি জানিয়েছিলেন, সাময়িক সময়ের জন্য লোডশেডিং থাকবে। সেপ্টেম্বরে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে তখন আর সংকট থাকবে না। সেপ্টেম্বরেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এতে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে বলে জানিয়েছিলেন। তবে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থায় সেপ্টেম্বরে পূর্ণ উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ একরাম উল্লাহ জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ খুবই দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। করোনার মধ্যেও কাজ অব্যাহত ছিল। সার্বিক কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে লোডিং শুরু হবে। এজন্য যেসব প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন তা হয়েছে। প্রকৌশলীরাও কাজ করছে। লোডিং শুরু হলে বিভিন্ন পর্যায়ের টেস্ট চলবে। সব টেস্ট শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদন শুরু করবে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যৌথভাবে উদ্বোধন প্রসঙ্গে সাইদ একরাম উল্লাহ বলেন, এই বিষয়টি আমরা জানি না। গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। কোনো দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত হলে আগেই আমাদের জানানো হতো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনের দায়িত্ব আমাদের ওপরই পড়বে।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস জানায়, সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩ দিনের ভারত সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একত্রে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা এই বিষয়ে কিছুই জানে
না। এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসেও এক দফায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে আসার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা ‘পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেছেন, সেপ্টেম্বরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের বিষয়ে আমরা এখনো কোনো নোটিস পাইনি। তাছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত উদ্বোধন সম্ভব নয়। যে কোনো প্রকল্পের সব কাজ শেষ হওয়ার পরই উদ্বোধনের কথা আসে। এখন পর্যন্ত যে কাজ বাকি আছে তাতে অক্টোবরের আগে কাজ শেষ হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ এখনো এসব বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি। প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করছে। প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৮০ ভাগের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলেই মনে হয়। তবে পাওয়ার লোডিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে পাওয়ার লোডিংয়ের প্রাথমিক টার্গেট রয়েছে। পুরোদমে কাজ চললে আক্টোবর মাসের শেষ দিকে উদ্বোধন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) যৌথ কোম্পানি গঠন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি নাম বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। তবে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবেই এটি পরিচিত। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড (বিএইচইএল)’ দুই ইউনিট বিশিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। প্রতি ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট করে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যেই রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসা শুরু হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ‘এমভি আকিজ হেরিটেজ’ নামের জাহাজটি ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া চ্যানেলের ১১ নম্বর অ্যাংকারেজ বয়ায় নোঙর করে। পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পের জন্য কয়লা এনে মজুত করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া থেকেও কয়লা আনার পরিকল্পনা রয়েছে।