সারা দেশে এখন চলছে বর্ষার ভরা মৌসুম। খাল, বিল, নদী-নালা পানিতে ভরপুর। অনেক স্থানে মেঠো পথও পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে চলাচলের একমাত্র বাহন ডিঙ্গি নৌকা। সেই চাহিদা মেটাতে ডিঙ্গি নৌকা তৈরী আর বিক্রি করতে ব্যস্ত পাবনার ভাঙ্গুড়ার কাঠ মিস্ত্রিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলার চাটমোহর, মির্জাপুরহাট, কাছিকাটা, চাচকৈড়, বেড়াসহ বিভিন্ন স্থানের নৌকা ব্যবসায়ীরা পাইকারী দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে এ সব নৌকা। ভাঙ্গুড়া উপজেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি কারখানায় চলছে নৌকা তৈরীর কাজ। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেন কারিগরদের দম ফেলার সময় নেই। আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র এই তিন মাস তারা এই এলাকাতে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে এবার আগাম বন্যার কারণে এই অঞ্চলে নৌকার চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গেছে। একজন নৌকা তৈরির কারিগর এই এক বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫০টি নৌকা তৈরির কাজ করে থাকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় ২৫ টি নৌকা তৈরির কারখানা রয়েছে। চলনবিল পাড়ের বাসিন্দারা বর্ষা আসার শুরুতেই তাদের নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। আর সে দিকের প্রতি নজর রেখেই ওই সব এলাকার মানুষেদের জন্য নৌকা তৈরির কারখানাতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। বছরের অন্যান্য সময় কাঠের মিস্ত্রী পাড়ায় তেমন কোনো কাজ না থাকলেও নৌকা তৈরির কাজে আষাঢ় মাস থেকে শুরু করে ভাদ্রমাস পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে ১০ হাত থেকে শুরু করে ১৪ হাত পর্যন্ত লম্বা বোট ধরণের নৌকার চাহিদা বেশি।
এই ধরণের এক একটি নৌকা তৈরিতে তাদের খরচ হয় ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর নৌকা তৈরিতে সিসা ও আমসহ বিভিন্ন কাঠের ব্যবহার করে থাকেন তারা। একটি নৌকা তৈরি করে বিক্রি করতে পারলে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত একজন শ্রেমিকের মুজরীসহ লাভ থাকে। অনেক সময় কারিগররা ক্রেতাদের নিকট থেকে অগ্রীম নৌকার অর্ডার পেয়ে নৌকা তৈরি করে। আবার কখনো কখনো তাদের তৈরিকৃত নৌকা এর্শাদনগর, মির্জাপুর হাটে নিয়ে বিক্রয় করে থাকেন। ধানুয়াঘাটা, বড়বিলা এলাকার হাট গ্রাম, হাদল, ডিসকার বিল, বোয়ালিয়া, টেংঙ্গরজানি, দিলপাশার, কৈডাঙ্গা ও খানমরিচ ইউনিয়ন এলাকার মানুষ নৌকার ক্রেতা বলে জানা গেছে। উত্তর মেন্দা কালিবাড়ি এলাকায় দ্বিজোপদ সূত্রধধর, নবকৃষ্ণ সূত্রধর, চৈতন্য সূত্রধর ও জগাতলা এলাকার কুপি সূত্রধর, পলান সূত্রধর, ব্রজেশ্বর সূত্রধর, ভবেশ সূত্রধর বিনয় সূত্রধর ও মোনাই সূত্রধর, অষ্টমনিষার মো.নূর-ইসলাম মিস্তিসহ অনেকে এই নৌকা তৈরির কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নৌকার দাম একটু বেশি। ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা জানান, কাঠ মিস্ত্রিদের মজুরী আর কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবারে নৌকার দাম একটু বেড়েছে। কাঠ ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা বলেন, কয়েক বছর ধরে নৌকার ব্যবসা ভালো না হলেও এবারের বর্ষায় বিক্রি ভালো হচ্ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে নৌকার কদরও বাড়ছে।
#CBALO / আপন ইসলাম