মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

রোমান্টিক প্রেমের গল্প মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (১৪তম পর্ব) – মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০, ১১:৪৯ অপরাহ্ণ

রাজার আকস্মিক আদেশ শুনে জল্লাদ আতংকিত হয়ে শুল থেকে নামাতে পরেশের শরীরে সজোরে ঝাকুনি লাগে। এতে করে পরেশ মনে করে তার মৃত্যু মনে হয় হয়েই গেল বলে শেষ বারের মত ঠাকুরের নাম জপতে থাকে। জল্লাদের পাজা হতে নেমে দেখে সে শুলের উপর নেই এবং সামনে চেয়ে দেখে মায়াবতী আর দয়াল কুমার দাড়িয়ে আছে। তখন তার মনে হয় ওদের কারনে আজ সে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আবার পুনজীবন ফিরে পেল। রাজা দয়াল কে দেখে দ্রুত তাকে জরিয়ে ধরতে উদ্যত হলে, দয়াল তার থেকে ঘুরে দাড়িয়ে বলে, না না তুমি আমার বাবা নও। তুমি একজন নিরপরাধ মানুষকে অন্যায় ভাবে মৃত্যুদন্ড দিচ্ছো। তুমি পাষন্ড রাজা। তুুমি এভাবে নিরীহ প্রজাদের উপর অত্যাচার কর, তাদের উপর অন্যায় ভাবে করের বোঝা চাপিয়ে দাও। তোমার অত্যাচারে অনেক প্রজা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করিতেছে। তখন রাজা বলে, বাবা আমি যা করছি সব তোর জন্য। তুই তো এই রাজ্যের ভবিষ্যত রাজা। আমি তো শুনেছিলাম, পরেশ তোকে গুম করার জন্য কোন এক আত্নীয় দ্বারা তোকে অপহরণ করিয়েছে। সেজন্য তাকে রাজ্যের প্রচলিত আইনে তার বিচার কার্য্য শেষে রায় কার্য্যকর করা হচ্ছিল।

 

তুই যখন বাবা ফিরে এসেছিস, এখন আমার আর পরেশ এর উপর কোন রাগ রইল না। দয়াল বলে তোমার এসব আইন সংশোধন করে প্রজাদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করিতে হবে। রাজা বলেন তুই আগে রাজা হয়, তারপরে তুই তোর মত রাজ্য চালাবি। দয়াল বলে তোমার এসব অন্যায় কার্যক্রম বন্ধ না হলে, আমি আবার চলে যাবো। চাই না তোমার রাজ্যের রাজা হওয়া। আমি সাদাসিদে ভাবে থাকতে চাই। তখন রাজা বলেন, দেখ বাবা তোর পুর্ব পুরুষ হতে এ রাজ্য আমরা শাসন করিতেছি। তোকে ও তাই করিতে হবে। আমি তোর সামনে কথা দিচ্ছি, আমি আর প্রজাদের বিরুদ্ধে কোন আইন প্রণয়ন বা প্রয়োগ করিব না। এখন থেকে তুই হবি আমার আইন উপদেষ্টা। তোর আর মায়াবতীর পরামর্শে আমি এ রাজ্য পরিচালনা করিবো। দয়াল বলে, না আমার উপদেষ্টা হওয়ার কোন সাদ নেই। এ রাজ্যে অনেক জ্ঞানী গুনী লোক রয়েছে, তাদের কে রাজ্যের আইনসভায় নিয়োগ দিন এবং যারা এতোদিন তোমার পাশে থেকে তোষামোদি করে প্রজাদের ক্ষতি করেছেন। তাদেরকে দ্রুত আইন সভা হতে বিতাড়িত করুন, তাহলে আমি তোমার পাশে থাকিব। তখন দয়ালের প্রস্তাবে রাজা মহাশয় খুশি হয়ে মেনে নেন। দয়াল এসেছে একথা শুনে রানীমা দ্রুত রাজদরবারে চলে আসেন। এসে তার একমাত্র আদরের সন্তানকে জড়িয়ে ধরে এগালে ওগালে ও কপালে চুমু খেতে থাকে আর বলেন, এতোদিন কোথায় ছিলে বাবা , কতদিন তোকে দেখিনা। তখন রাজদরবারে সবার সম্মুখে দয়াল তার সাপে কাটা এবং ভেলায় ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনা বলে এবং কিভাকে মায়াবতী নিজের জীবন বাজি রেখে তাকে বাঁচিয়ে তোলে এসব ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন। দয়ালের জীবনে এমন দু:সাহসিক দুর্ঘটনা শুনে রাজা এবং রানী কাদতে থাকেন শেষে সবাই মায়াবতীর বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

 

সবাই বলাবলি করেন, দয়াল তার একজন সঠিক সঙ্গিনী খুজে পেয়েছেন। রানীমা মায়াবতীকে জরিয়ে ধরে তার দুগালে চুমু খেয়ে বলে, এই হতভাগী তুই দয়ালকে এত ভালবাসিস। ওকে বাঁচানোর জন্য যে নদীতে ঝাপদিয়েছিলি, তুই যদি মরে যাইতিছ তাহলে তোর মা সন্তান হারা হতো। তখন মায়াবতী বলে, যাকে ঠাকুরের সামনে প্রতিজ্ঞা করে বিয়ে করে পতি হিসেবে হ্নদয়ে স্থান দিয়েছি। তার জন্য মৃত্যু হলে তো পর জনমেও তাকে পাবো এই বিশ্বাস আমার ছিল। আমার ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস ছিল যে, আমাকে রেখে ও একা ওপারে যেতে পারে না। তাই আমি ওকে যেকোন ভাবে বাঁচানোর জন্য ওর পাশে থেকেছি। রাত্রী হয়ে যাচ্ছিল ভেবে রাজা তখন রাজ্যেসভার মুলতবী ঘোষনা করে পরেশ ও তার স্ত্রী সহ সবাইকে নিয়ে রাজপরিবারের অন্ধরমহলে নিয়ে যান। এই প্রথম পরেশের পরিবার কোন এক রাজার পরিবারে প্রবেশ করিল। ঘরের ভিতর প্রবেশ করার সময় পরেশ তার স্যান্ডেল হাতে করে নিয়ে যাওয়ার সময়, রাজা বলে এ দাদা কি করছেন? স্যান্ডেল পরেই যান কোন সমস্যা নেই। রাজা তাকে দাদা বলছে একথা শুনে তার অন্তরে কেমন জানি আনন্দ অনুভুতি কাজ করছে। তাকে ভীষন খুশি খুশি লাগছে। তার পুর্বের সকল অপমান যেন নিমিষে ভুলে গেছে। ভিতরে রাত্রের খাবার খাওয়ার জন্য সকলকে ডাইনিং টেবিলে খাবার দেয়া হয়। রাজা ও পরেশ সহ সবাই একসাথে বসে রাতের খাবার খায়। শেষে পরেশ বলে , রাজা মহাশয় এখন আমাকে বাড়ীতে যেতে হবে। বাড়ীতে বৃদ্ধ মা না জানি কত টেনশন করিতেছে। রাজা বলে এখন আর আমাকে রাজা বলিবেননা। আমাকে দাদা বললে খুশি হবো। পরেশ বলে হাজার হলেও আপনি আমাদের রাজা মহাশয়।

 

আপনাকে রাজা না বলিলে অপমান করা হবে। রাজা বলে না দাদা এখন তো আপনি আমার আত্নীয় হয়েছেন। পরেশ ও তার স্ত্রী মায়াবতীকে রাজপরিবারে রেখে তারা দুজন খেয়ে দেয়ে ্এবং রানীমার অনুরোধে কিছু খাবার নিয়ে বাড়ী যান। বাড়ীতে গেলে, খাবার ও হাসি খুশি দেখে তার বৃদ্ধ মা চিন্তিত হয়ে বলে, কিরে তোরা কি পাগল হয়ে গেছিস। শুনলাম রাজা তোদের অনেক অত্যাচার করেছে। তারপরও তোদের হাসিখুশি ভাব দেখছি। ব্যাপার কি বলতো বাবা ও বউমা। তখন পরেশ বলে মা রাজা আমাদের কে আত্নীয় হিসেবে রাজা মেনে নিয়েছে। কত আদর যত্ন করেছে। মায়াবতী তো ওখানেই রয়েছে। এসব কথা শুনে পরেশের বৃদ্ধ মা খুব খুশি হয়। সে বলে ঠাকুর যেন আমার নাতনীকে রাজরানী করে রাখে। ওর জীবনে যেন আর কোন কষ্ট নেমে না আসে। এদিকে অনেকদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে রাজা রানীর আর ঘুম আসে না। তারা ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে গল্প করিতে থাকে। তখনই রাজা তার পুুর্বের একটি কথা তাদের কে জানায়, সে তো রাজা , আর রাজার ছেলের আবার জমকালো ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করিতে হবে। সেখানে বিভিন্ন রাজা বাদশাদের দাওয়াত করা হবে।

 

সে জন্য আমি আর তোমার মা চিন্তা করেছি যে, উত্তরের তোমার মার নামে যে দশ খাদা জমি রয়েছে । সেটা মায়াবতীদের দিয়ে দিবো স্দ্ধিান্ত নিয়েছি। সেখানে একটি রাজপ্রাসাদ তৈরী করা হবে। সেখানে তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। তখন রাজা মায়াবতীকে বলে, এ প্রস্তাবে তোমার কোন দ্বিমত আছে কি? তখন মায়াবতী বলে, আমার জন্ম হয়েছে ঐ ভাঙ্গা কুটিরে। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে আসলে বুঝি আমার পিতা-মাতা বেশি খুুশি হবেন। সে বলে এ প্রস্তাবে আমার পিতা মাতা খুশি নাও হতে পারেন। দয়াল এ প্রস্তাবে মায়াবতীর অসম্মতি দেখে তার পিতাকে বলে, আমি তো প্রাসাদের কোন মেয়েকে ভালবাসিনি। আমি ভালবেসেছি এক সুখী নীড়ের এক বুদ্ধিমতী সাহসী মেয়েকে। আমি খেয়াল করিনি তার পিতার কি অবস্থা ? তাই তোমার রাজা বাদশাদের আনতে হবে না। আমরা তো বিয়ে করেইছি। সেখানে আবার কিসের আবার অনুষ্ঠান করতে হবে। যদি কোন অনুষ্ঠান করতেই হয় আমাদের বাড়ীতেই না হয় কোন রকম একটা পরিচিতি অনুষ্ঠান করতে পারো। সেখানে মায়াবতীর আত্নীয় স্বজনদের তো দাওয়াত করিতে হবে।(চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com