নওগাঁয় হিজাব পড়ে স্কুলে আসার অপরাধে ১৮ জন ছাত্রীকে পিটালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।
এঘটনায় বৃহস্পতিবার ৭ এপ্রিল ছাত্রীদের অভিভাবক সহ স্থানিয়দের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখাদিলে ঘটনার খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কর্তৃক ছাত্রীদেরকে পিটানোর ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ৬ এপ্রিল দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
হিজাব পড়ে স্কুলে আসার অপরাধে ১৮ জন ছাত্রীকে ঐ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল পিটিয়েছেন এমন খবর ছাত্রীরা স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে তাদের অভিভাবকদেরকে জানালে মহূর্তের মধ্যেই ঘটনাটি স্থানিয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ছাত্রীদের অভিভাবক সহ স্থানিয়দের মাঝে উত্তেজনা দেখাদেয়। উত্তেজিত অভিভাবক সহ স্থানিয়রা বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের পিটানোর প্রতিবাদ জানান এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্কুলে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। এসময় খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজিত লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নির্যাতনের শিকার ঐ স্কুলের ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে বলেন, বুধবার দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজার পড়ে স্কুলে আসা হয়েছে এমন কথা জিজ্ঞাসা করে গাছের ডাল দিয়ে আমাদেরকে মারপিট করেন এবং মারপিট করার সময় শিক্ষিকা আমাদেরকে বলেন, স্কুলে কোন পর্দা চলবে না, বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে এমন কথা বলার মাঝেই তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানা-হেচড়াও করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পড়ে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন প্রধান শিক্ষিকা।
৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আফরিন, ১০ম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া অন্তত ১৮ জন ছাত্রীকে পিটিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।
ছাত্রী সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম সংবাদ কর্মীদের বলেন, আমার মেয়ে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পড়ার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে, তারা তো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?।
১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আক্তারের মা মরিয়ম নেছা জানান, তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পড়ে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পিটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে মারপিট করলে তার মেয়ে ক্লাস না করে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে কাঁদতে থাকেন।
ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক ছাত্রী হেনস্থাকারী অভিযুক্ত শিক্ষিকা ও শিক্ষক এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক সহ স্থানিয়রা।
ঘটনার ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনি পাল এর মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে হিজাব পড়ে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন বলে শুনেছি। ঘটনার দিন আমি স্কুলের কাজে রাজশাহীতে ছিলাম।
বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে ঘটনাটি শুনেছি।
এব্যাপারে মহাদেবপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদককে জানান, স্কুলের ঘটনায় আমি যাইনি, তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজিত লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এখনো (রাতে) থানার ওসি স্যার সহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
#চলনবিলের আলো / আপন