রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন

ই-পেপার

একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ও অদম্য নারী রুপালী

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০, ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ

নির্মল বড়ুয়া মিলন:

মানবধিকার কর্মী বা সাংবাদিকতার সুবাদে অনেক মানুষ আমার ফেইসবুক পেইজে অনেক সদস্যা জানিয়ে আমাকে তাদের ব্যক্তিগত অনেক কথা লিখেন। অনেকে আবার অনেক তথ্য জানতে চান। আমার জানা থাকা তথ্য দিয়ে তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি তবে আমি ৯৯.৯৯% প্রশ্নের উত্তর দেই বা রিফলাই করি।

গত ১০ মে ২০২০ তারিখ সন্ধ্যার দিকে আমি ডেস্কে বসে কাজ করছি এ মধ্যে আমার ফেইসবুক পেইজে একজন নারী আমাকে জানান যে, তার একটা ব্যক্তিগত সমস্যা হয়েছে তিনি আমার সহযোগিতা চায়।

আমি ২০০৪ সাল থেকে ফেইসবুক পেইজ ব্যবহার করি অনেকই তাদের প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের তথ্য জানান, আবার কেউ কেউ নিজেদের এলাকার সমস্যার কথা জানান, কেউবা বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে জানতে চান, বেশীর ভাগ সময়ে জেলার বাহির থেকে রাঙামাটি জেলার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চান। কিন্তু এ প্রথম কোন নারী প্রতারণার শিকার হয়ে সরাসরি আমার কাছে তার ব্যক্তিগত বিষয় জানিয়ে মানবধিকার কর্মী বা সাংবাদিক হিসাবে আমার নিকট সহযোগিতা কামনা করেন।

সেই নারীর আসল পরিচয় হয় তো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবে কিন্তু আমি তার আসল নাম ব্যবহার না করে তার ছদ্ধনাম ব্যবহার করছি।
৩৫ বছর বয়সী এই নারীর নাম রুপালী তিনি ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত আছেন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : রুপসী জানায়, গত ২০১৬ সালে তিনি রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় ম্যানেজার পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। কর্মস্থলে থাকার সুবাদে ডিসেম্বর ২০১৭ সালে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ীর সাথে তার পরিচয় হয় তার সুবাদে সে যুবক রুপালীর অফিসে প্রায় সময় যাতায়াত করিত, এক পর্যায়ে তার সাথে রুপালীর সাথে ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে বন্ধুত্ব সর্ম্পক গড়ে উঠে। রুপালী বলেন তার পরিচয় হওয়ার কারণে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় উন্নয়ন সংস্থার অফিসে বসে গত ২০১৮ সালে সেই ব্যবসায়সী ব্যবসার পুজির জন্য প্রথম কিস্তিতে নগদ ৭০,০০০০/= (সত্তর হাজার) টাকা লোন হিসাবে রুপালীর নিকট থেকে গ্রহন করেন। সত্তর হাজার টাকা লোন নেয়ার একমাস পর বিকাশের মাধ্যমে ব্যবসায়ী রুপালীর নিকট থেকে আবার ২০১৮ সালে বিকাশের মাধ্যমে ২য় কিস্তিতে ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা লোন হিসাবে গ্রহন করেন এবং রুপালীর পাওনা ১০০০০০/-(একলক্ষ) টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দিবেন বলে মৌখিক শর্ত দেয় জনৈক ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে বেশ কয়েকমাস পরে রুপালী নিজের মুঠোফোন নাম্বার ০১৮…….. ও ০১৬…….. থেকে ব্যবসায়ীর মুঠোফোন নাম্বার ০১৮…….. ও ০১৮…….. লোন নেয়া মোট ১,০০০০০/= (এক লক্ষ) টাকা ফেরৎ চায়। আবার ব্যবসায়ীর কথা মত এক সপ্তাহ পর তার কাছ থেকে পাওনা টাকার জন্য মুঠোফোন ০১৮……….. ফোন দিলে সে রুপালীর নিকট থেকে আরো সময় চায়, এভাবে সময় ক্ষেপন করে ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে অনেক সময়ে ব্যবসায়ীর ০১৮…….. ও ০১৮…….. দুইটি নাম্বারই বন্ধ রাখেন।

রুপালীর পারিবারিক প্রয়োজনে টাকার বেশী প্রয়োজন হওয়াতে সে ব্যসায়ীরকে তার নিকট থেকে রুপালীর পাওনাা একলক্ষ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করিলে ব্যবসায়ী রুপালী হরিণায় (বরকল) থাকাবস্থায় গত ২০১৯ সালে ০১৮…….. ও ০১৮…….. ইমু নাম্বার থেকে রুপালীর ০১৮…….. ও ০১৬…….. ইমু নাম্বারে একটি পর্ণো ভিডিও পাঠায়।
সেই ব্যবসায়ী রুপালীকে ফোন করে বলে যে, রুপালী যেন তার পাঠানো পর্ণো ভিডিও টি দেখে। রুপালী এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীর পাঠানো পর্ণো ভিডিও ক্লিপ দেখার পর হতভম্বব হয়ে যায়।

রুপালী পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি দেখার পর কৌশলে তাকে এধরনের অসামাজিক ভিডিও ক্লিপ মুছে ফেলতে (ডিলেট করিতে) অনুরোধ জানান। ব্যবসায়ীর নিকট থেকে লোন বাবদ রুপালীর পাওনা একলক্ষ টাকা ফেরৎ চাইলে সে অসামাজিক ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশ করার হুমকি দেয় এবং রুপালীর নিকট থেকে আরো সেই ব্যবসায়ী ৫০,০০০/= (পঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবি করে। রুপালী ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করে যে, রুপালীর স্বামী ষ্ট্রোক করেছেন। ব্যবসায়ীর কথা মতো টাকা না দেওয়াতে সে রুপালীর নিকট থেকে তার ব্যবসার জন্য লোন নেয়া একলক্ষ টাকা ফেরৎ না দিয়ে রুপালীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গোপনে ধারন করা পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে রুপালীকে বার বার ব্যাক্লমেইলিং করিতে থাকে। ব্যবসায়ী রুপালীকে মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখায়।

ব্যবসায়ীর ব্যাক্লমেইলিং রুপালী বুঝিতে পারিয়া ভয়ে রুপালী ব্যবসায়ীর সাথে সকল ধরনের যোগ যোগ বন্ধ করে দেয়। এর পর ব্যবসায়ী তার নতুন মুঠোফোন নাম্বার ০১৬…….., ০১৬…….., ০১৮…….. থেকে ফোন দিয়ে রুপালীকে বিরক্ত করে এবং ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলতে আমাকে বাধ্য করে তার কথা মেনে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে বলে।
বিশ^াস ঘাতক ও প্রতারক ব্যবসায়ীর কথা মতো রুপালী চট্টগ্রাম না যাওয়াতে এবং তার দাবিকৃত টাকা না পাঠানোর প্রেক্ষিতে পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি হরিণা বাজারে তার বন্ধু মোবাইল দোকানদার (মুঠোফোন নাম্বার-০১৮……..,০১৬……..,০১৬……..) ও (মুঠোফোন নাম্বার-০১৬…….., ০১৬…….., ০১৬……..), উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নিকট পাঠিয়ে দেয়।
মুঠোফোন নাম্বার থেকে ফোন করে তাদের দাবি মত টাকা দিতে বলে অন্যতায় গোপনে ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

রুপালী আর্থিক সংকটে থাকার পরও বিকাশের মাধ্যমে গত জানুয়ারি-২০২০ প্রথম কিস্তিতে ১০,০০০/= (দশ হাজার), ফেব্রুয়ারি-২০২০ ২য় কিস্তিতে ১০,০০০/= (দশ হাজার), মার্চ-২০২০ তারিখ ১০,০০০/= (দশ হাজার), দুইজনকে তিন কিস্তিতে ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয় রুপালী। এর পরও রুপালীর সাথে জনৈক ব্যবসায়ী গংদের প্রতারনা বা ব্যাক্লমেইলিং বন্ধ হয়নি।
প্রতি নিয়ত ব্যবসায়ীর বন্ধুরা রুপালীকে অনলাইনে যৌন হয়রানি করতে থাকে। এ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকে (ওয়ালে) যে সকল আইডি থেকে রুপালীর কাছে ব্যবসায়ী ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি পাঠানো হয়েছে সে সব ফেইসবুক ভুয়া আইডির সংক্ষিপ্ত বিবরণ রুপালী আমার কাছে পাঠায়।

উল্লেখ্য, বেশ কিছু ভুয়া আইডি থেকে রুপালীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। রুপালীর ধারনা সেই ব্যবসায়ী এবং তার বন্ধুরা (১৫-২০ জন) একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব হীন কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে।

এছাড়া রুপালী তার বর্মস্থলে বসে গত মে ২০২০ ইংরেজি তারিখ সকাল বেলা রুপালীর মোবাইল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকনিজস্ব আইডি থেকে অনলাইনে সংবাদ পড়াকালিন দেখি কে বা কাহারা পেইসবুকে রুপালীর ছবি ব্যবহার করিয়া “….” নামে অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে একটি আইডি পরিচালনা করছে এবং “…..” আইডি থেকে রুপালীর ছবি বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করে রুপালীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের কুৎসিত ভাষায় লেখা রয়েছে এবং অশালীন ভিডিও (পর্ণোগ্রাফি) ওয়ালে পোষ্ট করা হয়েছে। রুপালীর স্বামী একজন শিক্ষক এবং রুপালী একজন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মী রুপালীদের মানহানি, ক্ষতিসাধন ও পারিবারিক বিশৃক্সখলা সৃষ্টির অসৎ উদ্দ্যেশ্যে করেছে মর্মে প্রতিয়মান হয়। এছাড়া মোবাইল নাম্বার ০১৮…….., ০১৮…….., ০১৬…….., ০১৬…….. এছাড়া একাধিকনাম্বার থেকে ফোন করে রুপালীকে বিভিন্ন ধরনের খারাপ কথা বলে ব্যাক্লমেইলিং সহ রুপালীর প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে (মোবাইল নাম্বার সমুহ সংরক্ষিত আছে)। রুপালী মানষিক ভাবে সম্পূর্নভেঙ্গে পড়ে।

“…..” আইডিসহ আরো বেশ কয়েকটি ভুয়া আইডি থেকে রুপালীকে জড়িয়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছে খারাপ মেসেজসহ রুপালীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উস্কানীমূলক, পারিবারিক-ব্যাক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করারমতো পোষ্ট দেওয়াতে রুপালী স্বয়ং ব্যাক্তিগতভাবে পরিবার-পরিজন,আত্মীয়-স্বজনরা সংক্ষুব্ধ এবং বিরুপ মন্তব্য ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রুপালীর বিষয়টি আমি সাংবাদিক হিসাবে যাচাই-বাচাই করিয়া দেখি এবং রুপালীর অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়াতে আমি রুপালীকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেই।

সেই সাথে আমার ঢাকা বন্ধুজন সিনিয়র আইনজীবি আহম্মদ উল্লাহ্ আমান ভাইকে রুপালীর সম্পুর্ণ বিষয়টি অবহিত করে অপরাধীদের তথ্য প্রমান সহকারে রুপালীর ব্যক্তব্য মেইল পাঠাই। সিনিয়র আইনজীবি বন্ধু ২ দিনের মধ্যে তার রেজাল্ট দেন। তিনিও রুপালীকে ডিজিটাল জননিরাপত্তান আইনে থানায় একটি মামলা রুজু করার পরামর্শ দেন।

সেই প্রেক্ষিতে রুপালী রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাথে তার সাথে ঘটে যাওয়ার সংক্ষিপ্তি বিবরণ জানায়, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ রুপালীকে বিষয়টি সাধারন ডায়েরী হিসাবে লিপিবদ্ধ করিতে বলেন।

রুপালী থানায় যেতে লজ্জাবোধ করায় রুপালীর পক্ষে সাধারন ডায়েরীর আবেদন পত্রটি ১১ মে-২০২০ তারিখ আমি নিজে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় নিয়ে যাই। থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার রুপালীর আবেদনপত্রটি পড়ে দেখে বলেন, এবিষয়টি আইসিটি এ্যাক্টে মামলা হবে। বিষয়টি সাধারন ডায়েরীর পরিবর্তে অভিযোগ আকারে থানায় জমা দিতে বলেন ডিউটি অফিসার।

একই তারিখে রুপালী তার সাধারন ডায়েরীর বিস্তারিত বিবরণ রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় অভিযোগ আকারে দায়ের করেন।
২ জুন-২০২০ তারিখে রুপালীকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা থেকে ফোন করা হয়। রুপালীর অভিযোগপত্রটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই অরুপ তালুকদার। কোতয়ালী থানা থেকে ফোন পাওয়ার পর রুপালী আমাকে থানায় তার সাথে যেতে অনুরোধ করেন আমি রুপালীকে সাথে নিয়ে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় উপস্থিত হয়ে আইও এসআই অরুপ তালুকদারের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করিতে থাকি। ৪০-৫০ মিনিট পর এসআই অরুপ তালুকদার থানায় আসেন। রুপালীর সাথে এবং আমার সাথে এসআই অরুপ তালুকদারের পরিচয় হয়। তার পর রুপালীর ঘটনার বিবরণ জানতে চান এসআই অরুপ তালুকদার। আমি সামনে থাকায় রুপালী লজ্জাবোধ করছন বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি একটু দুরে সরে গেলাম। প্রায় ঘন্টাখানিক রুপালীর বক্তব্য শোনার পর এসআই অরুপ তালুকদার আমাকে আবার ডেকে নিলেন লক্ষ্য করলাম রুপালীর দেয়া বক্তব্য সমুহ আইও তার ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করেছেন।

এসআই অরুপ তালুকদার রুপালীকে এবং আমাকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনির কাছে তার কক্ষে নিয়ে গেলেন।

রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি এসআই অরুপ তালুকদার ও রুপালীর নিকট থেকে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ শুনে রুপালীকে ওসি আশ^স্থ করলেন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন।

৬ জুন-২০২০ তারিখ রুপালী তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। ৯ জুন-২০২০ তারিখ রুপালী আমাকে ফোন করে জানায়, তাহাকে আবার রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় ডাকা হয়েছে। রুপালীর অনুরোধে আমি রুপালীর সাথে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় উপস্থিত হলে এসআই অরুপ তালুকদার আমাদের দুইজকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ এর কাছে তার অফিস কক্ষে নিয়ে যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ রুপালীর অভিযোগপত্রটি পড়ে দেখেন এবং বলেন, ঘটনাস্থল বরকলে সুতরং রুপালীকে এ অভিযোগপত্রটি বরকল থানায় জমা দিতে হবে বলে পরামর্শ দেন।

আমি রুপালীকে সাথে নিয়ে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা থেকে বাসায় চলে আসি। রুপলী তার জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে বরকল যেতে রাজি নয়। রুপালী মানষিক ভাবে সম্পূর্ন ভেঙ্গে পড়েছে।
রুপালীর মানষিক অবস্থা দেখে আমি আমার এক সাংবাদিক বন্ধুকে ফোন করি সে বন্ধুটি আমাকে বলেন, ভিকটিম যদি থানায় যেতে না পারেন তাহলে জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে অভিযাগপত্র জমা দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

১০ জুন-২০২০ তারিখ রুপালী পুলিশ সুপার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বরাবর তার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। রুপালী তার অভিযোগপত্র দাখিল করা কালিন অভ্যার্থনা কক্ষে সহকারি পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল চৌধুরী রুপালীর অভিযোগপত্রের বিষয়টি তিনি পড়ে দেখেন এবং রুপালীর অভিযোগপত্রটি লোক মারফৎ অথবা ডাকযোগে বরকল থানায় পাঠালে ভিকটিম আইনগত দিক থেকে সাপোর্ট পাবে। সেইদিনই রুপালী গ্যারান্টেট ডাকযোগে অফিসার ইনচার্জ (ওসি), বরকল থানা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বরাবর তার অভিযোগপত্রটি পাঠিয়ে দেয়।
১৪ জুন-২০২০ তারিখ রাঙামাটি পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সহকারি পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল চৌধুরী রুপালীকে তার মোবাইল ফোনে দিয়ে তার অফিসে যেতে বলেন, রুপালী আবারও আমাকে তার সাথে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আমাকে নিয়ে যায়। আমি সহকারি পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল চৌধুরীর সাথে রুপালীর বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করি।

সহকারি পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল চৌধুরী বলেন ঘটনাস্থল বরকলে সেহেতু রুপালীকে বরকল থানায় অভিযোগপত্র জমা দিতে হবে। তিনি আমারদের সামনে থেকে বরকল থানার ওসিকে রুপালীর বিষয়টি ফোনে অবহিত করেন এবং এবিষয়ে রুপালীকে আইনগত সহায়তার নির্দেশ দেন।

রুপলী তার জীবনের নিরাপত্তার কথা সহকারি পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল) মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল চৌধুরীকে জানালে তিনি রুপালীকে কিছু পরামর্শ দেন এবং বরকল থানায় রুপালীর সাথে একজন সাংবাদিক হিসাবে আমাকে যেতে অনুরোধ করেন।১৬ জুন-২০২০ তারিখ রুপালী বরকল থানায় স্ব-শরিরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগপত্রটি জমা দেয়। রুপালীর অভিযোগপত্র বরকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন গ্রহন করেন।

১০ জুন রুপালী গ্যারান্টেট ডাকযোগে অফিসার ইনচার্জ (ওসি), বরকল থানা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রটি তদন্ত করেছেন এসআই কামাল হোসেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেন রুপালীর অভিযোগপত্র মোবাইলের মাধ্যমে বরকলের হরিণার কয়েকজন লোককে ছবি আকারে দিয়েছেন। আসামীদের মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করার পরও ফেরত দেয়া এবং হরিণা বাজারে বসে আসামীদের সাথে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেনের চা পান করা শর্ষ্যরে মধ্যে ভুত বলে স্থায়ীরা জানিয়েছে । অভিযোগপত্রে ছবি কাউকে দেয়াটা ডিজিটাল জননিরাপত্তা আইনে আরেকটি অপরাধ বলে মনে করি।

মামলার স্বার্থে বিষয়টি অনেকটাই সিরিয়াসলি নেয়নি ভুক্তভোগী। তাহলে আদৌ কি রুপালী সু-বিচার পাবেন।৫দিন পর ২০ জুন-২০২০ তারিখ রুপালী তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেনকে ফোন দিয়ে তার দায়ের করা অভিযোগপত্রের অগ্রগতি সর্ম্পেকে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেন বলেন প্রসিজিউর চলছে, আপনাকে জানানো হবে ইত্যাদি।

২২ জুন-২০২০ তারিখ সকাল ১০টার দিকে বরকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন আমাকে ফোন করে জানান, রুপালীর অভিযোগপত্র পরিবর্তে এজাহার আকারে ঘটনাটি থানায় জমা দিতে হবে তখন আমি বলি যে, অভিযোগ আর এজাহারের মধ্যে পার্থক্য কি ? ওসি মো. জসিম উদ্দিন আমার কথা কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, এজাহারে সাথে যে সকল কাগজ-পত্র জমা দেয়া হবে সেই সব কাগজ-পত্র যেন রঙ্গিন প্রিন্ট হয়।
অদম্য নারী রুপালী তাৎক্ষনিক ভাবে দ্রুত সব রেডি করে দুপুর ১টার দিকে স্পিড বোট নিয়ে রুপালী বরকল থানায় স্ব-শরিরে উপস্থিত হয়ে এজাহার জমা দেয়। রুপালীর এজাহার বরকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন গ্রহন করেন। এর পর এজাহারের কপি দেয়ার কথা বলে রুপালী ও আমাকে বরকল থানায় বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়। ওসিকে ফোনে না পেয়ে আমি যখন বার বার রুপালী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেন বলেন সন্ধ্যা হলে অন্ধকার হয়ে গেলে বোটের ড্রাইভার কিছুই দেখবেন না আমাদের রাঙামাটি শহরে ফেরৎ যেতে হবে। এসআই কামাল হোসেন উত্তর দিলেন আপনারা আপনাদের কপি কোর্ট থেকে নিবেন। আমরা কোন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত স্পিড বোটে উঠে সোজা রাঙামাটি শহরে চলে আসি।

২৩ জুন-২০২০ তারিখ বরকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন আমাকে ফোন করে জানান রুপালীর মামলাটি আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং মামলার কপি যেন রুপালী কোর্ট থেকে সংগ্রহ করে নেয়। ৪২ দিন পর তাহলে রুপালীর অভিযোগপত্র বা এজাহার (২২/০৬/২০২০ ইংরেজি ১৬.৩৫ ঘটিকায় প্রাপ্ত হয়ে বরকল থানার মামলা নং ০৯, ধারা ডিজিটাল নিরাপত্ত¡া আইন ১৮এর ২৪(২)/২৫(২)২৯(১) ৩০/৩১(১)৩৫(২)) রাঙামাটি কোর্ট কগনিজেন্স আদালত জিআর মামলা নং… /২০২০ নিবন্ধিত হল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ৫ জনের মধ্যে ১জন আসামীও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি বরকল থানা পুলিশ।

আমরা সাংবাদিক, সব সত্য কথা সব সময়ে প্রকাশ করিতে পারিনা বা সব সত্য কথা প্রকাশ করা যায় না। শুধু এইটুকু বলছি, আমার এক বন্ধু সাংবাদিক সামসুল আলম স্বপন প্রায় সময়ে বলেন, “আকাশের যত তারা পুলিশের তত ধারা”।

তার পরও আমি বিশ্বাস করতে চাই পুলিশ বাহিনীর ওপর, রুপালী তার কাক্সিখত বিচার দেরীতে হলেও পাবেন। বাংলাদেশের এবং দেশের বাইরের সকল সাংবাদিক ও মানবধিকার সংগঠনের কর্মীদের পাহাড়ের অদম্য নারী রুপালীর পাশে এসে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।

লেখক : সাংবাদিক ও মানবধিকর কর্মী নির্মল বড়ুয়া মিলন,

মূখ্য সম্পাদক, সিএইচটি মিডিয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর