শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন

ই-পেপার

খালেদা ও জাইমার চরিত্রহনন কেন?

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৪৯ অপরাহ্ণ

তথ্যপ্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য যাবতীয় ভব্যতা ও শিষ্টাচারকে অতিক্রম করেছে। তাঁর বক্তব্য সরাসরি নারীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী। কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে কোনো মন্ত্রীর মুখ দিয়ে এমন বক্তব্য বের হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তিনি সরাসরি দুজন নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। শুধু দুই নারীই নয়, তিনি আফ্রিকার মানুষদের সম্পর্কেও বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন। অথচ তিনি কিছুদিন আগে দেশ থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের কথা বলেছিলেন। নারীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মনোভাবের জন্য শুধু তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানই নয়, অনুষ্ঠানের উপস্থাপকও দোষী সাব্যস্ত হবেন। তিনি তথ্যপ্রতিমন্ত্রীকে বাজে ও অশ্লীল কথা বলতে বাধা না দিয়ে বরং সুযোগ করে দিয়েছেন।

কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির পক্ষে খালেদা জিয়া সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য সম্ভব নয়। জিয়াউর রহমান যখন যুদ্ধের ময়দানে লড়ছেন, খালেদা জিয়া তখন দুই সন্তান নিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে আটক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার আটকাবস্থাকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখা উচিত। কিন্তু মুরাদ হাসানের অশালীন মন্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেমানান। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। দেশের জনগণ একাধিকবার ভোট দিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করেছেন। দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সামনের সারিতে আছেন। তাঁর সময়ই মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালু করা হয়। এ ছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি আপসহীন ছিলেন। অথচ মুরাদ হাসান শুধু বাজে মন্তব্যই করেননি, খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনৈতিক বিদ্বেষও ছড়িয়েছেন।

মুরাদ হাসানের অশ্লীল কথার বানে বিদ্ধ হয়েছেন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানও। পিতা তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি বিদেশেই আছেন। তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। খুব বেশি প্রকাশ্যে আসেন না। লন্ডনে আইন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করে চাকরি করছেন। রাজনীতির সঙ্গে তাঁর এখনো কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর অংশগ্রহণও নেই। তবে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতিতে আসতে পারেন। কিন্তু এখনো তাঁর রাজনীতিতে অভিষেক ঘটেনি। এর আগেই তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন।

রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ার পরও তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অযাচিতভাবে কন্যাসম জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান রাজনীতিতে সক্রিয়। তাঁদের নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা আছে। কোনো অপরাধ করলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের বিচার হবে। আর জনগণই তাঁদের কর্মের মূল্যায়ন করবে। কিন্তু জাইমা রহমানকে নিয়ে টানাহেঁচড়ার বিষয়টি বোধগম্য নয়। তবে হুট করে খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমান সম্পর্কে এ ধরনের রুচিহীন কথাবার্তার কিছু সম্ভাব্য কারণ অনুধাবন করা যায়।

বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানের ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হবে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দেখা গেল জাইমা রহমান রাজনীতিতেই আসলেন না। আর খালেদা জিয়ার এভাবেই মৃত্যু হয়েছে। তখন এটা বলা অসংগত হবে না যে খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমান অপপ্রচার ও জুলুমের শিকার হয়েছেন।

প্রথমত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা কথাই কয়েক সপ্তাহ ধরে বলাবলি হচ্ছে। শারীরিকভাবে তিনি খুব একটা ভালো নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়া যকৃতের জটিল রোগ সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাঁকে জেলে থাকাবস্থায় বিষ প্রয়োগ করা হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, উচ্চমাত্রার গেঁটে বাতের ওষুধ প্রয়োগ করে ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁর যকৃৎকে রোগাক্রান্ত করা হয়েছে, এর ফলাফল হচ্ছে সিরোসিস। এর পাল্টা অভিযোগও এসেছে সরকারের তরফ থেকে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির দিকেই পাল্টা তির ছুড়ে বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন তাঁর পরিবার ও দলের তত্ত্বাবধানে আছেন। কিছু হয়ে থাকলে তারাই ভালো বলতে পারবে।

এ রকম পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই মুরাদ হাসান তাঁর অশ্রাব্য কথার পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন। উদ্দেশ্য হতে পারে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া। সবাই মুরাদ হাসানের মন্তব্য নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি আড়ালে চলে যাবে। অথচ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছেই।

সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণে দ্রুত কাবু হয়ে পড়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও এত দিন খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি। অবশ্য উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকারের তরফে কোনো সাড়া মেলেনি। বরং অবস্থাদৃষ্টে এটা পরিষ্কার যে প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন খালেদা জিয়া।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে পারিবারিক উত্তরাধিকার প্রথা। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিকভাবে নেতা নির্ধারণ করা হয় না। পারিবারিক উত্তরাধিকার এখানে গুরুত্ব পায়। তাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরবর্তী সময়ে জাইমা বিএনপির নেতৃত্বে আসতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অনেকেই উৎসাহিত হয়ে এখনই জাইমাকে রাজনীতিতে আনার জন্য বিএনপিকে পরামর্শও দিচ্ছেন। হতে পারে আওয়ামী লীগ এটা আঁচ করতে পেরে আগে থেকেই জাইমা রহমানকে লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিএনপির নেতা-নেত্রীদের নিয়ে প্রোপাগান্ডা পরিচালনায় আওয়ামী লীগের কৌশল অনেকটাই সফল। এই পদ্ধতি তাঁরা জাইমা রহমানের বেলায় ব্যবহার করতে চান। মজার বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতারা একসঙ্গে সবাই বলেন না। একেক সময় একেক জন কথার ঝুড়ি নিয়ে হাজির হন। বিএনপির নেতাদের লক্ষ্য করে কথার বোমা ছুড়তে থাকেন। বলাবাহুল্য বিএনপি আওয়ামী লীগের এসব প্রোপাগান্ডার জবাব কখনোই দিতে পারেনি। তাদের জবাব দেওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রজ্ঞা ও শক্তি নেই।

ফলে অনেকেই মনে করছেন, মুরাদ হাসান হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব কথা বাজারে ছেড়েছেন। প্রথমত, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার চাপ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। আর দ্বিতীয়ত, বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করা। কিন্তু এ ধরনের বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ আওয়ামী লীগ ও নারী সমাজের ভেতর থেকেই আসা উচিত। না হলে এ সমাজে বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগ ঘৃণাবাদীর আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানের ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হবে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।যদি দেখা যায় জাইমা রহমান রাজনীতিতেই আসলেন না। আর খালেদা জিয়ার এভাবেই মৃত্যু হয়েছে। তখন এটা বলা অসংগত হবে না যে খালেদা জিয়া ও জায়মা রহমান অপপ্রচার ও জুলুমের শিকার হয়েছেন।

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর