রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আইন বিষয়ক দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত কিছু ইংরেজি শব্দের অর্থসহ ব্যাখ্যা

ডা.এম.এ.মান্নান, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ অপরাহ্ণ

১.   অর্ডিনান্স (Ordinance) : গৃহনির্মাণ, নিরাপত্তা, জোনিং ইত্যাদি বিষয়ক ব্যাপারে যেসব বিধি কর্পোরেশন, সরকার বা অন্যান্য অধিকারিক সংস্থা জারি করে।
২.   আপিল (Appeal)  : নিম্ন আদালতের রায়ের পুনর্বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা।
৩.   আরবিট্রেশন (Arbitration)  : বিবাদকারী দুই দলের অনুমোদিত নির্দলীয় কোনো তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কলহের বিচার, যার রায় বিবাদকারীরা মানতে স্বীকৃত।
৪.   এলিবাই (Alibi) : অপরাধ সংঘটিত হবার সময় অভিযুক্তের অন্য কোথাও থাকার দাবি।
৫.   ইনটারলোকিউটরি (Interlocutory) : অস্থায়ী, অন্তর্বতী কালের জন্য।
৬.   উইল (Will) বা ইচ্ছাপত্র : কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ধন-সম্পত্তি কীভাবে বণ্টন করা হবে সে বিষয়ে তাঁর ইচ্ছাপত্র।
৭.   ইনটেস্টেট (Intestate) : যে ব্যক্তি উইল বা ইচ্ছাপত্র না লিখে মারা গেছে, তার স্ট্যাটাস বা অবস্থা।
৮.   একস্ট্রাডিশান (Extradition) : অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি আইন-এলাকা (রাজ্য, রাষ্ট্র, ইত্যাদি) থেকে অন্য আইন-এলাকায় হস্তান্তরিত করা।
৯.   এনট্র্যাপমেন্ট (Entrapment) : কাউকে অন্যায় কর্মে প্রণোদিত করা, যাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়।
১০.  এফ.আই.আর. (F.I.R.): এটি ফার্স্ট ইন্ফরমেশন রিপোর্ট-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কোনো অপরাধ সংঘটিত হবার পর উৎপীড়িত ব্যক্তি বা অন্য কেউ সেই সম্পর্কে থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে অভিযোগ জানালে- অফিসারের দায়িত্ব সেটিকে নথিভুক্ত করা। সেই লিখিত রিপোর্টটি হলো এফ.আই.আর। এর ভিত্তিতে পুলিশ তার অনুসন্ধান শুরু করে।
১১.  এফিডেভিট (Affidavit) হলফপত্র বা শপথনামা : শপথ দেওয়ানোর ক্ষমতা আছে এমন কোনো লোকের সামনে স্বেচ্ছায় শপথপূর্বক লিখিত বিবৃতি দাখিল করা।
১২.   এমবেজেলমেন্ট (Embezzlement) বা তহবিল তছরূপ : বিশ্বাসভরে কারও গচ্ছিত অর্থ বা সম্পত্তি নিজের জন্য আত্মসাত করা।
১৩.  ওয়ারেন্ট (Warrant) : সাধারণভাবে কাউকে আটক করা বা কোথাও তল্লাশি চালাবার জন্য পুলিশকে দেওয়া আদালতের হুকুম। আদালতের কাছে থেকে এই ওয়ারেন্ট বের করার জন্য পুলিশকে আটক বা তল্লাশি চালানোর প্রয়োজনীয়তা তথ্য সহযোগে আদালতে পেশ করতে হয়।
১৪.   কনটেম্পট অফ কোর্ট (Contempt of Court) বা আদালতের অবমাননা : ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারকের আদেশ বা বিচার-বিভাগীয় হুকুম অমান্য করা।
১৫.  কনভেয়্যান্স (Conveyance) : কোনো জমির স্বত্ব এক বা একাধিক লোকের হাত থেকে অন্য হাতে যাওয়ার দলিল।
১৬.  করপাস ডেলিকটি (Corpus delicti) : যার ওপর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বস্তু-অবশেষ উদ্ধার করা। যেমন- খুনের লাশ বা পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ির দগ্ধাবশেষ ইত্যাদি।
১৭.   কুইড প্রো কো (Quid pro quo) : ল্যাটিন এই শব্দটির অর্থ-‘কীসের জন্য কী’ বা ‘কিছুর জন্য কিছু’। অর্থাৎ কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। কোনো কন্ট্রাক্ট পালন বাধ্যতামূলক হয়, যখন দুই পক্ষের মধ্যে মূল্যবান কোনো বস্তুর আদান-প্রদান ঘটে। সেজন্য যখন কোনো কোম্পানি তাদের নতুন তৈরি করা জিনিস বাজারে বিক্রি করার আগে পরীক্ষা করার জন্য লোকদের ব্যবহার করতে দেয়, তখন তার জন্য সাধারণত টাকা নেয় না। এই জন্য যে, সেই বস্তু কাজ না করলেও তার জন্য ব্যবহারকারীদের আইনত কিছু করার থাকে না।
১৮.  কোডিসিল (Codicil) : উইল বা ইচ্ছাপত্রের সংশোধন।
১৯.  ক্যাপিটল ক্রাইম (Capital crime) : যে অপরাধের দণ্ড হলো মৃত্যু।
২০.   ক্রিমিন্যাল ইনস্যানিটি (Criminal insanity) : ভালো ও মন্দের তফাত্ বোঝার অক্ষমতা; কোনো কিছু করার বা করা থেকে বিরত হবার মানসিক অক্ষমতা।
২১.   ক্লাশ অ্যাকশন (Class action) : যে মামলা এক বা একাধিক লোক একটি সমগ্র দলের হয়ে আদালতে আনে।
২২.   জয়েন্ট অ্যান্ড সেভারেল লায়াবিলিটি (Joint and several liability) :  আইনের একটি ভাষা, যার অর্থ দুর্ঘটনার জন্য কোনো দল দায়ী হলে সেই দলের প্রত্যেকটি ব্যক্তি আলাদাভাবে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে-যদি অন্য কেউ ক্ষতিপূরণ দিতে অসমর্থ হয়।
২৩.  জয়েন্ট টেনান্সি (Joint tenancy) : যুগ্মভাবে সম্পত্তির মালিকানা (একে অনেক সময়ে ‘সার্ভাইভারশিপ’ বলা হয়)। এক্ষেত্রে একজন মালিকের মৃত্যু হলে অন্যজন সম্পত্তির পুরো মালিকানা পায়।
২৪.   জাজমেন্ট (Judgement) বা রায় : মামলায় দুই পক্ষের বক্তব্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ শোনার পর বিচারক তাঁর যে সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে প্রকাশ করেন।
২৫.   জুভেনাইল ডেলিনকোয়েন্সি (Juvenile delinquency) : কিশোর-কিশোরী বা বালক-বালিকাদের করা অপরাধ।
২৬.  ডমিসাইল (Domicile) : স্থায়ী বাসস্থান।
২৭.   ডিফামেশন (Defamation) : মানহানি।
২৮.  ডিসকভারি (Discovery) : মামলা শুরু হবার আগে এর সম্পর্কিত ঘটনাসমূহ ও তথ্যাদি জানার উপায়গুলো।
২৯.  ডিসমিস্যাল (Dismissal) : মামলার খারিজ।
৩০.  নেগলিজেন্স (Negligence) : সাধারণভাবে একজন বিচারবুদ্ধি-সম্পন্ন পরিণামদর্শী লোক যে সাবধনতা অবলম্বন করবে সেটা না করা।
৩১.  নোটারি পাবলিক (Notary Public)) : সরকারি কর্মচারী, যার কাজ  হলো লোককে শপথ করানো, স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত কাগজে কেউ সই করার পর সেটিতে সই করে তাকে প্রামাণিক করা ইত্যাদি।
৩২.  পেটেন্ট (Patent) : উদ্ভাবকদের দেয় অধিকার, যার বলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁর উদ্ভাবন বিনা অনুমতিতে অন্য কেউ তৈরি, ব্যবহার বা বিক্রি করে লাভবান হতে পারে না।
৩৩.  প্লি (Plea) : আদালতে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নিজের স্বপক্ষে প্রথম উচ্চারিত কথা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের উত্তরে সে নিজেকে, ‘দোষী’ বা ‘নির্দোষী’ বলতে পারবে।
৩৪.  প্লি বার্গেইনিং (Plea bargaining) : ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরকারি পক্ষের একটা সমঝোতায় আসার জন্য আলোচনা। এর উদ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়ী মামলা (যার ফল অনিশ্চিত) না চালিয়ে দুই পক্ষেরই সময় ও অর্থের সাশ্রয় করা। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম অপরাধের জন্য নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করে ও সরকার তার অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু বিচারক এই সমঝোতা অগ্রাহ্য করে মামলা চালাবার নির্দেশ দিতে পারেন।
৩৫.  পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (Power of attorney) : একটি দলিল, যার ভিত্তিতে একজনের হয়ে দলিলে উল্লিখিত বিভিন্ন কাজ অন্য কেউ করতে পারে।
৩৬.  প্রাইমা ফেসি এভিডেন্স (Prima Facie Evidence) : যে প্রমাণ অন্য কোনোভাবে খণ্ডিত না হলে ঘটনার সত্যতা প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে যথেষ্ট।
৩৭.  প্রাইমা ফেসি কেইস (Prima Facie Case) : যে মামলা এতই সম্পূর্ণ যে বিচারকার্যের জন্য ন্যূনতম প্রমাণ দাখিলের প্রয়োজন হয় না।
৩৮.  প্রোবেট (Probate) : আদালতের যে কার্যবলির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাপত্র (উইল) বৈধ বা অবৈধ ধার্য করা হয়। সাধারণভাবে প্রোবেট কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। ইচ্ছাপত্র-সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যগুলোকেও এর মধ্যে ধরা হয়। যেমন- ধনসম্পত্তির একত্রীকরণ, ঋণ পরিশোধ, সরকারি কর দেওয়া ও ইচ্ছাপত্র অনুসারে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন।
৩৯.  প্রোবেট কোর্ট (Probate Court) : যে আদালতের তত্ত্বাবধানে ধনসম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়।
৪০.   ফ্রড (Fraud) : ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সত্য ঘটনাকে মিথ্যা করে বলা।
৪১.   ফ্রি অন এ পারসন্স ওউন রেকগনিজেন্স (Free on a person’s own recognizance) : যখন জামিন বা মুচলেকা ছাড়া সাময়িকভাবে কাউকে মুক্তি দেওয়া হয় তার ব্যক্তিগত পরিচিতির জন্য এবং আদালতে তিনি হাজিরা দেবেন এই প্রতিশ্র“তির বিনিময়ে।
৪২.   বেইল (Bail) বা জামিন : আদালতকে টাকা বা মুচলেকা দিয়ে আটক ব্যক্তিকে স্বল্প-মেয়াদের জন্য খালাস করানো এবং আদালতে আটক ব্যক্তির হাজিরার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া।
৪৩.  বেইল বন্ড (Bail Bond) : অভিযুক্ত আদালতে হাজির হবে বলে যে শপথপত্রে সই করে। সময়মতো হাজিরা না দিতে পারলে শপথপত্র অনুযায়ী অভিযুক্তকে অর্থদণ্ড দিতে হয়।
৪৪.   এন্টিসিপেটরি বেইল (Anticipatory bail) : এন্টিসিপেটরি বেইল হলো আদালত প্রদত্ত নির্দেশ, যাতে বলা হয় ব্যক্তি বিশেষকে জামিন দিতে। সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হবার আগেই এই নির্দেশ জারি করা হয়। কোনো ব্যক্তি যদি সন্দেহ করে যে, তাকে মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হবে, সেক্ষেত্রে সে আদালতের কাছে এন্টিসিপেটরি বেইল-এর জন্য আবেদন করতে পারে।
৪৫.   বাই-লস (By-laws) : কোনো এসোসিয়েশন বা কর্পোরেশন যে বিধি বা নিয়ম মেনে চলবে বলে ঠিক করে।
৪৬.  মার্ডার (Murder) বা খুন : বে-আইনিভাবে হত্যার জন্য মানুষের জীবনহানি করা। যদি খুনটি পূর্ব-পরিকল্পিত হয়, তাহলে তাকে ‘মার্ডার অফ দ্য ফার্স্ট ডিগ্রি’ বলা হয়। যদি হঠাৎ মুহূর্তের ইচ্ছাবশত খুন বা মরুক বাঁচুক তোয়াক্কা না করে আঘাত করা হয়, তাহলে সেই খুনকে বলা হবে ‘মার্ডার অফ দ্য সেকেন্ড ডিগ্রি’।
৪৭.   মিটিগেটিং সারকামস্ট্যান্সেস (Mitigating circumstances) : যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিচারে অন্যায়ের ভার কিছুটা লাঘব হয়।
৪৮.  মিসট্রায়াল (Mistrial) : কোনো অপরিহার্য বিষয়ে ত্রুটি ঘটায় যে মামলা খারিজ হয়।
৪৯.  ম্যালপ্রাক্টিস (Malpractice) : পেশার কাজে অবৈধ আচরণ।
৫০.  রিট (Writ) : রিট হলো মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা দানের জন্য সাংবিধানিক আদেশ। রিট পাঁচ রকম- হেবিয়াস কর্পাস, ম্যান্ডেমাস, প্রহিবিশন, কো ওয়ারেন্টো এবং সার্টিওয়ারি। সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে  সুপ্রিম কোর্ট তথা হাইকোর্ট রিট জারি করতে পারে।
লেখকঃ
মোঃ শরিফুল ইসলাম 
লেকচারার, গাজীপুর সেন্ট্রাল ল কলেজ
এলএলবি ও এলএলএম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, জজ কোর্ট
পরিচালকঃ Virtual Law College


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর