ছয় মাসের ব্যবধানে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। ছয় মাস পূর্বে বিভিন্ন কোম্পানীর ৫০ কেজি পোল্ট্রি খাদ্যের দাম ছিল ১ হাজার ৬শ টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে এখন ৫০ কেজি পোল্ট্রি খাদ্য বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২শ টাকায়। তুলনা মূলক ভাবে হাঁস, মুরগি ও ডিমের দাম না বাড়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারীদের। এমতাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন খামারীরা। অনেকে ইতিমধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
হাঁস, মুরগি ও ডিম উৎপাদনে তাড়াশ উপজেলার খামারীরা ইতোপূর্বে সাফল্যের নিদর্শন রেখেছেন। তাড়াশ উপজেলার প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মুরগি ও ডিম সরবরাহ করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যের দাম দফায় দফায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পরেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই দশকে তাড়শ পৌরসদরসহ তাড়াশে বিভিন্ন গ্রামে প্রায় তিন হাজার হাঁস, মুরগির খামার গড়ে উঠে। এসব খামারে উৎপাদিত হাঁস, মুরগির ও ডিম ঢাকা, চট্রগ্রাম, চাপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্তত আঠারটি জেলায় পাঠানো হতো। এখন থেকে কয়েক মাস পূর্বেও তাড়াশ প্রতিদিন এগার লাখ ডিম উৎপাদন হতো। তাড়াশ উৎপাদিত ডিম দেশের সার্বিক ডিমের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করতো। কিন্তু খাদ্যের দাম বাড়ায় অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ায় হাঁস, মুরগি ও ডিম উৎপাদন ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। আফতাব, নারিশ, সগুনা, প্যরাডাইস, প্যারাগন, আগাতা, এসিআই, সিপি, ফ্রেশ, কোয়ালিটি, ইনডেক্স, নিউহোপসহ প্রায় সকল কোম্পানীই মুরগির খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। “আগাতা ফিড” এর ডিলার শহিদুল ইসলাম জানান, গত পাঁচ থেকে ছয় মাস যাবত প্রায় প্রতি মাসেই পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ছে। ছয় মাসে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা।
উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রামের মুরগির খামারী শেবলু হোসেন জানান, ১ টি লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এসব খামারে ১০০০ হাজার মুরগী পালন করতেন। মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ায় খামার বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ছয় মাস পূর্বে ইনডেক্স কোম্পানীর ৫০ কেজি খাদ্যের দাম ছিল ১ হাজার ৬শ টাকা। এখন সে খাদ্য বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১শ টাকায়। যে তুলনায় খাদ্যের দাম বেড়েছে সে তুলনায় মুরগি ও ডিমের দাম না বাড়ায় ব্যবসার পরিধি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি। মাগুড়া ইউনিয়নের দোবিলা গ্রামের আলম হোসেন ৩০০০ হাজার মুরগি পালন করতেন। এখন তিনি খুব কম মুরগি পালন করেন। এর কারণ হিসেবে জানান, ছয় মাস পূর্বে ৫০ কেজি খাদ্যের দাম ছিল ১ হাজার ৬শ টাকা। এখন সে খাদ্য বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১শ টাকায়। লোকসান হওয়ায় ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন বললেই চলে। মহেশরৌহালী গ্রামের মুরগি ব্যবসায়ী রাসিদুল জানান, বর্তমান প্রতি কেজি লেয়ার মুরগি ১৭৫ টাকায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১শ ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান পাইকারী বাজারে ১০০ টি ডিম ৭৫০ টাকা থেকে ৭৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তাড়াশ কর্মরত মোছাঃ হুসনিয়ারা জানান, তাড়াশে পোল্ট্রি খাতে দেশের অন্যান্য অনেক এলাকা থেকে এগিয়ে রয়েছে। তাড়াশে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ডিম বাহিরে পাঠাচ্ছেন আড়ৎদাররা। তবে গত কয়েক মাসে মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ায় এ ব্যবসায় ভাটা পরেছে। খামারীরা জৈব নিরাপত্তার উপর গুরত্ব দিলে রোগ বালাই কম হবে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি পোষাতে পারবে তারা।
#চলনবিলের আলো / আপন