রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন

ই-পেপার

রোমান্টিক প্রেমের গল্প মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (৯ম পর্ব) -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০, ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

মায়াবতীর স্বামী সহ বুবলিদের বাড়ীতে আসায় বুবলির পিতা-মাতা খুবই খুশি হয় । বাড়ীতে বিভিন্ন রকমের খাবারের আয়োজন করে। বুবলির পিতা মায়াবতীর মাসির বাড়িতে খবর জানায় যে, মায়াবতী ও তার স্বামী আজ তাদের বাড়ীতে ই থাকবে। মায়াবতী ও বুবলি তাদের স্বামীকে নিয়ে সাথে নিয়ে নদীর পাড়ে নৌকা বাইচ দেখতে যায় । সেখানে নদীর পাড়ে বসার সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে । সেখানে তারা সারি সারি হয়ে বসে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করছে। সেখানে বিভিন্ন দোকান পাট ও বসেছে। যেন এক রকম মেলা লেগেছে । দয়াল কুমার সবার জন্য বাদাম কিনে নিয়ে আসে। তারা বসে বাদাম খাচ্ছে আর নৌকা বাইচ দেখছে । অন্যদিকে দয়াল কুমারের মাতা অর্থাৎ রানীমা রাজাকে প্রতিদিন তার ছেলে আর ছেলে বউকে মেনে নেয়ার আব্দার শুনতে শুনতে কান ঝালা করে ফেলছে ।

 

তারই মধ্যে গত রাত্রিতে রাজা মহাশয় স্বয়ং ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখেন যে, তার ছেলে তার বউমাকে নিয়ে নৌকা পাড়ি দেয়ার সময়, নৌকা ডুবে পানিতে পড়ে কুলে উঠার চেষ্টা করছে । কিন্তু পারছেনা। তার ছেলে নাকি তাকে ডাকছে তাকে উদ্ধার করার জন্য । রাজা মহাশয় হাউমাউ করে দয়াল বাবা বলে চিৎকার করে উঠে । সকালে রাজা মহাশয় রানীকে স্বপ্নের কথা জানালে, রানী মা উচ্চস্বরে হাউমাউ করে কেদে বলে আমার ছেলে না জানি কোথায় কোন বিপদের মধ্যে পড়ে আছে? তোমাকে বলি, ওদের মেনে নাও । আমরা মরে গেলে তো সবকিছু ওদের জন্যই রেখে যাবো। তোমার মান-সম্মান রাজ দরবার সবকিছুকি সাথে নিয়ে যেতে পারবে। পারবে না। তাই মানুষ হয়ে মানুষকে ঘৃনার চোখে দেখনা। এক মানুষ আর এক মানুষকে ঘৃনা বা অহংকারের চোখে দেখলে বিধাতা কষ্ট পায়। ঘৃনাকারীকে বিধাতা পছন্দ করেননা। রানীর এসব কথা শুনে রাজা বলে, ছেলের খোজ করো। দেখ ওরা কোথায় আছে।

 

ওদের সম্পর্ক আমি মেনে নিব। ঐ মেয়েকেই আমি বউমা হিসেবে মেনে নিব। তখন আবার বলে, আচ্ছা দয়ালের মা আসে পাশের লোক জন তো বলবে যে কাঠুরের মেয়ে তোমার ছেলের বউ। তখন তোমার খারাপ লাগবেনা। তখন রানীমা বলে এক কাজ করো, আমাদের উত্তরের ভরতপুর মহকুমায় পাচঁশত একর জমি তুমি আমার নামে লিখে দিয়েছো । সেখানে তুমি মায়াবতীর বাবা-মার জন্য একটি প্রাসাদ করে দাও । এবং ঘোষনা দিয়ে দাও এই পাচঁশত একর জমি পরেশ বাবু কিনে নিয়েছেন। সেখানের লোকজন তো জানেনা সে একজন কাঠুরে। তুমি যেহেতু মান-সম্মান নিয়ে বেশি চিন্তা করছ। এটা করিলে কোন ক্ষতি হবে না। তখন রাজা বলে মায়াবতীর বাবা-মা কি রাজি হবে ? রানী মা বলে দয়ালকে আগে খুজে বের কর। দয়াল ও মায়াবতী রাজি হলে তারা ঠিকই রাজি হবেন। তখন রাজা সকল পেয়াদাদের বলে, তোমরা সর্ব জায়গায় দুত ছড়িয়ে দাও, যে দয়াল আর মায়াবতী যেখানেই থাকুক, তাদের স্বম্মানে রাজ দরবারে ফিরে আনার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য । মায়াবতী ও বুবলীরা নৌকা বাইচ দেখে বাড়ী যাওয়ার সময় কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার কিনে ঘোড়ার গাড়ি চেপে বুবলিদের বাড়ীতে আসে। সেখানে রাত্রীতে দয়াল কুমার ও নির্মল রাত্রী ৯-১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন গল্প করতে থাকে। মায়াবতী ও বুবলি বাড়ীতে রান্নার কাজে বুবলির মাকে সহায়তা করে। রাত্রী সাড়ে সাড়ে দশটার সময় রাত্রের খাবার খেয়ে শোবার প্রস্তুতি নেয় । এখন শোবার সময় ঘটে এক বিপত্তি। বুবলিদের ঘর হলো দুইটি।

 

একটিতে বুবলির মা-বাবা থাকে আর একটি তে থাকে আত্নীয় স্বজন বা বুবলি আসলে তার স্বামীকে নিয়ে থাকে। এখন জুটি হলো দুই জোড়া। এখন মায়াবতী বলিতেছে, বুবলি আমরা চলে যাই মাসি বাড়ীতে। অনেক আনন্দ খাওয়া-দাওয়া হলো, বেশ ভাল লেগেছে । বুবলি বলে তা কিরে হয় ? অনেকদিন পর তাও আবার জামাই নিয়ে এসেছে। তাদের জোড়াজুড়িতে মায়াবতীর না আর টিকল না। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, মায়াবতী আর দয়াল কুমার এক রুমে আর অন্য রুমে বুবলির মা-বাবার সাথে সবাই গাদাগাদি করে শুবে। তখন মায়াবতী বলে, না দিদি তা কি করে হয়? তুমি আর জামাইবাবু এক সাথে ঐ রুমে থাকো। আমরা তো ছোট মানুষ এই রুমে সবার সাথে থাকি। তখন বুবলি বলে, ওরে পাগলি আমরা তো অনেকদিন একসাথে থেকেই আসছি। আর তোরা তো নতুন জুটি। এখন তোদের নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি সময় দেওয়া -নেওয়া দরকার। দয়াল বেচারা নতুন জামাই । ওর একটা মান সম্মান আছে না। তখন মায়াবতী আর দয়াল কুমারকে পৃথক রুমে শোবার এবং বাকীরা সবাই গাদাগাদি করে অন্য রুমে রাত্রী যাপন করিল।

 

সকালে ঘুম থেকে উঠে দয়াল কুমার ও মায়াবতী গোসল সেরে কাপড় পাল্টিয়ে ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খায় । খাওয়া-দাওয়া শেষে দয়াল কুমার –মায়াবতী বুবলির মা-বাবাকে তাদের বাড়ী যাওয়ার নিমন্ত্রন দিয়ে মাসির বাড়ীতে চলে আসে। সেইদিন রাত্রে মাসির নাকি ঘুম হয়নি। মায়াবতী বাড়ীতে আসলে , তার কাছে মাসি বলে, তোরা বাড়ী থেকে যাওয়াতে বাড়ীটা কেমন জানি নি:সঙ্গ মনে হলো। তোরা আজীবন আমার কাছে থাকিস বলে মাসি মায়াবতীকে অনুরোধ করে। আমার ছেলে-পুলে নেই। তোরাই আমার ছেলে-মেয়ে । মায়াবতী বলে সে জন্যই তো ভগবান তোমার কাছে আমাদের পাঠিয়েছে । এখন তোমাদের বাড়ীতেই পড়ে আছি । দয়ালের মা-বাবা যদি কোন দিন মেনে না নেয় ? তাহলে এখানেই থেকে যাব। তোমার তো কিছু জমি জমা আছে। সেগুলো তোমাদের জামাইই দেখাশোনা করিতে পারিবে। মাসি বলে ও হলো রাজার দুলাল।

 

ও কি মাঠের কাজ করিতে পারবে? মায়াবতী বলে , তুমি জান না ও রাজার বেটা ঠিকই কিন্ত ওর রাজপরিবারে মন টেকেই না। সবসময় শুধু আমাদের বাড়ীর পাশে বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত আর পাখি শিকার করতো। রোদ্রের তাপে দেখ না কেমন কালো বর্ণের হয়েছে । মাসি বলে ও বুঝেছি , তাহলে ঐ জঙ্গলে পাখি শিকার করতে গিয়ে আমার বুনজিকে শেষমেষ শিকার করেছে। মায়াবতী বলে তুমি যে না, তোমার মুখে কিছুই ঠেকে না। মাসি তারপর বলে ও বাড়ীতে কি খেয়েছিস না খেয়েছিস। আমি রান্না করেছি আয় একসাথে একটু খেয়ে নিই। তখন ঘরের ভিতর হতে দয়াল বলে মাসিমা এখন আর কোন মতে খেতে পারবো না। (চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর