এস এম সোহাগ রানাঃ তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার এজাজ আহমেদ স্বপন। মহামারী করোনা সংকটকালে তার উদ্যোগ প্রসংসিত হয়েছে সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষের কাছে। করোনায় দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করতে বিগত তিন মাস দৈনিক প্রায় এক হাজার দরিদ্র মানুষকে প্রতিদিন বিনামূলে সবজি বিতরণ করছেন। শহরের শহীদ নাজমুল সরণির সরকারি গার্লস হাইস্কুলের সামনে বিতরণ করা হয় নানা রকমের সবজি। গরীব মানুষ প্রয়োজন মতো কয়েক প্রকার সবজি সেখান থেকে নিয়ে যান প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। করোনা সংকট থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে প্রায় আড়াই মাস সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এ সময় দেশের আপামর দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী নারী-পুরুষ যারা দিন আনে দিনে খায় তারা পড়ে যায় মহাবিপদে। করোনাকালে সরকারি, বেসরকারি ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন মানুষকে চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপন্য বিতরণ করছেন ঠিক তখনই দরিদ্র মানুষের বন্ধু এজাজ আহমেদ স্বপন চিন্তা করেন মানুষের ভাতের সাথে প্রয়োজন তরকারি ও সবজির। তখনই শুরু করলেন গণহারে সবজি বিতরণ কার্যক্রম। সাতক্ষীরা সরকারি গার্লস হাইস্কুলের সামনে সবজি কেন্দ্রে কথা হচ্ছিল ভ্যানচালক আঃ রহমান, মহিবুল ইসলাম, গৃহকর্মী রহিমা সুলতানা, দীনমজুর আলেয়া বেগম, চা দোকানী কুরবান আলীর সাথে তারা জানালেন করোনা সংকটকালে দু’মাস ধরে স্বপন ভাই আমাদের প্রতিদিন তরকারি, শাক-সবজি দিচ্ছেন বিনামূল্যে।
আমাদের যা পছন্দ তাই আমরা এখান নিয়ে যাচ্ছি। অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান, আমজাদ হোসেন, আজাদুর রহমান প্রতিদিন শহরের বাজার থেকে ফিরে যাওয়ার সময়ে সেঞ্চুরী একাডেমি থেকে লাউ, কুমড়া, পুইশাক, পটল, ঢেড়স, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন তরকারী বাসায় নিয়ে যান বলে জানান। গনমাধ্যম অফিসে কর্মরত আবু বক্কর ও মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনাকালিন সময়ে আমরা প্রতিদিন তার দেয়া সবজি রান্না করছি। তিনি এই দূর্যোগে মানুষের পাশে যেভাবে দাড়িয়েছেন তা প্রসংসনীয়। সবাই যখন ছাত্রজীবন শেষে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার গড়তে ব্যাস্ত, এজাজ আহমেদ স্বপন ব্যস্ত তখন তার নিজস্ব সাধ্যের মধ্যে যা আছে তা দিয়ে মানুষকে সেবা করতে। এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ২০০০ সালে বন্যায় সেঞ্চুরী একাডেমির ব্যানারে তিনি রুটি বানানো কর্মসূচি চালু করেন। সেখান থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা রুটি নিয়ে যেতেন। একই সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রি কোচিং, বিনামূল্যে খাতাকলম বিতরণ ও পরীক্ষার ফিস প্রদান করতেন। সেসময়ের কার্যক্রম সাতক্ষীরাবাসি হৃদয় কেড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মহামারী করোনার ছোবলে অসহায় মানুষের পাশে প্রতিদিন সহ¯্রাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তাজা শাক-সবজি। তার এই উদ্যোগে একদিকে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি শাক-সবজি ক্রয় করায় যেমন কৃষক ন্যায্য মূল্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন ঠিক তেমনি অসহায় মানুষ প্রতিদিন বিনামূল্যে শাক-সবজি পেয়ে খুশি।
সেঞ্চুরী একাডেমির মাধ্যমে শুধু সাতক্ষীরা শহরের ৯টি ওয়ার্ডের মানুষই এই সুবিধা ভোগ করেনি পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষজন প্রতিদিন সহযোগিতা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের কাছে তিনি এই সবজি পৌছে দিয়েছেন।৭ এপ্রিল থেকে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি বিতরণ কেন্দ্র করে বিনামূল্যে শাক-সবজি বিতরণ কার্যক্রমটি অব্যাহত রেখেছেন তিনি। প্রতিদিন সাতক্ষীরা পৌরসভা ৯টা ওয়ার্ডসহ পার্শ্ববর্তী লাবসা ইউনিয়ন, নগরঘাটা ইউনিয়ন,আলিপুর ইউনিয়ন, ধূলিহর ইউনিয়ন, ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন ও বৈকারী ইউনিয়ন, বল্লী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে শাক-সবজি বিতরণ চলমান রয়েছে। তিনি করোনা পরিস্থিতির কারনে পাটকেলঘাটার মৌলবীবাজার, আঠারোমাইল, সাতক্ষীরা বড়বাজার থেকে পাইকারি সবজি ক্রয় করেন। এছাড়া সদরের গোবরদাড়ি, ঘুডেরডাঙ্গী, আলিপুর, ভাড়–খালী, মাহমুদপুর, কাসেমপুর, আবাদেরহাটসহ বিভিন্ন ক্ষেত থেকে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করেন। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। তার এই বিনামূল্যে শাক-সবজি বিতারণ কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে শাক-সবজি বিতরন করছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতেও জনসমাগম কমানো অনেকটা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়াও এজাজ আহমেদ স্বপন সাতক্ষীরাসহ উপকুলে আম্পানের গাছের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ছাত্রজীবনের অভ্যাস মতো শুরু করেছেন গাছের চারা বিতরণ। তিনি জেলাব্যাপি এক লক্ষ ফলজ ও বনজ গাছের চারা বিতরণ ও রোপন করার কাজ শুরু করেছেন। ’৯০ এর দশকে সাতক্ষীরায় শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন ছিলেন, তুখোড় ছাত্রনেতা। তিনি জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য, জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি ৮০ ও ৯০ এর দশকের সাবেক ছাত্রনেতাদের সংগঠিত করে গড়ে তুলেছেন ‘সাবেক ছাত্রনেতা সমন্বয় কমিটি’। গত নির্বাচনে তাদের ভুমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। এই সংগঠনের তিনি সাতক্ষীরার সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ও ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারকারী অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এজাজ আহমেদ স্বপন মনে করেন মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাড়ানো এবং মানুষের যে কোনো দূর্যোগে এভাবে পাশে দাঁড়াতে চান।