নীলফামারীতে ট্রেন ও ইটবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ট্রাকের হেলপার সাকিল(২২) ঘটনাস্থলে নিহত হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে ডোমার উপজেলার চিলাহাটি রেলষ্টেশনের অদুরে কাজিরহাট অরক্ষিত লেভেন ক্রসিং এ। এ ঘটনায় আহত হয় ২ জন। এরা হলো ট্রাক চালক হাসান মাহমুদ(৩৫) ও ইট ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান(৪০)। তাদের ডোমার উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ট্রেনের কোন যাত্রীর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই দুর্ঘটনার ফলে চিলাহাটি, ডোমার ও নীলফামারী হয়ে দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। চিলাহাটি রেলষ্টেশনে আটকা পড়েছে খুলনাগামী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস।
প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল বসুনিয়া জানান, নওগাঁ থেকে ছেড়ে আসা ইটবোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট-২২-৮১৮৫) কাজিরহাট লেবেল ক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনা মেইল ট্রেনটি খুলনা অভিমুখে যাচ্ছিল। ওই লেবেল ক্রসিংটি অরক্ষিত। সেখানে কোন গেটম্যান নেই। সেখানে রেলওয়ে বিভাগের সাইডবোর্ড রয়েছে গেটম্যান নেই-দেখে শুনে চলাচল করুন। এ অবস্থায় ইটের ট্রাকটি লেবেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় ওই ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে নিহত হয় ট্রাকের হেলপার সাকিল ও আহত হয় ট্রাক চালক ও ইটব্যবসায়ী সহ ২ জন। ট্রাকচালক ও হেলপারের বাড়ি নওগাঁয়। আর ইটব্যবসায়ীর বাড়ি বোদাপাড়া কাজিরহাটে। সে ইট এসে গ্রামে ইট বিক্রির ব্যবসা করে।
চিলাহাটি রেলষ্টেশন মাষ্টার আশরাফুল ইসলাম জানান, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায় খুলনাগামী “খুলনা মেইল” ট্রেনটি। এরপর ৭ মিনিট পর খবর পাই চিলাহাটি থেকে ৫ কিলোমিটার অদুরে কাজিরহাট লেবেল ক্রসিং এ একটি ইটবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে ট্রেনটির সংঘর্ষ হয়। তিনি জানান, পার্বতীপুর থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন এলেই উদ্ধার কাজ শুরু হবে। সকাল পনে ১১টা পর্যন্ত উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন না পৌছায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি। ফলে এই রুটের সঙ্গে সারা দেশের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
উল্লেখ যে গত ২০১৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাত সারে ৯টায় নীলফামারীর ঢেলাপীর নামক স্থানে অরক্ষিত লেবেল ক্রসিং এ আন্তঃনগর নীলসাগর ট্রেনের সঙ্গে সৈয়দপুর থানা পুলিশের পিকআপের সংঘর্ষ হয়েছিল। সে সময় ৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং থানার ওসি সহ ৮ জন আহত হয়েছিল।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের একটি সুত্র মতে, খুলনা,রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ নিয়ে গঠিত রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে অরক্ষিত অবস্থায় চালু রয়েছে সাত শতাধিক বৈধ লেভেল ক্রসিং। সেই সাথে আছে আরও প্রায় সাড়ে ৩০০ অবৈধ ক্রসিং। এসব অরক্ষিত ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। রেলের পশ্চিমাঞ্চলে অনুমোদন থাকা ৭১৫টি লেভেল ক্রসিং গেটম্যান ছাড়া চলছে। এগুলোর সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া রয়েছে। আর বৈধতা না থাকা ৩৩৯টি ক্রসিংয়ের সামনে সেই সতর্ক বার্তাও নেই। এতে বিভিন্ন যানবাহনকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেললাইন পার হতে হয়।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে লেভেল ক্রসিং রয়েছে এক হাজার ৩৪টি। এর মধ্যে ৩১৯টিতে গেটম্যান আছে। বাকিগুলোতে আপাতত গেটম্যান নেই। এসব ক্রসিং পারাপার হতে হয় নিজ দায়িত্বে। তবে ২০১৫ থেকে বাস্তবায়িত প্রকল্পের আওতায় এসেছে ৩২৬টি ক্রসিং। অনুমোদন পেয়েছে ৫৩টি অবৈধ ক্রসিং। এছাড়া ২০৪টি ক্রসিংয়ে দেয়া হয়েছে গেটম্যান। প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রত্যেকটি ক্রসিংয়ের মান উন্নয়ন করা হয়েছে।
#চলনবিলের আলো / আপন