নাটোরের গুরুদাসপুরের মশিন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ প্রদানে টাকা নেওয়ার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোববার ২২ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগটি দাখিল করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এর আগের দিন রাতে বিদ্যালয়ের নিয়োগ স্থগিত ও দুর্নীতিবাজদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি এখন এলাকায় টপ অব দি টাউনে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম চলে আসছে। টাকার বিনিময়ে মশিন্দা চরপাড়ার বিএনপির একজনকে আয়া নিয়োগ দেয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী ওই বিদ্যাপীঠের মান অক্ষুন্ন রাখতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের প্রতি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হোসেন লাবু বলেন, স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির লোককে নিয়োগ না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। গত ১৩ জুলাই মশিন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সৃষ্টপদে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মি, একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তা কর্মি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৭ তারিখ আবেদনের শেষ সময় ছিল। এরমধ্যে পরিচ্ছন্ন কর্মি নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। নিয়োগ প্রদানে স্বচ্ছতার প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক বলেন, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে স্কুলের নিরাপত্তা কর্মি এবং আয়া পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ না হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে একজনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সে একজন গরিব চা বিক্রেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই চা বিক্রেতা জানান, নাইটগার্ড পদে ছেলের চাকরির জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাকরি হয়নি। পরে বিভিন্নভাবে চাপ দিলে ওই টাকা ফেরত পান তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, মশিন্দা হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটি আগে থেকেই ব্যতিক্রম। অর্থের বিনিময়ে কোনোদিন কোনকিছু করেনি। এর আগেও অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এবারই কিছু দুস্কৃতিকারী আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সরদার জালাল উদ্দিন বলেন, আসন্ন মশিন্দা ইউপি নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ায় একটি কুচক্রী মহল সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
এদিকে মশিন্দা ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাবলু ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক স্বপন মোল্লা বলেন, স্কুলের তিনটি সৃষ্টপদে আবেদনকারী চারজনের কাছে থেকে টাকা নেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি। টাকার বিনিময়ে বিএনপি পরিবারের লোককে স্কুলে নিয়োগ দেয়াসহ নিয়োগ না হওয়ায় একজনের টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিযুক্তরা। এর প্রমাণও আছে। অবিলম্বে স্কুলে নিয়োগ স্থগিত চেয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় হওয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের আবেদন পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত জানার পর একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও স্যারের কাছে দাখিল করা হবে।
#চলনবিলের আলো / আপন