দেশে করোনা প্রতিরোধে সরকারের কর্মকান্ড যখন প্রশংসিত ও উর্ধ্বমুখী হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে সরকারের প্রশংসিত কর্মকান্ডকে ব্যাহত ও সরকারকে বিতর্কিত করতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় স্বাস্থ্য সহকারী জামায়াত নেতা আব্দুল আলীম বংকিররাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে ২০০ জনের মাঝে গণটিকা কার্যক্রমের দায়িত্ব পালনকালে সরকারি বরাদ্দকৃত প্রতি এ্যাম্পোল করে টিকা (ভ্যাকসিন) দুইজনের শরীরে প্রয়োগ না করে সেই প্রতি এ্যাম্পোল টিকা গড়ে ৩ থেকে ৪জনের শরীরে প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ২শ লোকের জন্য বরাদ্দকৃত এ্যাম্পোল টিকা ৪শ ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা হয়।
গত ৮ আগস্ট উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বংকিরাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল আলীমের দায়িত্বরত বুথে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে ওই কেন্দ্রে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল আলীম জনরোষানলের শিকার হয়ে লাঞ্ছিত হন। এসময় উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে স্থানীয় মাতব্বর হাসু সরকার ও আব্দুল খালেক সরকার স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল আলীমকে উদ্ধার করে। পরে উত্তেজিত জনতাসহ ভুক্তভোগিরা বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেনকে অবহিত করলেও তিনি তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। এছাড়াও আব্দুল আলীমের এ সকল ভূলগুলো ধরিয়ে দেয়ায় ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আবু তাহের ফারুকীকে তিনি কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।
স্থানীয়দের সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় গত ৮ আগস্ট সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বংকিরাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩টি বুথের মাধ্যমে গণটিকা দেওয়া হয়। প্রতিটি বুথ থেকে টিকা নিতে পারবে মোট ২০০ জন। এদিকে একটি বুথের দায়িত্নে স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল আলীম প্রতি এ্যাম্পোল করে টিকা ২ জনের শরীরে প্রয়োগ না করে তা ৩ থেকে ৪জনের শরীরে প্রয়োগ করেছেন। এভাবে তিনি ২০০ জনের বিপরীতে বরাদ্দকৃত গণটিকা প্রায় ৪০০ জনের শরীরে প্রয়োগ করেছেন। এবিষয়টি পরে জানাজানি হয়ে পড়ায় ভুক্তভোগিসহ স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল আলীমকে ঘিরে ফেলে এবং লাঞ্ছিত করে। এসময় উত্তেজিত জনতার কবল থেকে তাকে স্থানীয় মাতব্বর হাসু সরকার ও খালেক সরকার উদ্ধার করে পরিবেশ শান্ত করতে তাকে স্কুলের রুমের মধ্যে আবদ্ধ রাখে। এ ঘটনায় সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় এবং ভুক্তভোগিদের মাঝে সঠিকভাবে টিকা প্রয়োগ না করে ক্ষতিসাধন করায় তার বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি। এঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি তদন্তপুর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ভুক্তভোগিরাসহ এলাকাবাসী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ আবু তাহের ফারুকী বলেন, আমি ভুল ধরিয়ে দেওয়ায় এবং প্রতিবাদ করায় স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল আলীম আমাকে কেন্দ্র থেকে জনসম্মুখে বের করে দিয়েছে।
এব্যাপারে বংকিরাট কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরত সেবাদানকারী ও মোহনপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারী এবং বংকিরাহাট উচ্চ বিদ্যালয় টিকাদান কেন্দ্রের একটি বুথের দায়িত্বে থাকা আব্দুল আলীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, টিকা প্রদানকালে যখন বাইরে উত্তেজনা চলছিল তখন আমি কেন্দ্রের রুমের ভিতর ছিলাম। এটি মানসম্মানের বিষয়। কাজেই তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, এধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কিন্তু এ বিষয়টি আমাকে কেউ বলেনি, তবে দায়িত্ব অবহেলার কারণে এঘটনাটি সংঘটিত হয়ে থাকলে এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে পত্রিকায় কোন সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্ত পুর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
#চলনবিলের আলো / আপন