ঘাতকরা ক্ষুদিরাম থেকে শুরু করে ২১ আগস্ট পযর্ন্ত সবসময় আগস্ট মাসকে তারা রক্তহলি খেলার মাস হিসাবে বেঁচে নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যার পর, অপশক্তিরা বাংলার বুক থেকে জাতির পিতার নাম ধুয়ে মুছে ফেলে দিবার ব্যর্থ চেষ্টা করেন, বহু বছর ধরে। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসে নিঃশ্বাস ফেলা মীরজাফরা তাঁকে হত্যার নীল নকসা আঁকে। খন্দকার মোশতাকরা বঙ্গন্ধুর আস্হাভাজন ছিলেন। সেটাই ছিল বঙ্গবন্ধুকে সহপরিবারে হত্যা করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
বর্তমানে ১৫ আগস্ট মানে কাঙালি ভোজ, কালো বেইজপরাই সীমাবন্ধ। ১৫ আগস্টের তাৎপর্য নিয়ে কোন দলীয় নেতাকর্মী ভাবেননা। মৌসুমি নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুনে বানানের ভুল সহ ইতিহাস বিকৃত অনেক লেখাই প্রমাণ করে তারা মোশতাকের উত্তরসূরি। অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি টানিয়ে সংগঠনের নামের পরে ” লীগ “সংযুক্ত করে ব্যাক্তি সুবিধা নিচ্ছে। ১৫ আগস্ট মানে কি মোশতাকদের প্রশ্রয়দাতা দিবস? ১৫ আগস্ট মানে কালো পান্জাবী পরে, হৈ চৈ করে কাঙালি ভোজ বিতরণ না?
এই দিনে বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানকে সহপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকান্ডে বাংলার আকাশ বাতাস কম্পিত হয়েছিল। তাই এই দিবসের তাৎপর্য ও মর্মবাণী বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত প্রেমিক ছাড়া কেউ অনুধাপন করতে পারবেননা। বঙ্গবন্ধু মানে বাঙালী জাতির অধিকার, স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু মানে বাঙালী জাতির সমস্ত চাওয়ার প্রতিবিম্ব, বঙ্গবন্ধু মানে সোনার বাংলা, বঙ্গবন্ধু মানে শোষিতদের মুক্তির স্লোগান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে বিশ্বের ক্যারিশম্যাটিক লিডারকে হত্যা করা, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে নির্য়াতীত, নিপিড়ীত মানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠকে রোদ্ধ করা বা চিরতরে স্তব্ধ আর সোনার বাংলা স্বপ্নকে হত্যা করা।
১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা তাঁকে সহপরিবারে হত্যা করেও তাদের রক্তের পিপাসা মিটেনি । পরবর্তীতে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালে ২৬ সেপ্টেম্বরে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল স্বরূপ কালো আইন জারি ( ইডেমনিটি অধ্যাদেশ) করে বিশ্বের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিচারকে আইনের শিকলে বেঁধে ফেলেন। সেই সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রেরণাকারী স্লোগান ” জয় বাংলা “কে পরিবর্তন করেন। কিন্তূ বঙ্গবন্ধু প্রেমিক মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও জয় বাংলা স্লোগানকে শিকল পরাতে পারেননি তারা। তখন তাঁরা স্লোগান দিতেন ” ফারুক রশিদ ভাই ভাই এক দাড়িতে ফাঁসি চাই “
১৯৭৫ সালে ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের প্রফেসর নূরুল আমিন এবং ঢাবির শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড.ম আখতারুজ্জামান সহ একটি লিফলেট তৈরী করেন ” তোমরা যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সহযোগীতা করবে তাদের সবংশে নিবংশ করা হবে “। এটা হাতের লেখা লিফলেট ছিল। সেটা তারা বিভিন্ন মন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে সমগ্র বাংলাদেশ থমকে গিয়েছিল। বর্জাহত মানুষের মতো অসাড় হয়ে গিয়েছিল বাংলার শোকাহত মানুষ। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু খুনীরা দেশে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। সেই সময় ছিলনা, ছিল অসময়ের বর্জধ্বনি। তখন তাঁরা নিজ হাতে লিখে লিফলেট বিতরণ করেছিলেন। কারন তাঁরা ১৫ আগস্টের তাৎপর্য অনুধাপন করতে পেরেছিলেন।
পরবর্তীতে ৮০, ৯০ দশকে আমরা যাঁরা রাজপথে জাতির পিতাকে সহপরিবারে হত্যার বিচারের দাবীতে জয় বাংলা স্লোগান মুখে নিয়ে ঘাতকদের দূর্গ কাঁপিয়েছিলাম। ইডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবীতে জেল – জুলুম নির্যাতনকে নিত্যদিনের সঙ্গি করেছিলাম। তাঁদের মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাঁর আদর্শকে স্লোগানে, মিছিলে বাংলার আকাশে, বাতাসে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা তাঁরা মিলে হার না মানার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ছাত্রলীগের প্রাচীরকে শক্ত করেছিলাম। সেই ত্যাগীদের মনে হয়তোবা ১৫আগস্টের মর্মবাণী বেজেছিল। যদিও বর্তমানে ত্যাগী শব্দটা অবহেলীত! অবহেলীত ত্যাগীদের একটাই শান্তনা ১৫ আগস্টের খুনীদের বিচার হইছে।
দল ক্ষমতা থাকার পরও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙ্গে, পুলিশ পাহাড়ায় রাখতে হয় জাতির পিতার প্রতিকৃতি! দল ক্ষমতায় না থাকা অবস্হায় কেউ পোষ্টার ছিঁড়ার সাহসও পেত না। ” দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো “। সারা দেশে ” লীগ ” নামে সংগঠনের অভাব নাই, নেতাকর্মীর অভাব নাই। বর্তমান পরিস্হিতিতে মনে হয় সবাই জয় বাংলার লোক। শুধু বঙ্গবন্ধু প্রেমিকের বড় অভাব! বর্তমানে ক্ষমতার টানে অনুপ্রবেশকারী দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। তারা ১৫ আগস্ট মানে মনে করেন কালো রূপ ধারন করা আর হৈ হৈল্লা করে কাঙালি ভোজনের আয়োজন।কালোর মধ্যেই কালসাপ গুলোকে চিহৃিত করে দলকে মোশতাক মুক্ত করতে হবে।
১৫ আগস্ট শুধু একটা হত্যাকান্ড নয়, একটা স্বাধীন জাতিকে পরাধীন ও সাম্প্রদায়িক করার চক্রান্ত ও বটে।
#চলনবিলের আলো / আপন