সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আগৈলঝাড়ায় সন্ত্রাসী সাঈদের নির্যাতন থেকে মুক্তি চেয়ে দুই গ্রামের পাঁচ শতাধিক সংখ্যলঘূ পরিবারের আর্তি

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১, ১১:৩৪ অপরাহ্ণ

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সেই সন্ত্রাসী আবু সাঈদের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বিপুল হাজারীর দাদা ও ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অবনী সরকার বাদী হয়ে অবশেষে শনিবার রাতে আগৈলঝাড়া থানায় আবু সাঈদসহ তার ৪ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে, মামলা নং-৩ (৭.৮.২১)।

মামলার সত্যতা স্বীকার করে থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আলী হোসেন আসামীদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে শনিবার রাত থেকেই অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
থানেশ্বরকাঠী গ্রামের মৃত শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে শনিবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

থানেশ্বরকাঠী গ্রামে আবু সাঈদের হাতে জিম্মি ২শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের শিশু ও নারী পুরুষ সদস্যরা সাঈদ ও তার বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনের বর্নণা দিয়ে তার বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পেতে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে সরকারের কাছে স্বাভাবিকভাবে বসবাসের করুন আর্তি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে রবিবার দুপুরে আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত ও উজিরপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তের রত্নপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা থানেশ্বরকাঠী গ্রাম পৌঁছলে ওই গ্রামের নির্যাতিত নারী-পুরুষ, শিশু বৃদ্ধরা একত্রিত হয়ে অভিযোগে জানান- “সাঈদের নির্যাতনের হাত থেকে হয় আমাদের বাঁচান, না হয় অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিন”। আমরা আর মাদকাসক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আবু সাঈদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে চাই না। তাদের বর্নণায় সাঈদের হাত থেকে রেহাই পায় না গ্রামের কোন লোক। কারনে-অকারণে, যখন-তখন তার হামলার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

স্থানীয় মৎস্যজীবি দীপংকর হালদারের বাড়িতে জড়ো হন সাঈদের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী পুরুষেরা। সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফরহাদ তালুকদার, রতœপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর আশ্রাফ আলীর উপস্থিতিতে ওই বাড়ির দীপংকরর হালদার (৩২), মঞ্জু জয়ধর (৫৪), বিধবা জীবনী মল্লিক(৫০), গৃহবধু রসনা সরকার (২৫), সরিকা মল্লিক(৫০), দুলি রানী হালদার (৪৮), সত্য রঞ্জন হালদার (৬৫), চা দোকানী অনীল হালদার (৩০), বুদ্ধিশ^র সরকার (৬৪), ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নূর ইসলাম চৌধুরী (৫২), মামলার বাদী ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অবনী সরকারসহ (৫৭) গ্রামের ভুক্তভোগী শতাধিক নারী, পুরুষ ও বয়োবৃদ্ধরা সন্ত্রাসী আবু সাঈদ ও তার বাহিনীর সদস্যদের নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের বর্ননা দেয়ার পাশাপাশি তাদের মতো মোহনকাঠী গ্রামের সংখ্যালঘু পাড়ার ৩শতাধিক পরিবারসহ মোট ৫শতাধিক জিম্মি পরিবাররের করুন কাহিনী বর্নণা করেন। সাঈদের নির্যাতন ও মাদক ব্যসার কারণে তার স্ত্রী ৫/৬বছর আগে দুটি সন্তান নিয়ে তার থেকে আলাদা ভাবে বসবাস করছেন।

গ্রামের হিন্দু নারী-পুরুষেরা অভিযোগে বলেন- আবু সাঈদ এহেন কাজ নেই যা সে করে না। স্কুল কলেজে যাতায়াতের পথে ছাত্র-ছাত্রীদের পথ রোধ করে তার কথা শুনতে বাধ্য করে। না শুনলে তাকে মারধর করা হয়।

নারীদের সম্ভ্রমহানী থেকে প্রতিনিয়িত যৌণ নিপিড়নের শিকার হতে হয় তার হাতে। মাঝে মধ্যেই একটি শর্টগান ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় সাঈদ। অস্ত্রের ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পায় না। উজিরপুরের ভবানীপুর থেকে কয়েক বছর আগে এই গ্রামে নতুন বাড়ি করে বসবাস করা মৃত ফজলুল করিমের ছেলে ভ্যান চালক শাহ আলম তালুকদারের বাড়িতে বসে চলে সাঈদ ও তার লোকজনের মাদক সেবনের আসর। শাহ আলমের বাড়িতে অবস্থানের সময়ে পাশে অস্ত্র রেখে নারী নিয়ে ফুর্তির সাথে চলে সাঈদের মাদকের আসর ও ব্যবসা। সাঈদ একবারর‌্যাবের হাতে অস্ত্র সহ গ্রেফতারও হয়েছিল জানিয়ে তার কাজে বাধা দেয়ার কারণে রাস্তার একটি কুকুর মরার ঘটনায় মামলা দিয়ে অনেককে হয়রানী করা হয়েছে। সাইদ এক সময় যুবলীগ করলেও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা সবাই বিএনপি’র ক্যাডার। গ্রামবাসীদের মধ্যে যারাই সাঈদের মাদক সেবন, বিক্রিসহ নেতিবাচক কাজের প্রতিবাদ করেছে তারাই তার হামলার শিকার হয়েছে। সাঈদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার সাহস না পাওয়ায় দুটি গ্রাম ছেড়ে দিনে দিনে তার পরিধি বেড়েছে আশপাশের গ্রামগুলোতেও।

৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নূর ইসলাম চৌধুরী অভিযোগে বলেন- গ্রামের সবাই আবু সাঈদের হাতে জিম্মি। তিনি নিজেও তার হাত থেকে রেহাই পাননি। তাকেও শনিবার বিপুলকে কোপানোর আগে পা কেেেট নেয়ার হুমকি দিয়েছে আবু সাঈদ। শিশু থেকে ছাত্র এমনকি ৬০/৭০বছর বয়সী গ্রামের সবাই তার হামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে সাঈদের হাত এলাকার জিম্মি নারী পুরুষকে মুক্ত করতে আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সাধারণ সম্পাদক অবনীও হয়েছেন হামলার শিকার।

এর আগে শনিবার দুপুরে ইজিবাইক চালক মোহনকাঠী গ্রামের বিনোদ বিশ্বাসের ছেলে প্রতিবাদী যুবক বিপুল বিশ্বাসকে(৩০) রোগী নিয়ে যাবার সময়ে তার গতিরোধ করে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে সাঈদ। ছিনিয়ে নেয়া হয় তার সাথে থাকা নগদ অর্থ ও ইজিবাইক। গত বৃহস্পতিবার (৫আগষ্ট) অকারণে থানেশ্বরকাঠী গ্রামের শুশান্ত বৈদ্যর উপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে সাঈদ। বিপুল ও সুশান্ত বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

অভিযুক্ত সাঈদের বাড়ি গিয়ে এবং তার ফোন (০১৯২০০৫৫৭৮২) বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।ইউনয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মীর আশ্রাফ আলী বলেন, আবু সাইদ একজন মাদকাসক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী যেই হোকে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গালাম ছরোয়ার জানান, সাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাকে ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সাঈদকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এন শাস্তি প্রদানের কথা জানিয়েছেন তিনি।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর