সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আগৈলঝাড়ায় সাবেক যুবলীগ নেতা আবু সাঈদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দু’টি হিন্দু গ্রামের বাসিন্দারা জিম্মি

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
আপডেট সময়: শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১, ৮:৩৭ অপরাহ্ণ

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অবতীর্ণ হয়েছে রত্নপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ মোহম্মদ নুরুদ্দিন। এলাকায় সে সাঈদ নামেই পরিচিত। সাঈদের নির্যাতন আর অত্যাচারের বর্ণনা শুনতে শুনতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরাও অতিষ্ট এবং বিব্রত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রত্নপুর ইউনিয়নের সুন্দরগাঁও এবং থানেশ^রকাঠী গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত পাড়া গুলোর নারী পুরুষের কাছে সাঈদ এখন এক মুর্তিমান আতংক। মাদকাসক্ত সাঈদের রাতের শিকার হিন্দু পরিবারের নারী লিপ্সার বাধা হয়ে দাড়ানো যুবকেরা দিনের আলোয় তার হামলার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়িত।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে ইজিবাইক চালক মোহনকাঠী গ্রামের বিনোদ বিশ^াসের ছেলে প্রতিবাদী যুবক বিপুল বিশ^াসকে(৩০) রোগী নিয়ে যাবার সময়ে তার গতিরোধ করে দা দিয়ে কুপিয়ে তার দু’হাত মারাত্মক জখম করেছে সাঈদ। শুধু হামলাই নয়; বিপুলের সাথে থাকা ২৫শ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তার ইজিবাইকটিও আটকে রেখেছে সাঈদ। শনিবার দুপুরে বিপুলের উপর হামলার ঘটনায় সাঈদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছন তার পরিবার।

এর আগে বৃহস্পতিবার একই অপরাধে তার গ্রাম সুন্দরগাঁও এলাকার শুশান্ত বৈদ্যর উপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেছে সাঈদ। সাঈদের হামলা থেকে বাদ যায়নি রত্নপুর ইউনিয়নে তার নিজের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অবনী সরকারও। সাঈদের হামলার শিকার হয়েছে প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা কৃষ্ণ কান্ত বৈদ্যসহ ওই গ্রামের অন্তত শতাধিক লোকজনকে মারধর করে জখম করেছে এই সন্ত্রাসী সাঈদ। এসব ঘটনায় থানায় মামলা তো দুরের কথা; তার বিরুদ্ধে কারো সাহস নেই টু শব্দ করার। যারাই মুখ খুলেছে বিনা কারনে তাদের পরিবারের লোকজনই সাঈদের হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছে। হামলা থেকে রেহাই পায়নি তার পরিবার সদস্যরাও। সাঈদের হামলার শিকার বিপুল বিশ্বাস ও সুশান্ত বৈদ্যকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে মোহনকাঠী ও সুন্দরগাঁও গ্রামের ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন- সাঈদ একজন নিয়মিত মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা। সে এলাকার ছাত্র ও যুব সমাজকে তার মাদক ব্যবসা ও সেবনে জড়িত করতে গ্রামের বাড়ি বাড়ি চষে বেড়ায়। তাকে দেখামাত্র বাড়ির পুরুষেরা আত্মগোপনে গেলে সেই সুযোগে সাঈদ বাড়ি থাকা ঝি-বউদের সাথে বেপরোয়া আচরণ করে। এমনকি নারীদের শ্লীলতাহানী ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে সটকে পরে। তার লোলুপ দৃষ্টিতে পরে অনকে নারী হারিয়েছেন সম্ভ্রম। নারী আসক্তির কারনে সম্প্রতি সাঈদকে মারধর করা হলে তার জের ধরে এখন হামলা চাীরয়ে যাচ্ছে সাঈদ।

থানেশ^রকাঠী গ্রামের সত্য রঞ্জন হালদার (৬৬), বুদ্ধিশ্বর সরকার (৬৪), নিগাম সরকার (৩৫), দিপংকর হালদার (৩৫), অমল রায় (৬০), নির্মল সরকার (৭০) বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরেও সাঈদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ওই গ্রামের লোকজন মনে হয়- অন্য কোন দেশে বসবাস করছেন। যেখানে আইন শৃংখলা বাহিনীর কোন দৃষ্টি পরছে না। গ্রামবাসীদের মধ্যে যারাই সাঈদের মাদক সেবন, বিক্রিসহ নেতিবাচক কাজের প্রতিবাদ করেছে তারাই তার হামলার শিকার হয়েছে। সাঈদের মাদকের ছোবল থেকে বাচতে অনেক যুবকেরাই গ্রাম ছেড়েছেন। সাঈদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার সাহস না পাওয়ায় দুটি গ্রাম ছেড়ে দিনে দিনে তার পরিধি বেড়েছে আশপাশের গ্রামগুলোতেও।

গ্রামের সাধারণ কৃষক মৃত শাহাজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে আবু সাঈদ মো.নুরুদ্দিন। এক বোন চার ভাইয়ের মধ্যে সাঈদ সবার ছোট। বড় ভাই অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ, মেঝ ভাই একটি বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত, সেঝ ভাই গার্মেন্টেসএ কর্মরত। সাঈদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে জন্য তাদের সাথেও তেমন সু-সম্পর্ক নেই। ছাত্র জীবনে ভাল কর্মী হবার সুবাদে পাশ^বর্তী উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া ডিগ্রী কলেজের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে রতœপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাকের দ্বায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে সাঈদ। বর্তমানে যুবলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ওই পদের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় নিজের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নিজেকে ভাসিয়ে দেয় নেশার জগতে। নিয়মিত মাদক সেবনের কারনে এক সময়ে জুটে যায় তার অনেক অনুগামী। এসকল অনুজদের মাধ্যমে মাদক সেবন থেকে নিজেই জড়িয় পরে মাদক ব্যবসায়। সাঈদের সহযোগী প্রিন্স, তাজিম, কাইয়ুম, সাজ্জাদসহ অনেকের মাধ্যমে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে। নিজের অবস্থান জানান দিতে মোহনকাঠী কলেজ রোডে মাঝে মধ্যে চলে সাঈদের দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রর মহড়া।

এব্যাপারে অভিযুক্ত সাঈদের ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সাইদুল সরদার বরেন, সাঈদের বেপরোয়া, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দল বিব্রত। কমিটি মেয়াদোত্তীণ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। তবে তার বিষয়টি দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনা করে একটা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সাঈদের মাদকাসক্তির কারনে অত্যাচার, নির্যাতনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন- তার নির্যাতন ও হামলা থেকে ওই এলাকার কেউ রেহাই পায় না। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত দুটি গ্রামের লাকজনকে সে প্রায় জিম্মি করে রেখেছে। বর্তমানে সাঈদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আগৈলঝাড়া থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করেনি কেউ। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর