সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আগৈলঝাড়া আলোচিত শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহার রহস্যজনক মৃত্যুর জট খুলেছে স্বাক্ষী থেকে চার্চশীটে আসামী হলেন নোহার শিক্ষক সুমন পাইক

রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১, ৫:০১ অপরাহ্ণ

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় আলোচিত শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহার রহস্যজনক মৃত্যুর জট খুলেছে। “শিক্ষকের বেত্রাঘাত ও প্ররোচনায়ই আত্মহত্যা করেছে” স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর ৩য় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহা।

আদালতে গ্রহন করা অভিযোগপত্র সম্পর্কে আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামান পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট, সাক্ষ্য প্রমান শেষে প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে নোহার স্কুলের শ্রেণি শিক্ষক উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের মো. আব্দুল লতিফ পাইকের ছেলে শফিকুল ইসলাম সুমন পাইককের বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষার্থী নোহার আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন, যার সিএস নং-৪৭।

আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের সুমন মিয়া’র দশ বছরের শিশু কন্যা নুশরাত জাহান নোহা স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

নোহাকে তার দাদা আব্দুর রহিম কিছু সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথা জানাজানি হলে নোহার মৃত্যুর পরে অভিযোগের তীর ছিল নোহার সৎ মা ঝুমুর বেগম, ফুফু লিপি বেগমের দিকে।

নোহার রহস্যজনক মৃত্যুর পরে বিচারের দাবিতে উপজেলাসদরে পোষ্টারিংসহ নোহার নিজ এলাকায় বানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলার আলোচিত মামলা হিসেবে এই মামলাটি মনিটরিং করেন তৎকালীন পুলিশ সুপার। তবে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও অভিযুক্ত শিক্ষক গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিশু নোহার পরিবার সদস্যরা।

থানা ও আদালতের একাধিক এজাহার, স্থানীয় সূত্র ও আদালতে দাখিল করা চার্জশীট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর করোনার মধ্যে সরকারের আইন অমান্য করে নোহার স্কুলের মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রেণি কক্ষে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ওই পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার্থী নোহা ৩০ মার্ক পেয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুলের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক নোহাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ক্লাশ রুমে গালমন্দ করে এলোপাথারী বেত্রাঘাত করে আহত করেন।

নোহা স্কুল থেকে বাড়ি গিয়ে শিক্ষকের মারধর ও গালমন্দ সইতে না পেরে ঘরের দোতলায় আড়ার সাথে নিজের ওড়নার সাথে গামছা জোড়া লাগিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় নোহাকে তার বাবা উদ্ধার করে তাৎক্ষনিক পয়সা আদর্শ জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক নোহাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মেয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নোহার বাবা সুমন মিয়া নোহার স্কুল শিক্ষক সুমন পাইককে অভিযুক্ত করে ১০ সেপ্টেম্বর আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নং-৪ (১০.৯.২০)। মামলা দায়েরের পরেই আত্মগোপনে চলে যায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইক।

নোহার বিদ্যালয় ম্যানেজিংক কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন ১২ সেপ্টেম্বর পরিচালনা কমিটির এক জরুরী সভায় মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইককে চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রলোভনে নোহার পরিবারের সাথে আপোষ রফার চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়।

অন্যদিকে শিশু নোহাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে নোহার গর্ভধারিনী মা তানিয়া বেগম নোহার জন্মদাতা পিতা তার সাবেক ¯^ামী সুমন মিয়া, সুমনের চতুর্থ স্ত্রী (নোহার সৎ মা) ঝুমুর জামান এবং সুমনের বিবাহিত বোন লিপি বেগমকে আসামী করে ১৪ সেপ্টেম্বর বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার এমপিও নং-৬৩। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শাম্মী আক্তার ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলাটি নথিভ‚ক্ত করা এবং ওই পর্যন্ত নথির কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

প্রসংগতঃ ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট সুমন মিয়া তানিয়া বেগমকে তালাক দিলে তানিয়া অন্যত্র বিয়ে করে ঢাকায় বসবাস করে আসছে। তার গর্ভজাত সন্তান নোহা বাবা সুমন মিয়ার কাছে থেকে লেখাপড়া করতো। তানিয়ার আদালতে দায়ের করা মামলায় থানায় দায়ের করা নোহার বাবা সুমন মিয়ার মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত শিক্ষক সফিকুল ইসলাম সুমনসহ সাত জনকে স্বাক্ষী করেছিলেন।

শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হওয়ায় বিচার বিবঅগের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানিয়েছেন নোহার বাবা সুমন মিয়াসহ নোহার সহপাঠী ও গ্রামের সাধারন লোকজন।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর