সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

রোমান্টিক প্রেমের গল্প মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (৬ষ্ঠ পর্ব) -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০, ৪:২৮ অপরাহ্ণ

মায়াবতী শুধু কেদেই যাচ্ছিল। দয়ালের পরনে যে মেয়ে মানুষের পোষাক পড়া সেদিকে সে মোটেই খেয়াল করেনি। তার দাদীমা ঘরে ঢুকে বলে, এই মায়াবতী তোর কোন বান্ধবী এসেছে যে, তার সাথে কান্নাকাটি করছিস কেন? মায়াবতী বলে কোথায় বান্ধবী দেখছো এটা তোমার নাত জামাই না। কি? আমি ভুল দেখছি ? মেয়েদের পোষাক পড়ে থাকতে আমার নাত জামাইয়ের বয়েই গেছে । তখন মেয়ের পোশাক শুনে মায়াবতী ভাল করে দয়ালের দিকে নজর করে দেখে সত্যিতো সে মেয়েদের পোষাক পড়ে এসেছে। তখন মায়াবতী বলে তুমি এসব পড়ে এসেছো কেন? তখন দয়াল বলে তাদের বাড়ীতে তাকে জোরপুর্বক আটকিয়ে রেখেছিল। বাড়িতে কবিরাজ নিয়ে এসে আমাকে ঝাড়ফুক দেয়ার কথা ছিল। তাইতো আমি আমার মাসতাতো বোনের কাপড় পড়ে পেয়াদের চোখে ধুলো মেরে চলে এসেছি। ঝাড় ফুকের কথা শুনে মায়াবতীর দিদিমা বলে, ও নাত জামাই আমরা গরীব মানুষ হতে পারি। জাদুটোনা করিনা। তুমি আমার নাতনীর তোমার প্রেমে পাগল করার জন্য জাদু করেছো নাকি বলতো। তখন দয়াল বলে, আমার বাবা মা এখন ও কুসংস্খারে ডুবে আছে ।

 

প্রেম-ভালবাসা হয় ঈশ্বর প্রদত্ত। জোর করে কখনও প্রেম-ভালবাসা হয়না। প্রথম যেদিন মায়াবতীকে দেখেছি । তার বুদ্ধিমত্তা ও সাহসীকতা দেখে তার প্রেমে পড়ে গেছি দিদি বুঝলে। তোমার নাতনীর জন্য জাদু করবো কথ থেকে আমি তো তোমার নাতনী প্রেমের জাদুতে আটকে গেছি। সেটা দুনিয়া কোন কবিরাজ দ্বারা ছাড়ানো সম্ভব না। মায়াবতী বলে রাখ তোমার প্রেমের সংলাপ। আগে কাপড় পাল্টাও । আরো লোকজন দেখে ফেললে বলবে কি? মায়াবতী একসেট কাপড় এনে দেয়। দয়াল কাপড় পরিধান করে বলে একটু খাবার দাও । তোমার চিন্তায় ঐবাড়ীতে একটু পানিও গ্রহন করিনাই। তখন মায়াবতী তার খাবার এনে দেয় । দয়াল মায়াবতীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার মুখখানা একদম শুকিয়ে গেছে। কতক্ষন ধরে খাওনা। তখন মায়াবতীর দিদিমা বলে তুমি নাই তাই খায় নাই। এখন দুজন প্রেম কর আর খাবার খাও। দয়াল একমুঠো খাবার মায়াবতীর মুখে তুলে দেয় । মায়াবতী খেতে চায় না বলে তুমি আগে খাও তারপর আমি খাবো। তারপরও দয়াল তার মুখে খাবার তুলে দেয় ।

 

আবার মায়াবতী একমুঠো খাবার দয়ালের মুখে তুলে দেয় । এভাবে তারা খাওয়া-দাওয়া করে। তখন মায়াবতীর চাচা এসে বলে, পেয়াদা মারফত শুনতে পারলাম। রাজা মহাশয় নাকি মায়াবতীর নিকট হতে দয়ালকে ছাড়াছাড়ি করিবে। এর জন্য খুনোখুনিও হতে পারে বলে রাজ দরবারে হুমকি ধামকি করতে দেখা গেছে। মায়াবতীর চাচা পরেশ কে বলে ওদের এবাড়ীতে রাখা তো নিরাপদ হচ্ছে না। তখন পরেশ বলে তাহলে এক কাজ করা যাক চন্ডিপুর মায়াবতীর মাসীর বাড়ীতে রেখে আসলে বোধ হয় ওরা নিরাপদে থাকতে পারবে। চন্ডিপুর অন্য রাজ্যের অধীন একটি পাহাড়ী গ্রাম। ওখানে চোর ডাকাত পালিয়ে থাকলে ও নিরাপদ থাকে। সেখানে রাজার পেয়াদারা দিনের বেলায় প্রবেশ করিতে ভয় পায়। পরেশ তার কথামত তার ছোট ভাইয়ের সাথে দয়াল আর মায়াবতীকে চন্ডিপুর পাঠিয়ে দেয় । চন্ডিপুর যাইতে সেখান হতে তিনটি বড় বড় নদী ও চারটি গ্রাম পাড়ি দিয়ে যাইতে হয় । প্রায় দুইদিন এক প্রহর লেগে যায় সেখানে যেতে। তারা দুইদিনের শুকনা খাবার নিয়ে রওনা হয় । প্রথম নদীতে পার হওয়ার সময় সে বড় নৌকায় যে বখাটে বনমালী রয়েছে, তারা সেটা খেয়াল করেনি। মায়াবতী ও তার চাচা নৌকার মাঝ খানে বসে আছে ।

 

দয়াল একটু সাহসী বিধায় সে নৌকার কানিতে বসে হাত দিয়ে পানি নিয়ে খেলা করছিল। দুজন তিন যাত্রীর পাশে বসে ছিল বনমালী । সে দয়ালের উপুড় হয়ে পানি নিয়ে খেলা করা দেখে মনে মনে কু-বুদ্ধি আটছে আর মনে মনে বলছে এখন যদি ওকে ধাক্কা দেয়া যায়। তাহলে সে নদীতে পড়ে যাবে। নির্ঘাত মারা পড়বে। তাহলে তার পথের কাটা ধুর হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ সে দ্রুত এসে দয়ালকে সজোরে ধাক্কা দিল। দয়াল পানিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। কিন্ত রাখে বিধাতা মারে কে? দয়ালের এক পা নৌকার পাটাতোনের নিচে আটকে ছিল । তখন পাশের লোক এসে বনমালীকে কলার ধরে এবং অন্য একজন দয়ালকে রক্ষা করে। তখন দয়ালের চিৎকার শুনে মায়াবতী ও তার চাচা রাম রাম বলে কাছে চলে আসে । তাকে নিয়ে মাঝখানে মায়াবতী বসে পড়ে । তখন নৌকার উপস্থিত যাত্রীরা বনমালীকে মার ধর করে । তারপর তারাই সিদ্ধান্ত নেয় । এ বদমাশকে ওপারে নিয়ে যাবে না। নৌকা ঘুড়িয়ে এই পারে তাকে ফেলে দিয়ে নৌাকা আবার ওপারের দিকে চলে যায় । মায়াবতী দয়ালের শরীরে আদর দিয়ে দিয়ে বলে, তোমাকে বললাম তুমি ওখানে বসো না। তুমি সাহস দেখালে। তোমার যদি কিছু হতো তাহলে আমার কি হতো? তুমি কখনও আমার থেকে দুরে যাবে না। দয়াল বলে তোমার কথা না শুনে আমি ভুল করেছি । আমাকে তুমি সবসময় আগলে রাখবে।

 

নৌকা প্রায় মাঝ পথে , তখন দুপুর খাঁ খাঁ করিতেছে । দয়ালের ক্ষুদাও লেগেছে শরীরে প্রচন্ড চোট লেগেছে । তারা দুপুরের খাবার সেরে নিল। নৌকা কিন্ত চলছে । নৌকাতে মাঝি-মাল্লা রয়েছে পাঁচজন। এক দুজন খাওয়া ধাওয়া করে আর তিন জন নৌকা চালনার দায়িত্বে থাকে। যার কারনে নৌকার কোন বিরাম নেই। কিছু দুর যাওয়ার পর আবার নৌকা যায়না । মানে নদীর বুকে চর জেগেছে । মাঝি বলে গতকাল এখান দিয়ে গিয়েছি । রাত্রের মধ্যোই নদীতে ভাটা পড়ে চর জেগেছে । এখন নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে মাঝি বলিতেছে, নিচে নেমে নৌকায় ধাক্কা দিতে হবে। দয়াল দাড়িয়ে গেছে নামার জন্য । তখন মায়াবতী বলে তুমি নামবেনা। এখানে আরো মানুষ আছে । তখন একজন তার কথা শুনে বলে, আচ্ছা নতুন জামাইতো বড়এর বারন , আপনাকে নামতে হবে না। তখন অন্য সব যাত্রীরা নেমে ধাক্কা দিয়ে নৌকা চর হতে নামিয়ে দিয়ে আবার নৌকায় উঠে। এভাবে চলতে চলতে নদীর ওপার এসে যায় । তখন দয়াল কুমার মায়াবতীকে কোলে করে নৌকা হতে নামিয়ে নেয় । কোলে করে নামিয়ে নেয়া দেখে মায়াবতীর চাচা মুখ চেপে মুচকি হাসি দিচ্ছিল । সে মনে মনে ভাবে তার ভাতিজি একজন সত্যিকারের মনের মানুষই পেয়েছে। রাজ বাড়ীতে স্থান না হলেও তার বরের মনের রাজসিংহাসনে ঠিকই স্থান পেয়েছে । তার পর তারা ঘোড়ার গাড়ি চড়ে রওনা দেয় মহারামপুর গ্রাম পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় নৌকা ঘাটে যাওয়ার জন্য । ঘোড়ার গাড়ী যাওয়ার সময় দেখা যায় রাস্তার পাশে কাশবনের ফুল। সেই ফুল দেখতে কত না সুন্দর লাগছে ? দয়াল বলে এই ভাই একটু গাড়ি দাড় করান বলে, লাফিয়ে নেমে দৌড়ে গিয়ে কাশফুল ছিড়ে নিয়ে এসে মায়াবতীর চুলের খোপায় লাগিয়ে ।

 

বলে তোমাকে অসাধারন লাগছে । মায়াবতীও খুব খুশি হয় । মায়াবতীর চাচা কিন্ত এবার ভাতিজি জামাইয়ের ভালবাসা তার কাছে আধিক্যের মত লাগছে । সে মনে মনে বলছে এক জায়গায় তাড়াতাড়ি যাইতে হবে। সেখানে গাড়ি থামিয়ে ফুল তোলা আবার সদাই কেনা। এসব তো সেখানে গিয়েও করতে পারবে তারা। কিন্ত সে মুখে বলে না। এভাবে তারা দ্বিতীয় নৌকা ও পাড় হয়ে কানপুর পার হয়ে শেষমেষ মায়াবতীর মাসির বাড়ীর নিকট যে নদী সে নদীতে নৌকা যায় ডুবে। তখন মায়াবতীর চাচা আপন প্রান বাচা চিন্তা করে সাতরিয়ে কিনারে উঠে। কিন্ত বিপত্তি ঘটে ভাতিজি আর ভাতিজি জামাইয়ের দিকে। মায়াবতী খুব ভালভাবে সাতার জানে। কিন্ত দয়াল খুব একটা ভাল সাতার জানেনা। মায়াবতী দয়ালকে নিয়ে ভাবছে , সে সাতরিয়ে উঠতে পারবে কিনা? তাই সে দয়ালকে হাত ধরে সাতরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু নদীর স্রোতে এগিয়ে যাইতে পারছে না। দয়াল ও মায়াবতী নদীর পানিতে প্রায়ই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । এমন সময় মায়াবতীর চাচা দ্রুত একটি মাছ ধরা জেলেকে বে ল ভাই ঐযে দেখুন আমার ভাইজি ও জামাইকে একটু বাচান। তখন জেলে তার ট্রি ল নিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। মায়াবতী ও দয়াল বলে তারা নাকি নাকি নদীর পানি খেয়ে ফেলেছে । আর একটু হলে তারা আর রক্ষা পেত না। যা হোক মায়াবতী দয়াল ও তাদের চাচা ভেজা কাপড়ে একটি গরুর গাড়ী ভাড়া করে মায়াবতীর মাসির বাড়ীর দিকে রওনা হয়। দীর্ঘ দুইদিন দুই প্রহর পরে তারা সেখানে পৌছায় ।

 

মাসি তাদের ভেজা কাপড় দেখে হাউ-মাউ করে কাদতে থাকে আর বলে ঐ রাক্ষুসী নদী আমার কোল খালি করেছে। আবার আমার বোন খালি করার জন্য আক্রমন করেছে । মায়াবতী বলে মাসি কেদোনা আমরা তো বেচে এসেছি । সে জন্য ভগবানের প্রশংসা কর। তখন মাসি মায়াবতীকে বলে তুই আমার একটা কাপড় পড় এবং তোদের সব কাপড়-চোপড় তো ভিজে গেছে সেগুলো রোদ্রে শুকাতে দেও। তোমার মেসোর দুইটি লুঙ্গী এনে জামাই ও তোমার চাচাকে দাও । ভিজে শেষে অসুখ করবে। তারা শুকনো কাপড় পরিধান করে মাসির রান্না করা খাবার খাইল। মায়াবতীর চাচা মায়াবতীর মাসী তাদের ব্যাপারে সব কথা খুলে বলে যে, ওরা কিছুদিন এখানেই থাকবে। আর আমি সকালে চলে যাবো। মায়াবতীর মাসি বলে কিছুদিন কেন একবারেই থেকে যাক। আমার একটি মাত্র ছেলে ছিল, তাও ঐরাক্ষুসী নদী খেয়ে ফেলেছে । ও তো আমার নিজের সন্তানের মত।( চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর