অন্যদিকে নিতাই কাঠুরের ছেলে বখাটে বনমালী মায়াবতীদের বাড়ীতে বর সেজে বিয়ে করতে গেছে । মায়াবতীকে সাজানোর জন্য বাড়ীর লোকজন জোরাজুরি করিতেছে । কিন্ত সে বিয়ের কাপড় পরিধান করিতেছে না। তখন তার পিতা তার সামনে বলে তুই যদি নতুন শাড়ি না পরিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি । একথা শোনার পর মায়াবতী গোসল সেরে নতুন শাড়ী পড়ে মনমরা মুখে বসে আসে । আর সে ভাবছে শাড়িতো বাবার কথামত পড়েছি । কিন্ত বিয়ের পিড়িতে বসব না। তখন সে বাড়ীতে সানসেটের উপর ইদুর মারার ঔষধ দেখতে পায় ।
সে বখাটে বনমালী হতে চির মুক্তি পাওয়ার জন্য গড় গড় করে সেই ইদুর মারার ঔষধ খেয়ে নেয় । ধীরে ধীরে তার মুখ-মন্ডল নীল হতে থাকে । বিয়ের লোক জন সবাই এসেছে । বিয়ের পিড়িতে বর বসেছে , পুরোহিত মশাই এসেছে , মন্ত্র পড়া শুরু করেছেন । এমন সময় পুরোহিত মশাই কনে নিয়ে আসতে বললেন। তখন কনের চাচী , মামা ও জ্যাঠাতো ভগ্নিপতি যায় কনেকে নিয়ে আসার জন্য । তখন পর্যন্ত মায়াবতী শক্তই আছে । তারা মায়াবতীকে বলে বিয়ের পিড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য । তখন মায়াবতী বলে না আমি এ বিয়ে করিবনা । আমাকে জোর কর না। আমি দয়ালকে ভালবাসি। বিয়ে করলে তাকে করব। না হয় বিয়েই করব না। তখন তার চাচী বলে তোর দয়াল তো বিয়ে করিতে গেছে । সে খবর কি জানিস? ওরা বড়লোক , ওদের মতলব বুঝবি না ? তোর পরিবারের সমপর্যায়ে তোর বিয়ে হবে। সেখানে সুখী থাকবি। বড় লোকের বড় হলে, পরে তোকে খেদে দেবে। চল মা চল বিয়ে পিড়িতে নিয়ে যাই। তিন জন জোরজব্বর করে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোলা করে নিয়ে যায় ।
বিয়ের পিড়িতে বসার আগ মুহুতের্ মায়াবতী অচেতন হয়ে পড়ে যায় । হাত পা অবস হয়ে যায় । তখন দ্রুত ডাক্তার ডাকা হয় । ডাক্তার দেখে কনের মুখ-মন্ডল নীল হয়ে পড়েছে । তখন ডাক্তার দ্রুত তাকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। মেয়ে এমন অবস্থায় পরেশ ও তার স্ত্রী হাউ-মাউ করে কাদতে থাকে । এবার বুঝি মেয়েকে ও হারালাম , মান সম্মান ও হারালাম। হে ভগবান আমাদের রক্ষা করো। মায়াবতীর এমন অবস্থা দয়াল কুমার জানেনা। না জানলেও সে মায়াবতীকে নিয়ে চিন্তা করিতেছে । রাজপুত্র দয়াল কুমার ভেজা কাপড়েই চলে আসে নিজ বাড়ীতে । বাড়ীতে তার মাতা তাকে এমন অবস্থা দেখে হাউমাউ করে কাদতে থাকে। বলে বাবা বিয়ের বাড়ীতে কি হয়েছে ? বাবা তোমার এমন অবস্থা কি করে হল।
সে জানায় বিয়ে বাড়ী হতে পালিয়ে এসেছে। তখন তার মা জানায় তুই বাবা এভাবে তোর বাবার মান সম্মানে চুন কালি লেপে দিলি। তোর বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছে বুঝি। দয়াল বলে শোন মা আমি এ বিয়ের আয়োজন তো আমাকে না জানিয়ে করেছে । তার পর ও আমি মায়াবতীকে ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করিব না। এর জন্য আমি আমার জীবন পর্যন্ত দিতে রাজি আছি। তখন তার মা জানায় মায়াবতী তো অন্য ছেলেকে বিয়ে করিতে রাজি হয়েছে । সে বাড়ীতেও বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। দয়াল কুমার তার ভেজা কাপড় পাল্টিয়ে নতুন কাপড় পরিধান করে, মায়াবতীদের বাড়ীতে যাইতেছে। এমন সময় তার সহপাঠী বন্ধু বিজয় এর সাথে দেখা হয় । বিজয় দয়ালকে মায়াবতীকে জোরপুর্বক বিয়ে এবং বিষপানে অসুস্থ্যতার কথা জানায় । তখন দয়াল চিৎকার করে দৌড়ে দেয় মায়াবতীদের বাড়ীর দিকে।দয়াল বাড়ী হতে বের হওয়ার এক বা আধা ঘন্টা পর দয়ালের বাবা রাজা দশমন্তো বাড়ীতে আসেন। ছেলের কু-কীর্তির কথা তার স্ত্রীকে জানায় । বলে বেশি লাই দিয়ে ছেলেটাকে একদম বাদড় বানিয়েছো ।
বন জঙ্গলে এক মেয়ে পছন্দ করে। ছি: ছি: কি লজ্জা। মান সম্মান আর থাকল না। কি সুন্দর একটা সমন্দ ছিল। ছেলের বাগড়ামোর জন্য হলো না। শোন দয়ালের মা ঐ ছেলে যদি কোন কান্ড ঘটিয়ে ফেলে তাহলে ওকে এবার ছাড় দিবো না। দয়ালের দৌড়ানো অবস্থায় বিজয় তাকে দাড় করিয়ে বলে, এভাবে ওখানে দৌড়ে গেলে তোর বিপদ হবে। তখন দয়াল বলে দোস্ত আমি মায়াবতীকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। মায়াবতী আমার দেহের অকিèজেন। বলে দোস্ত ওখান থেকে মায়াবতীকে উদ্ধারের জন্য তোর সহায়তা চাই। তখন বিজয় দয়াল মুমুর্ষ অবস্থা দেখে ওর আরো দু-তিন জন বন্ধুকে সাথে নিয়ে মায়াবতীদের বাড়ীতে যায়। মায়াবতীদের বাড়ীতে গিয়ে দেখে বনমালী বিয়ের পোষাক পড়ে বসে আছে। শানাইয়ের সুর বাজছে। তখন দয়ালের বন্ধুরা মিলে ঐ বাড়ীতে আক্রমন করে। পরেশ কাঠুরে তার ব্যবহ্রত কুড়াল নিয়ে বিজয়ের সামনে এসে দাড়ায় ।
বিজয় কৌশলে পরেশ কাঠুরে কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় । তার হাত হতে কুড়াল নিয়ে নেয় । বিজয় কুড়াল নিয়ে সবার সামনে শাসিয়ে বলে ক্হে সামনে আসিলে , তাহার গর্দান যাইবে। এভাবে তাদের জিম্মি করে দয়াল মায়াবতী কে কাধে তুলে তাদের সাথে নিয়ে আসে। মায়াবতীর ততক্ষন চিকিৎসা চলছিল। তারপর দয়ালের কথা শুনে তার যেন আরো বড় প্রতিষেধক পেয়েছে। তার কাধে থাকা অবস্থায় পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে পায় । তারপর ও দয়াল মায়াবতীকে নিয়ে প্রথমে একজন ভাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় । সেখানে ডাক্তার দয়ালকে নিশ্চয়তা দেয় মায়াবতী এখন সম্পুর্ণ ঝুকিমুক্ত। বিজয় তাদের বিয়ের জন্য নতুন শাড়ী সহ যাবতীয় কেনাকাটা করে । বিজয় ও তার বন্ধুদের নিয়ে দয়াল কালী মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতের সামনে মায়াবতীকে সিঁদুর পড়িয়ে বিয়ে সম্পুর্ন করে। দয়াল মায়াবতীকে নতুন বউয়ের সাজে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায় ।
বাড়ীতে প্রবেশ করিবে এমন সময় রাজা গম্ভীর গলায় বলেন, ঐ খানেই দাড়াও । এক পাও এগিবে না। তখন দয়াল মায়াবতীকে নিয়ে দাড়িয়ে যায় । তখন দয়াল কুমার তার পিতার কাছে আকুতি জানায় , সে কি অপরাধ করেছে। তখন বলে কি অপরাধ করেছো জানো না? তুমি বিয়ের বাড়ী হতে পলায়ন করে কি অপরাধ করনি? সামান্য একটা কাঠুরের মেয়েকে বউ সাজিয়ে রাজবাড়ীতে নিয়ে আসা কোন অপরাধ হয়নি? তখন দয়াল বলে বাবা তুমি তো আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে গিয়েছিল। তোমরা জানযে আমি একটি মেয়েকে ভালবাসি। তারপরও কেন এটা করলে। সেজন্য আমি বিয়ে বাড়ী হতে চলে এসেছি । এর জন্য দু:খিত। আর যদি বলো সামান্য কাঠুরের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য অপরাধ! তাহলে আমি এক্ষুনি আমি রাজ পরিবার হতে চলে যাব। কারন আমি একজন সৎ সাহসী বুদ্ধিমতী মেয়েকে বিয়ে করেছি। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। একথা সর্বজন ¯^ীকৃত। তাই একজন মানুষ হিসেবে ধনী-গরীব হিসেবে বিচার করে সম্পর্ক করা যায় না।
সে হিসেবে করিলে সে সম্পর্কে ভালবাসা থাকে না। আমি একজন সাধারন মানুষ হিসেবে মায়াবতীকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। রাজা বলেন তোমার নীতি কথা শুনতে চাই না। তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও । তোমাদের এ সম্পর্ক আমি মানিনা। ঐ মেয়েকে ছেড়ে আসলে তোমাকে এবাড়ীতে রাখব বলে ভেবে দেখব। তখন দয়াল বলে রাজা মহাশয় আমি এ বাড়ীতে মায়াবতীকে ছাড়া থাকব, এ কথা চিন্তাও করতে পারবোনা। তাই আপনার রাজমহল থেকে এক্ষুনি বিদায় নিলাম বলে দয়াল মায়াবতীকে নিয়ে চলে যাইতেছে। এমন সময় দয়ালের মা চিৎকার করে বলে খোকা আমাকে ছেড়ে চলে যাস নে। রানী দরজা অতিক্রম করা অবস্থায় রাজা বলে তুমি দরজার গন্ডি পার হলে স্ত্রীর মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে। তখন রানী দাড়িয়ে যায় আর অঝোরে চোখের জল ছাড়তে থাকে। দরজার ও পাশ থেকে দয়াল তার মার পা ছুয়ে বলে মা দোয়া করিও আমি যেন মায়াবতীকে নিয়ে সুখী হতে পারি। তুমি আমাদের জন্য কোন চিন্তা করিওনা। সৃষ্টিকর্তার এ দুনিয়ায় আমাদের থাকার জায়গার অভাব হবেনা। তুমি ভাল থেকো বলে তারা চলে যায়। (চলবে)