শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

আমি যেভাবে সাংবাদিক -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ৮ জুন, ২০২০, ৫:৩৫ অপরাহ্ণ

আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। তখন আমার সহ-পাঠীরা স্কুল বিরতীতে খেলার মাঠে কেউ ফুটবল, কেউ মোরগ যুদ্ধ, আবার কেউ বা ক্লাস রুমের পিছনে বাঁশ ঝাড়ের নিচে আড্ডা দিতো। আর আমি কি করতাম। তা দেখে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। আমি খেলাধুলা না করে স্কুলের পাশে বাজারে নিতাই কাকার হোমিও ডাক্তার খানায়, নরেশসহ আরো কয়েকটি দোখানে বসে ঐদিনের যত গুলো জাতীয়/আঞ্চলিক পত্রিকা বাজারে বিক্রি হতো, সবগুলো পত্রিকা পড়তাম। এটা আমার প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়। আমার মেঝো বোন আমার সাথে একই ক্লাসে পড়তো। ও স্কুল বিরতীর সময় হোটেলে গিয়ে ডাল লুচি পরোটা খেয়ে দুপুরের নাস্তা করতো। আর আমি পত্রিকা পড়ে দুপুরের বিরতীর সময় কভার করিতাম। আমার মা বলতো বোনের সাথে নাস্তা করিতে। কিন্ত আমি করি নাই ।

 

যার কারনে স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক হাজী মনিরুজ্জামান স্যার আমাকে ক্লাসে দাড় করিয়ে বলতেন, আজকের পত্রিকার হেডলাইন গুলো বলো। আমি সবগুলো বলে দিতাম। ক্লাসের লেখাপড়াও ভালমতই করছিলাম। ক্লাসে সবসময় ভাল ছাত্রের তালিকায় স্থান ছিল । স্যারেরা আমাকে ভালবাসতো। বেশি পত্রিকা পড়ার জন্য স্যারেরা বলিতো পত্রিকা পড়া ভাল কিন্তু দুপুর নাস্তা ঠিকমত করতে হবে । না হলে শরীব খারাপ করিবে। স্যারদের পরামর্শ মতে লেখাপড়া ঠিকমত চলতে থাকে । এসএসসি পাশের যেদিন ফলাফল হয় । সেদিন সিদ্ধান্ত নেই যে, একটু জন্মস্থান এলাকা সিরাজগঞ্জ শহর হতে বিচ্ছিন্ন যমুন অধ্যুসিত চরগোটিয়া গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার । কলেজে ভর্তি হতে দেরী আছে । তাই পরের দিন আমি সিরাজগঞ্জ রওনা হই । সিরাজগঞ্জ কোর্টের মেইন গেটে ফটোষ্ট্যট এর দোকানের নোটিশ বোর্ডে দেখি একটি লিফলেটে লেখা আছে সাংবাদিক নিয়োগ করা হইবে । লিফলেট হতে সিরাজগঞ্জ জেলার তখন বিটিভির জেলা প্রতিনিধি বিশিষ্ট সাংবাদিক মো: আখতারুজ্জামান সাহেবের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা সংগ্রহ করে সরাসরি তার সয়াধানগড়া বাসায় উপস্থিত হই। পত্রিকা পড়তে পড়তে এক সময় মনের ভিতর সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। জনাব আখতারুজ্জামান জানান, দৈনিক চাঁদ-তারা পত্রিকা প্রকাশিত হইবে । তার জন্য লোক লাগবে। তবে অল্প কয়েকদিন দেরী হবে ।

 

তবে তিনি আমাকে আশ্বস্থ করেন যে, আমাকে তাহার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে লেখার সুযোগ করে দিবেন। ওখান থেকে আবার কোর্ট হয়ে যাওয়ার পথে সাপ্তাহিক সাহসী জনতার সাইনবোর্ড চোখে পড়ে । তখন আমি সাহস করে সাপ্তাহিক সাহসী জনতার অফিসে প্রবেশ করি । তখন সম্পাদক সাহেব কে চিনতাম না। অফিসে মহির আলী নামে একজন সম্পাদক সাহেবের সাথে পরিচয় করে দেন। দেখলাম সম্পাদক মো: আব্দুল হামিদ সাহেব খুব ভাল মানুষ । তিনি আমাকে বললেন রায়গঞ্জ/ সলংগায় কোন ফাকা নেই। তারপর ও আপনি এ পত্রিকায় কাজ করিতে পারিবেন। তখন সাহসী জনতার একটি সংখ্যা সংগ্রহ করে নিয়ে আমি গোটিয়া গ্রামে যাই । সেখানে বেশ কয়েকদিন থেকে আবার বাড়ী যাওয়ার সময় চরাঞ্চলের কিছু সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করে সাহসী জনতার অফিসে নিয়ে যাই। সম্পাদক সাহেব কিছু কাট-ছাট করে নিউজটি রেখে দেন। সেদিন মনে মনে ভাবছিলাম মনে হয় সাংবাদিক হয়ে যাচ্চি। মাঝে মাঝে সাহসী জনতার অফিসে যাতায়াত হতো। জীবনের প্রথম আমি সাংবাদিকতার একটি পরিচয় পত্র সাপ্তাহিক সাহসী জনতার সম্পাদক মো: আব্দুল হামিদ সাহেবের হাত হতে গ্রহণ করি। অল্প কিছুদিন পর জানতে পারলাম যে, আখতারুজ্জামান সম্পাদিত দৈনিক চাঁদ-তারা পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে । তখন দৈনিক চাদ-তারা হতে ও ডাক আসে। আমি চাদ-তারা পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করি। তখন নির্বাহী সম্পাদক সুলতান সাহেবের সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়।

 

সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক দুজনই আমাকে হাতে কলমে নিউজ লেখার শিক্ষা দিয়েছেন। তখন আমি রায়গঞ্জ উপজেলা সদর কারিগরী কলেজের ছাত্র। কলেজে ক্লাস সেরে নিউজ সংগ্রহ করে সাইকেল যোগে প্রায়ই জেলা শহরে ষ্টেশন রোডে হক সাহেবের বাসায় অবস্থিত চাদ-তারা পত্রিকা অফিসে যাইতাম। অনেক সময় রাত্রি হলে অফিসের দুটো টেবিল একসাথে করে বিছানা বানিয়ে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে । এভাবে অনেক দিন থাকতে হয়েছে । রায়গঞ্জের এক গ্রামের মাতব্বরের ছেলের কু-কীর্তি ঘটনা অনুসন্ধান করিতে গিয়ে ছোট মানুষ ভেবে আমাকে সঠিক ভাবে তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। আমি অনেক কষ্টে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাই। পরের দিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে মাতব্বরের ছেলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হয় । দৈনিক সিরাজগঞ্জ কন্ঠ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার অবস্থায় অনেক সময় কওমী জুটমিলের ভিতরে অবস্থিত র‌্যাব-১২ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যেতে হয়েছে । সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় মেসে থেকে সাংবাদিকতার কাজ করেছি। সকালে ক্লাস করে দুপুরে খাবার খেয়ে পত্রিকা অফিসে যাইতাম ।

 

সেখানে বসে অন্যের লেখা কম্পিউটার টাইপের পর সে লেখার প্রুফ রিডিং এর কাজ ও করেছি । কাজ শেষ করে রাত্রি ৯/১০টার সময় পায়ে হেটে মেসে যাইতাম। ঐ সময় দৈনিক যমুনা প্রবাহ পত্রিকায় কাজ করেছি। আবার কিছু দিন সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো পত্রিকায় কিছু দিন কাজ করেছি । চলনবিলের আলো পত্রিকায় নিউজের পাশাপাশি কবিতা বেশি প্রকাশ পেয়েছে। যার কারনে এক সময় আলোকিত কবি হিসেবে চলনবিল পত্রিকা হতে সম্মাননা পদক দেয়া হয়। সাংবাদিকতা কালে সংবাদ নিউজের জেরে অনেক সময় জীবন-নাশের আতংকে ভুগতে হয়েছে। ফতোয়াবাজি প্রতিবেদন নিয়ে প্রায়ই গ্রাম্য মাতব্বর দের সাথে বচসা হয়েছে। তাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে অনেক বার। অনেক প্রতিষ্টানের কর্তা ব্যক্তিদের অন্যয় দুর্নীতি নিয়ে সংবাদের জেরে তাদের কাছে বিরাগভাজন হয়েছি ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর