ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নের নগরকুচুরী গ্রামে প্রায় ১২০০ বছর পুর্বের গায়েবী মসজিদেই হঠাৎই আযানের সুর শোনতে পাওয়া যায়। যেখানে দিন-দুপুরে ভয়ে কেউ যেতো না। এটিকে জ্বিনের মসজিদ তথা গায়েবী মসজিদ নামেও সবাই ডাকতো। কারণ বেশী দিন হয়নি এর পারপাশ ঘিরে ছিলো বড় জঙ্গল ও জীব-জন্তুর আবাসস্থল। স্থানীয়রা জানান, তারা তাদের বাপ-দাদার তিন-চার পুরুষেও জানে না মসজিদটি কিভাবে স্থাপিত হয়েছিল। তবে মুখে মুখে এটি একটি গায়েবী মসজিদ নামেই পরিচিত। অনেকেই বলছে আনুমানিক ১২০০ বৎসর পূর্বে এটি স্থাপিত হয়েছে।
এটিকে জ্বিনের মসজিদ তথা গায়েবী মসজিদ নামেও সবাই ডাকে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, উক্ত গায়েবী মসজিদটি শাহ-সুলতান কমির উদ্দিন রুমী (রা) এর সময়কালে উনাদের একজনেরই ধর্মীয় উপসানালয় তথা সাধনার স্থান হিসাবে অলৌকিকভাবে স্থাপিত হয়েছিল মসজিদটি। কথিত আছে, একজন বাকপ্রতিবন্ধী লোক জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পড়লে মসজিদটির নির্মাণ কাজ দেখতে পায়, তখন সঙ্গে সঙ্গেই সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এতে সবাই ধারণা করে যে বাক প্রতিবন্ধি লোকটি তা দেখে ফেলায় গায়েবী মসজিদের বাকী কাজ বন্ধ করে দেয় জ্বিনেরা। এরপর বহু যোগ পেরিয়ে গেলেও সেখানে যাওয়ার কেউ চিন্তা করে না। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার কারণে ও জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়া গাছ-পালা কেটে পেলে জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়।
ফলে গত কয়েক মাস আগে হঠাৎই আযানের সুর ভেসে উঠে চারিদিকে এবং লোকজন দলে দলে আসে উক্ত মসজিদটিকে দেখতে ও জানতে। জানা গেছে, গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত অজানা প্রত্নতাত্ত্বিক এই পুরাতন ভবনে নিয়মিত নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করেছে গ্রামের মানুষ। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে মাস খানেক ধরে উক্ত গায়েবী মসজিদটির পুন:সংস্কার সহ মসজিদের পাশেই একটি এতিমখানা (মাদ্রাসা) স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বহুযোগ আগে প্লেটের মতো ১ইঞ্চি পুরো ৭/৮ইঞ্চি বর্গফুটের ইট দিয়ে করা হয়েছে ৩ ফুটেরও বেশী চওড়াবিশিষ্ট প্রতিটি দেওয়াল। প্রতিটি দেওয়ালের গায়ে ইসলামী নিদর্শনের বিভিন্ন কারুশিল্প কর্ম দেখা যায়। মসজিদটির একপাশে দুটি বড় খোলা দরজা এবং অপর দুপাশে রয়েছে ছোট ছোট দুটি সুরঙ্গের মতো দরজা। উপরে ছাদ ও ভিতরের মেঝটি পাকা করা হয়নি। তবে এরচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হলো ভিতরে প্রবেশের তিনটি রাস্তায় কোন ধরনের আলাদা ভাবে দরজা ফিটিং করার মতো কোন অবস্থান দেখতে পাওয়া যাইনি। কিন্তু বর্তমানে এলাকাবাসী মসজিদের পুরাতন দেওয়ালের সাথে ঘেষে কংক্রিটের পিলার দিয়ে উপরে টিনের ছাউনী দিয়েছে এবং মসজিদের ভিতরে ও বাইরে নামাজ আদায় করতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পাকাকরন করা হয়েছে। সেখানে এখন পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ সহ জুম্মাহর নামাজ আদায় করার পাশাপাশি খতমে তারাবীর নামাজ আদায় করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রবিণ ব্যাক্তির লাল মিয়া, রিপন মিয়া, আঃ রাজ্জাকের ও উজ্জল মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি শুক্রবারে বিভিন্ন দূর-দুরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের নিয়ত হাসিলের উদ্দেশ্যে উক্ত গায়েবী মসজিদে খিচুরী, বিরিয়ানী পাক করে থাকে এবং গবাদী পশু-পাখি সহ নগদ দান-অনুদান দিতে দেখা যায়। তবে কয়েক যুগ ধরে সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। উক্ত মসজিদ কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান রিপন জানান, সকলের সহযোগীতায় মসজিদটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলার পাশাপাশি এখানে প্রায় ৫০ শতক জমি থাকায় বিনামুল্যে ইসলামী শিক্ষাদান হিসাবে এতিখানা ও নুরানী মাদ্রাসা চালু করা হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইফতেকার উদ্দিন ভূইয়া বিপ্লব জানান, গায়েবী মসজিদটি তথা প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়টি ধরে রাখতে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের পক্ষ থেকে ঢেউটিন অনুদান পাওয়া গেছে এবং কিশোরগঞ্জস্থ মাও. আব্দুল হালিমের সহযোগীতায় কমির উদ্দিন রুমী (রা) নামে এতিমখানা ও নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা স্থাপনের কাজ চলছে।
#আপন_ইসলাম