রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার -মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ৭ জুন, ২০২০, ৮:৫২ অপরাহ্ণ

রাজার একমাত্র পুত্র দয়াল কুমারের রাজ্যের প্রতি নেই কোন মোহ। রাজার ছেলে রাজা হয় এই কথা প্রায় ঘটে থাকে । বা রাজপুত্র রাজ সিংহাসন ধরে রাখার জন্য খুনাখুনি পর্যন্ত করে থাকে । কিন্তু সিকিম রাজ্যের রাজা দশমন্তোর ছেলে দয়াল কুমারের চিন্তা শুধু বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো আর পাখি শিকার করা । সারা দিন বনে জঙ্গলে কাটিয়ে দু-একটা পাখি শিকার করে রাত্রে বাড়ী ফেরে। বাড়ীতে পিতা-মাতা প্রায় বকত। যে তাহার অবর্তমানে তাকেই রাজ্যের ভার নিতে হবে। কিন্ত সে বলে সে এই রাজ্য চায় না । এরই মধ্যে ঘটে গেল এক মজার ঘটনা। সকালে বনের পাশে এক কাঠুরের বাড়ীর পাশে রাজপুত্র দয়াল কুমার একটি পাখি শিকার করার জন্য গাছে ওৎ পেতে বসে আছে । পাশের পুকুরে কাঠুরের ষোড়শী কন্যা গোসল সারতে ছিল । কাঠুরের কন্যার নাম মায়াবতী। সে বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী তে পড়ে। কাঠুরে কন্যা ভাবতে ছে যে, ওৎ পেতে থাকা যুবক গাছে বসে থেকে তাকে দেখছে । ছি: ছি: কি লজ্জা , কি বেশরম কেমনে তাকিয়ে আছে। দেখাচ্ছি মজা বলে সে বনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাহসী মেয়ে একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে নিয়ে গাছের নিচে গিয়ে শাসাচ্ছে, আর বলছে এই ব্যাটা নেমে আয় ! তোর কি মা বোন নেই? রাজপুত্র তো একে বারে ভিমরি খেয়ে পড়েছে ।

 

এ কি বলছে ? আমি আবার কি অপরাধ করলাম। তখন দয়াল কুমার নিচে নেমে এসে মায়াবতীকে তার পরিচয় দিয়ে বলে সে এখানে পাখি শিকারের জন্য এসেছে । কিন্ত মেয়েটি তার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। পাশে একজন কাঠুরে এসে বলে মা জননী ইনি আমাদের যুবরাজ । এ রােেজ্যর একমাত্র ছেলে । উনি খুব ভালা মানুষ। ওনার পিতার মত প্রজাদের উপর নির্যাতন করা পছন্দ করেননা। তাই তিনি প্রতিনিয়ত এই বনে এসে পাখি শিকার করে থাকেন। তখন মেয়েটির রোশানল হতে রাজপুত্র রেহায় পায় । কাঠুরে কন্যা মায়াবতীর সাহসিকতা দেখে দয়াল কুমার তাকে মনে মনে ভালবেসে ফেলে । এত সুন্দর মেয়ে আগে কখনো এই বনে জঙ্গলে তার চোখে পড়েনি। রাজকুমার বলে আমি রাজপুত্র ঠিকই কিন্ত রাজসিংহাসন আমার ভাল লাগে না। এই বনের পরিবেশ আমার খুবই ভাল লাগে। আমি এই বনেই আমার আবাসস্থল বানাতে চাই। তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পারো। তখন থেকে দয়াল কুমার আর মায়াবতীর মধ্যে একটি বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরী হয়। দয়াল কুমার ও পাশের এলাকার একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট এ পড়ে। সে কোন রকম ভাবে এসএসসির গন্ডি পার হয়ে কলেজে ভর্তি হয় । বনে জঙ্গলে সবসময় পড়ে থাকায় তার বইয়ের পাতায় তাহার তেমন মনোযোগ না থাকায় লেখাপড়ায় খুব একটা ভাল ফলাফল করিতে পারে নাই। সে মায়াবতীকে বলে তুমি কোন স্কুলে পড়। মায়াবতী তাকে তার স্কুল সমন্ধে সব জানায় ।

 

সেই দিন পাখি শিকার করে একটি পাখি সে মায়াবতীকে উপহার দেয় । মায়াবতী পাখিটি পেয়ে ভীষন খুশি হয় । সেই দিন রাজপুত্র তাহার বাসায় চলে যায় । পরের দিন মায়াবতী বনের ধার দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটে স্কুলে যাইতেছিল । ঐ বনের পাশের নিতাই কাঠুরের বখাটে ছেলে বনমালী মায়াবতীকে পথরোধ করে, বলে মায়াবতী আমি তোকে ভালবাসি। তার কথা শুনে মায়াবতী বনমালীকে বলে তুই মার পথ আটকাবে না এবং বাজে কথা বলবি না। আমি কিন্তু তোর বাবাকে বলে দেব। ঐদিন বনমালী বলে শোন তোকে আমার ভাল লেগেছে । তোকে আমার চাই। তোকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি। এই বলে পথ ছেড়ে দেয় এবং বলে একদিন সময় দিলাম এর মধ্যে আমার প্রস্তাবের জবাব জানাবি। সেই দিন মায়াবতী স্কুলে ক্লাস করে আসার সময় বনমালীর বাবার কাছে নালিশ দিয়ে আসে। সে বাড়ীতে এসে ও তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। মায়াবতীর বাবা পরেশ কাঠুরে তৎক্ষনাৎ নিতাই কাঠুরের বাড়ীতে গিয়ে তাকে শাসিয়ে বলে তোর ছেলেকে তো মানুষ করলি না । সেই সাথে আমার মেয়েটিকে সর্বনাশের দিকে এগিয়ে দিবি। তোর ছেলেকে শাসন করবি না হলে আমি রাজার দরবারে তোর নামে চুড়ান্ত আরজি জানাবো কিন্ত।

 

বিকেলে বখাটে ছেলে বনমালী বাড়ীতে আসলে তার বাবা তাকে অনেক চর-থাপ্পড় দিয়ে বলে তুই আমার মান-সম্মান নষ্ট করছিস। আর যেন তোর নামে কোন বিচার না আসে। পরের দিন রাজপুত্র দয়াল কুমার বনের ভিতরে পাখি শিকারের জন্য এ গাছ থেকে ঐ গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এমন সময় বনের কোন এক পাশ থেকে মেয়ে কন্ঠের আর্তনাদ ভেসে আসছে। তখন রাজপুত্র শিকারের তীর লাটি হাতে নিয়ে যেদিক থেকে চিৎকার আসছে সেদিকে দোড়াচ্ছে। গিয়ে দেখে মায়াবতীর সাথে বখাটে বনমালী জাপটা-জাপটি করছে। আর বনমালী বলছে । আমার বাবা-মা যেহেতু জেনেই গেছে,তোর জন্য মার খেয়েছি , আজ তোর সর্বনাশ আমি করেই ছাড়বো। মায়াবতী তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জানপ্রান দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে । কিন্তু ছাড়াতে পারছে না। জাপটা জাপটি অবস্থায় রাজপুত্র দৌড়ে এসে বনমালীকে লাথি দিয়ে মায়াবর্তীর উপর থেকে ফেলে দেয় । মায়াবতীর ছেড়া জামা ডাকার জন্য সে নিজের সার্ট খুলে পড়িয়ে দেয় । তার পর ধনুকের লাঠি দিয়ে বনমালীকে সজোরে অনবরত আঘাত করতে থাকে। আঘাত সহ্য করতে না পেরে সে দৌড়ে পালিয়ে যায় । তখন রাজপুত্র মায়াবতীকে ঐ অবস্থায় তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। তখন মায়াবতীর বাবা-মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায় । তারপর তার সাথে রাজপুত্রকে দেখে শিহরিত হয়ে যায় । তাড়াতাড়ি চেয়ার নিয়ে আসে রাজপুত্র কে বসতে দেয় । রাজপুত্রকে আপ্যায়নের জন্য যথেস্ট চেষ্টাসাধ্যি করে। কিন্তু রাজপুত্র দেরী না করে চলে যায়। এবং বলে শয়তানটাকে এমন মার মেরেছি যে ওর চারিপাশে ঘেষতে সাহস পাবে না। রাজপুত্রের কথামত মায়াবতীর বাবা রাজ দরবারে এ বিষয়ে বিচার চাইবে চিন্তা করছিল।

 

আবার চিন্তা করে এ বিষয় নিয়ে বেশি জানা জানি করিলে মেয়ের ভাল সমন্দ পাওয়া যাবে না । সাত সতের চিন্তা করে সে বিচার চাওয়ার সিদ্¦ান্ত হতে সরে আসে। পাশের বাড়ীর একজন বলে, আমাদের সমাজের ছেলেরই তো চোখ পড়েছে তোর মেয়ের উপর। দেখতো নিতাইএর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলা যায় কিনা। সে কথা পরেশ রাত্রিতে তার বউয়ের সাথে আলোচনা করে। বউ বলে তোমার মেয়ে এ সমন্দে রাজি হবে কি না? দুর আবার মেয়ের কথা কিসের? আমরা যা করিব তাই হবে। যে ঘটনা ঘটেছে আশে-পাশের রাজ্যের কোন মানুষের জানার বাকি নাই। তাই এই মেয়েকে ভাল সমন্দ দেখে বিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে মায়াবতীর মা । মেয়েকে বুঝাও। মায়াবতী তার মায়ের কাছে এসব শুনে রেগে-কেদে হুমরি খেয়ে বলে ওর সাথে বিয়ে বসার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল। আমার জীবন থাকতে এবিয়ে করিব না। এই সাফ কথা বলে দিলাম। (চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর