রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

লকডাউনে অর্থ কষ্টে ভুগছে পাবনার নিম্নে আয়ের সাধারণ মানুষ

নিজস্ব  প্রতিবেদকঃ
আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে লকডাউনে পড়ে মাহে রমজানে সীমাহীন অর্থ কষ্টে ভুগছে সাঁথিয়া  উপজেলা এলাকার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। উপর্জনের পথ বন্ধ করে ঘরে বসে থাকলেও তাদের পাশে এগিয়ে আসছেনা কেউ। বাড়িয়ে দিচ্ছেনা সাহায্যের হাত।

এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও যেন চুপসে গেছে। দেশব্যাপী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের সমাজসেবক ও গরীবের বন্ধু বলে পরিচিতি তুলে ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্যানা-পোষ্টারে পাড়া মহল্লা ছেয়ে গেলেও এক কেজি চাল নিয়ে তাদের কেউ ছুটে যায়নি কর্মহীনদের দ্বারে।

চলমান লকডাউনে সব থেকে বেশি অর্থ কষ্টে ভুগছে মটর শ্রমিক, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকেই জানিয়েছে করোনায় গ্রাস করার আগেই পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এসব নানা কারণে লকডাউনের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু সাভাবিকভাবে চলালের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।

সাঁথিয়া  উপজেলা  ধুলাউড়ি থেকে ভ্যান চালিয়ে  বিভিন্ন রাস্তায়  জীবীকা নির্বাহকারী নুর মোহাম্মদ বলেন- এইভাবে লকডাউন দিলি আমাগে কি কইরে চলবে। এই ভ্যানগাড়ী হচ্ছে আমাগে সম্বল। সারাদিন গাড়ী চালায়ে যা আয় করি তাই দিয়ে চাইল-ডাইল কিনে খাই। এই ছাড়া আমাগে তো কোন ব্যবসা-বানিজ্য নেই যে অন্য জায়গাত্তে টাহা আসফে, তাই দিয়ে চলবো।

আর এই গাড়ী চালানো বন্ধ করে দিলি আমরা চলবো কি কইরে। আমরা কোন অনুদানও পাইনে। সরকার অনুদান দিলিও তা বড় বড় মাথা আলারা খাইয়ে ফেলাই। আমাগে মত গরীব-দুঃখিগে পর্যন্ত আসেনা। তারপরে আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বেরুলি পুলিশ-প্রশাসন চাবি ধইরে কাইড়ে নিয়ে যাচ্ছে, চাকার হাওয়া ছাইড়ে দিচ্ছে। এইভাবে বাইচে থাকা আর ওই করোনায় মইরে যাওয়া একই কথা।

হোটেল ব্যবসায় গন  বলেন-লকডাউনের কারণে আমাদের হোটেলের ব্যবসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের পাঁচ সদস্য’র খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে। সামনে মুসলমানদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। সেই ঈদ আমাদের কিভাবে কাটবে তাও বলতে পারছি না।

তিনি বলেন করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কা সামলাতে সরকার লকডাউন করার পর কিছু মানুষ খাদ্য সহায়তা পেলেও এবার তেমন একা সাড়া নেই। না সরকারিভাবে, না ব্যক্তি উদ্যোগে। মানুষ না খেয়ে মরেলেও দেখার যেন কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে করোনা লাগবেনা। এমনিতেই আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।

বাস চালক মুজিবর রহমান বলেন-গত বছর তিন মাস লকডাউনে থেকে আমরা কঠিন অবস্থার শিকার হয়। ওই সময় আমাদের পরিবহন সেক্টরে কিছু সংখ্যক মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা ও অনুদান দিলেও সবার ভাগ্যে জোটেনি। ধার-দেনা করে সেই কঠিন সময় পার করার পর যখনই স্বাভাবিক অবস্থায় দাঁড়িয়েছি, ঠিক তখনই আবার লকডাউন।

এই লকডাউনে পড়ে আমরা কয়েখ হাজার শ্রমিক খুবই কষ্টে আছি। আমাদের দাবি সরকার লকডাউনের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ী চলাচলের অনুমতি দিলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম।

পাবনা  এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন । খুলনা শহরে ইজিবাইক চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন-সরকার লকডাউন দিয়েছে দিক। তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে আমাদের গাড়ী বন্ধ না করে স্বাস্থবিধি মেনে উপর্জানের পথটা তৈরী করে দিক। যেমন দুই সিটে একজন যাত্রী নেওয়া, মাস্ক ছাড়া যাত্রী না তোলা। এভাবে আমাদের আয়-ইনকাম বন্ধ থাকলে আমরা কি খেয়ে পাবনা বাস  টার্মিনালের স্টাটার গোলাম মোস্তফা বলেন-গাড়ী বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের হাজার হাজার শ্রমিক অসহায় হয়ে পড়েছে। করোনার প্রথম সময় যে সব অনুদান আসছে, তা আমাদের কোন শ্রমিক পাইনি। এই যে সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কত সম্ভাব্য প্রার্থী প্যানা পোষ্টার দিয়ে প্রচার চালিয়েছে।

নিজেদেরকে তা সমাজসেবক, জনদরদী, গরীবের বন্ধু বলে পরিচয় তুলে ধরলেও এই কঠিন সময় জনগনের পাশে তারা নেই। নেই কোন মেম্বর চেয়ারম্যানও। শুধু সরকারকে দায়ী করলে হবে না। “মানুষ মানুষের জন্য” এই কথাটা যদি আমরা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাই, বিত্তবানরা যদি অসহায় মানুষের পাশে দাাঁড়ায় তাহলে কারো কোন কষ্ট থাকেনা।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর