আম পরিপক্ক হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পর দিয়ে বয়ে যাওয়া আম্ফান ঝড়ের ফলে গত বছর আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আম্ফানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ আম ঝরে পড়েছিল। ফলে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমচাষিরা। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে আমের স্বাদ-গন্ধেও বিরূপ প্রভাব পড়েছিল।
তবে এবার এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলন বিলে আম গাছগুলোতে অনেক মুকুল ধরেছিল। সেই মুকুল এখন আমে রূপ নিয়েছে। চাষিরা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আম বাঁচাতে বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। চাষিরা এবার আমের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছেন।
মুকুল আসার সময় থেকেই গাছের প্রচুর যত্ন নিতে হয়। এমন গাছে প্রচুর পানি দরকার হয়। চলন বিলে বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় আম বাগানে সেচ দিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আম চাষিদের। তবে পরিমিত বৃষ্টি হলে সব শঙ্কা কাটিয়ে আমের ভালো ফলন হবে এমন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জলবায়ুর প্রভাব। সূর্যকিরণ এবং বৃষ্টিপাত আম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। শেষ পর্যন্ত প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে এবার রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদন হবে চলন বিলে।
আম চাষি এবং উদ্যোক্তা সাফাজ হক বলেন, ‘প্রায় সব গাছে আমের মুকুল এসেছে। সেগুলো এখন পরিপূর্ণ আমে রূপ নিচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে কিছু কিছু গাছে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে।’ এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গেলো বছর করোনা পরিস্থিতিতে আমের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল চাষিদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ই-কমার্সের আশীর্বাদে আমের ভালো দাম পেয়েছিল চাষিরা। তবে, চলতি বছরে তারা কিছুটা নির্ভার, আমের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার ফলন ভালো হবে এবং দামও ভালো পাবেন এমন আশা করছেন তারা।
আম চাষি এবং ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ পানা বলেন, ‘এবার গাছে গাছে ৭৫/৮৫ ভাগ মুকুল দেখে আশায় বুক বেধেছিলাম। কিন্তু তিন সপ্তাহ আগে একটানা কয়েক দিন সকালের দিকে আকাশ মেঘলা কুয়াশাছন্ন থাকায় আমের মুকুলে ছত্রাক বাসা বাঁধে, পরাগায়নে বাধা সৃষ্টি করে এবং বেশ কিছু মুকুল ঝরে যায়। তবে, ভালো হবে আশা করি।’
মিডিয়া ও অন্যরা সবাই এবার বাম্পার ফলনের কথা বললেও আম চাষি হিসেবে আমের বাম্পার ফলন নিয়ে এ মতের সঙ্গে একমত নন মৌসুমি ফল বিক্রেতা রাশিদুল । তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আম গাছগুলোতে বর্তমানে মুকুলের চিহ্ন হিসেবে শিরাগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও আমের দেখা নেই। এই চিত্র সব আমের ক্ষেত্রে নয়। ফজলি, বোগলাগুঠি, আশ্বিনা আমে এই ক্ষতিটা একটু বেশি হয়েছে। তবে এবার যা ফলন আছে, তা বাম্পার ফলন হিসেবে মেনে নিতে আমি নারাজ। আমার মনে হয় এই অবস্থা শেষ পর্যন্ত থাকলে এটাকে ভালো ফলন বলতে পারি না।’
‘সবশেষে একটা সুখবর বলতে চাই, এই বছরে অন্যান্য আমের তুলনায় ক্ষিরসাপাত ও ল্যাংড়া আমের ফলন সবচেয়ে বেশি, যা হয়তো অনলাইন সেলারদের জন্য খুবই ইতিবাচক। গ্রাহকদের থেকে তারা ভালো রিভিউ পাবেন।’
প্রথমে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল কিন্তুু আমের গুটি আসার পর কুয়াশায় কিছু ক্ষতি হয়েছে মুকুলের। তবে, কৃষি সম্প্রসারনের পরামর্শ অনুযায়ী বালাইনাশক স্প্রে করা হয়েছ। এখন সমস্যা হলো এই বছরে আমের গুটিতে বৃষ্টি না পরার কারণে অনেক গুটি ঝরে যাচ্ছে।’
‘তবুও গাছে যে পরিমাণ গুটি আছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। এখন থেকে আম বাজারজাতকরণে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ফল গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না হওয়ায়, মুকুলের ক্ষতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভালো হবে আশা করি।’
উল্লেখ্য, এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় আমের চাষী রয়েছে ১৭৯৪৩ । উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনূকুলে আছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
#CBALO/আপন ইসলাম