রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

পাবনার সুজানগরের মুন্নি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছেনা

শামীম আহমেদ নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী । হতদরিদ্র ভ্যানচালক বাবার সীমিত আয়ে সংসারই চলে না। সেখানে, কোথায় পাবেন অর্থ, কে দেবেন অর্থের জোগান। ফলে আনন্দের বদলে রাজ্যের হতাশা ভর করেছে পরিবারটিতে।

 

 

মুন্নী জানান, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩১১০তম হয়ে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মোছা. জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৬৯.৭৫ নম্বর। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল মুন্নীর নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরেছে।

স্থানীয়রা জানান, মোছা. জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের বাকীবিল্লাহ ও মোছা. রওশন আরা খাতুনের মেয়ে। ৪ সন্তানের মধ্যে মুন্নী বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মুন্নীর পিতা একজন দরিদ্র ভ্যানচালক। মুন্নীর পিতার নিজ বাড়ির ২ কাঠা জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই।

বাড়িতে ছোট টিনের একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। নুন আনতে পান্তা ফুরায় মুন্নীর পিতার। সেখানে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানো তার পক্ষে অসম্ভব।

মুন্নীর পিতা বাকীবিল্লাহ বলেন, ব্র্যাকের স্থানীয় শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে একটি ভ্যান ক্রয় করি। সেই ভ্যান চালিয়ে দিনে যে দুই-তিনশত টাকা আয় হয় সেই টাকা দিয়েই কোনোরকম কষ্টে পরিবারের ৬ জনের মুখের আহার তুলে দেওয়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। তাই সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে মেয়ের মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার কাছে দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি আমার মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারবো কিনা জানি না।

 

মুন্নী ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না মুন্নী।

 

মুন্নী জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় অর্থের অভাবে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব বই কিনতে পারতাম না। একটা একটা করে বই কিনতাম। মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। মেডিকেলের বইয়ের দাম বেশি। দিনাজপুরে পড়াশুনা করতে গিয়ে সেখানে থাকা-খাওয়াসহ অনেক খরচ হবে। এত টাকা আমার হতদরিদ্র বাবা কোথায় পাবে? কীভাবে পড়ালেখার খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন আমার লেখাপড়া চালানোর দায়িত্ব নেন। সবার সহযোগিতায় পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে যেতে চান মুন্নী।

 

পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও বিগত ৩৬ বছরে এই বিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এবারে দরিদ্র পরিবারের এই অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে মুন্নী সে সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। সে আমাদের বিদ্যালয়সহ ইউনিয়নবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।

তিনি আরো জানান, মুন্নী দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও সে অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানরা নজর দিলে মুন্নীর ডাক্তারি পড়া আটকাবে না।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর