দুই বুড়ো-বুড়ির বিয়ে নিয়ে রবিবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বরিশালের সর্বত্র ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামর্থ না থাকায় স্থানীয় যুবকেরা চাঁদা তুলে নিঃসঙ্গ বর ও কনের বিয়ের আয়োজন করেন। ঘোড়ার গাড়িতে বর এসে তুলে নিয়ে যায় কনেকে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করে তাদের জন্য আশীর্বাদ করেন স্থানীয়রা। সোমবার দুপুরে বরের বাসায় বৌ-ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য রবিবার দিনভর স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে চাঁদা তুলে বরের বাসায়ও চলে বৌ-ভাত অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন। এর আগে শনিবার দুপুরে জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ৩০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় বজলু খান (৬৪) এবং বকুল বেগম ওরফে ফুলশুনীর (৫৮)। বজলু খান জেলার উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের কালিহাতা গ্রামের বাসিন্দা হলে দীর্ঘদিন থেকে তিনি নগরীর দরগাহবাড়ি এলাকার ভাড়া বাসায় একাকী নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে আসছিলেন। বকুল বেগম ওরফে ফুলশুনী নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা খান সড়ক এলাকায় একাকী বসবাস করেন। তিনি ওই এলাকার মহাসড়কের পাশে বসে জীবিকার তাগিদে ডিম বিক্রি করেন। এরপূর্বে সপ্তাহখানের আগে একইভাবে নগরীর পলাশপুর এলাকায় দুই প্রতিবন্ধী যুবক-যুবতীর বিয়ের আয়োজন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। এবারের আলোচিত “বুড়ো-বুড়ির বিয়ে”র বর বজলু খান নগরীর সাগরদী দরগাহ বাড়ি এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত বছর নগরীর ১ নম্বর সিএন্ডবি পোল এলাকায় ট্রাক চাঁপায় তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পরেন। বজলু খানের দাবি তার ২ পুত্র ও ১ কন্যা থাকলেও তারা কোন খোঁজখবর নেয়না। অপরদিকে নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা খান সড়ক এলাকার বাসিন্দা ফুলশুনীর স্বামী মারা যায় ১০ বছর আগে। একমাত্র পুত্র ঢাকায় থাকে। কিন্তু সে তার মায়ের কোন খোঁজখবর নেয়না। তাই জীবিকার তাগিদে খান সড়ক এলাকার মহাসড়কের পাশে বসে তিনি ডিম বিক্রি করেন। খান সড়কের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় যুবকরা এই দুইজনের একাকিত্ব এবং নিঃসঙ্গতা দেখে তাদের দুইজনের বিয়ের প্রাথমিক আলোচনা করেন। উভয়ে বিয়েতে সম্মতি দেয়ার পর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে আয়োজক যুবকরা। এরপর চাঁদা তুলে প্রায় ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। বর ও কনের নতুন পোশাক কেনা, অতিথি আপ্যায়নের জন্য বাজার করা, বিয়ের দিন ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করা, সাউন্ড সিস্টেমের জন্য মাইক ভাড়া করাসহ আনুষাঙ্গিক খরচ চাঁদার টাকায় করা হয়। শনিবার কনেকে বিয়ের পোষাক পরিয়ে বিউটি পার্লারে নিয়ে নববধূর সাঁজে সাজানো হয়। ওইদিন দুপুরে বরসহ পাঁচজন বরযাত্রী বহনকারী ঘোড়ার গাড়ি আসে কনের অস্থায়ী নিবাস নগরীর খান সড়ক খালপাড় এলাকায়। সেখানে ৩০ হাজার টাকা দেন মোহরে তাদের বিয়ে নিবন্ধন করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিবাহ রেজিষ্টার কাজী আবুল ফারাহ্। পরবর্তীতে স্থানীয় জনৈক আব্দুল মান্নানের বাসায় বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করা হয়। দুই বুড়ো-বুড়ির বিয়ের খবরে ওই বাড়িতে ভীড় করেন স্থানীয় উৎসুক জনতা। আপ্যায়ন শেষে ঘোড়ার গাড়িতে কনে নিয়ে যায় বৃদ্ধ বর বজলু খান। এসময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় উৎসুক জনতা নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ করেন। বিয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহাবুবুর রহমান মিলন এবং ইমান আলী খান জানান, নবদম্পতির আপনজন কেউ তাদের খোঁজখবর নেয় না। তাই তারা চাঁদা তুলে দুইজন নিঃসঙ্গ নারী-পুরুষের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আর্থিক অনটনের কারণে তাদের মনে যাতে কোনো আক্ষেপ না থাকে সেজন্য সোমবার বরের বাসায় বৌ-ভাতেরও আয়োজন করা হয়েছে। বৌ-ভাত শেষে কনেসহ বরকে কনে বাসায় নিয়ে আসা হবে। শেষ বয়সের এ বিয়েতে খুশী নবদম্পতি। বাকী জীবন যেন তারা সুখে থাকতে পারেন এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবীর জানান, জীবনে বাঁচার জন্য অবলম্বন দরকার। দুইজন নিঃসঙ্গ নারী-পুরুষের বিয়ের আয়োজন করে স্থানীয় যুবকরা একটি মহৎ কাজ করেছে। এ দম্পত্তি যাতে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এজন্য তার পক্ষ থেকে যা কিছু করা দরকার তিনি সাধ্যমতো সেই সহযোগিতা করবেন।
#CBALO/আপন ইসলাম