নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
বয়স ১০ ছুঁই ছুঁই। নাম সোহেল রানা। ভালোবেসে সবাই সোহেল বলেই ডাকে। দুরন্ত চঞ্চলা ওই শিশু ঘুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। ছুটি পেলেই বেরিয়ে পরে পাঁচ সদস্যের পরিবারের এক মাত্র উপার্জনকারী বাবার আয়ের যোগান দিতে। ওই শিশুর বাবা একজন কাঠ মিস্ত্রী। ঘরের কাজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করাই তার পেশা। রোজগার হলেই জ¦লে চালের চুলো। তাই করোনায় দীর্ঘ কয়েক মাস স্কুল বন্ধ থাকায় প্রায়ই তাকে দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত খামারে কিংবা সুপারি গাছের আগায় ওই শিশু সোহেলকে।
ওই শিশু নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের ঘুনি এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে। তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। তারা সবাই স্কুলে পড়ে। তার সংসারের খরচ যোগাতেই হিমসিম খেতে হয় তার মধ্য ছেলে-মেয়েদের স্কুলের খরচ। নিজের বলতে এক চিলতে জমিতে একটি টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এরকম আরও পাঁচ-ছয় জন শিশুরা আছে এলাকায়। কেউ কেউ সখের বসেও দিগন্তের শষ্যের ক্ষেত খামারে ঘুরে বেড়ায় নিজেদের চাহিদা মিটানোর কাজে।
সরেজমিনে আরও জানা যায়, ফসলের মাঠে ঝরে পড়া ও ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহের আনন্দে মেতেছে হতদরিদ্র শিশুরা। প্রতি বছর ধান কাটা শেষ হতেই ঝরে পড়া ধান কুড়াতে ব্যস্ত সময় পার করে একদল শিশু-কিশোর এমনকি বৃদ্ধারাও। ধান সংগ্রহ করে কেউ সংসারের খোরাক যোগায় কেউ বা ধান বিক্রি করে শার্ট, প্যান্ট, জুতা, শীতের পোশাক কিনবে কেউ বা খাবে শীতের পিঠা।
বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ থেকে কৃষকরা ধান নিয়ে যাওয়ার পর একদল শিশু-কিশোর হাতে খুন্তি-শাবল, চালন, ব্যাগ নিয়ে খুঁজে ফিরছে ইঁদুরের গর্ত। ইঁদুরের গর্তে জমানো ধান ব্যাগে ভরে তারা। এছাড়া জমিতে পড়ে থাকা ধানও কুড়িয়ে ব্যাগে ভরতে দেখা গেল। এমন সময় দেখা মেলে ওই শিশু সোহেলের। ঠিকানা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে কথা হয় পরিবারের ও আশপাশের লোকজনের সাথে।
অভাব অনটনের সংসারে সুযোগ পেলেই দিক বেদিক ছুটে সোহেল। কখনো মাটি খুড়ে কচুর মহি, কচুর লতি, ইঁদুরের গর্ত খুড়ে ধান এমনটি বিভিন্ন গাছ থেকে চুক্তি নিয়ে কাজ করে আনে নগদ টাকা অথবা সুপারি। পুরোটাই তুলে দেয় মা বাবার হাতে।
মাঠে ধান সংগ্রহ করতে আসা ওই শিশু জানায়, বিভিন্ন মাঠে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করি। কখনো কচুর মহি কখনো গাছ থেকে চুক্তিতে সুপারি পেরে যা পাই সব মায়ের কাছে দেই। বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের জন্য তাই বসে না থেকে আমি এগুলোই করি। পড়ালেখা করে বড় হয়ে মা বাবার পাশে দাঁড়াবো।
ঘুনি এলাকার কৃষক আঞ্জু মিয়া জানান, ধান কাটার পর মাটিতে পড়ে থাকা ধান শিশু-কিশোররা সংগ্রহ করে, এতে আমরা বাধা দেই না। এছাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরাই দল বেঁধে ধান সংগ্রহ করে। তবে তাদের সাবধান করি গর্তে বিষাক্ত সাপ থাকতে পারে বলে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। এবার ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এক মণ ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১’শ থেকে ১২’শ টাকায়। এ বছর উপজেলায় ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ মাত্রা ৮ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন ধান। প্রবল বন্যার কারণে ধান রোপন এবং কর্তন সব দিকেই পিছিয়ে আছে কৃষকরা।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিন বিশ^াস জানান, খেতে এভাবে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করা অনিরাপদ এবং ঝুকিপূর্ণ। তবে আধুনিক লগো পদ্ধতিতে ১০ লাইন পর পর এক লাইন গ্যাপ দিয়ে ধান রোপন করলে ইঁদুরে ধান নষ্ট কম করে। এতে করে আলো চলাচলের সুযোগ পায় ফলনও ভাল হয় কৃষকরাও উপকৃত ও লাভবান হবেন।
CBALO/আপন ইসলাম