বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

নাগরপুরে কুয়াশার চাদরে দিগন্ত জোড়া হলুদ মাঠ

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ:
টাঙ্গাইলে নাগরপুরে যেদিক চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। যেন কুয়াশা ঢাকা শীতের চাদরে দিগন্ত জোড়া সরিষার হলুদ মাঠ। সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চাদরে আবৃত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোট বড় এলাকাগুলো। বিভিন্ন গ্রামে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষা আবাদ। গেল বন্যার পর প্রচারণা এবং কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি আবাদ হয়েছে সরিষার। ফলে বেশ কিছু গ্রামে সবুজ, বেগুনী, সাদা, সোনালী নানা মৌসুমী ফলনের পাশাপশি হলুদের হাসি যেন ফসলের মাঠে সকল সুন্দরকে হার মানিয়ে মাঠজুড়ে হলুদ আভায় আলোর হাসি ফুঠেছে। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

উপজেলার নাগরপুর সদর, গয়হাটা, মোকনা, ভাদ্রা ও মামুদনগরসহ আশপাশের ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক জমিতেই এখন বেড়েছে সরিষার চাষ। কার্তিকে চাষ করার পর অগ্রহায়ণ মাস শেষ হতে না হতেই সরিষা ফুল ফোটার ধুম পড়েছে। মাঠের দিকে তাকালে মনে হয়, সবুজ-হলুদের সমন্বয়ে বাতাসে দোল খাওয়ার মতো কৃষকদের মনও দোলছে। হলুদ চাদরে সোনালী আভায় গোটা প্রান্তর হয়ে উঠেছে আলোকময়। এ যেন এক হলুদের দিগন্ত।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশে এখন ১৮ জাতের সরিষার ফলন হচ্ছে। এ জাতের সরিষার মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পাঁচ জাতের সরিষা চাষ হচ্ছে। তবে উপজেলায় বারি-১৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষা বেশি চাষ হয়েছে। চাষ হওয়া সরিষা লোকাল জাত ৯শত কেজি এবং উচ্চ ফলনশীল সরিষা এক হাজার তিনশত কেজি প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়ে থাকে।

উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের বংগবকুটিয়া গ্রামের সরিষা চাষি বাবুল আহমেদ বলেন, এ বছর এক একর জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। এক একর জমিতে সরিষা চাষে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। যদিও অতি বন্যায় মাটি ভিজে থাকার কারণে ফলনের কিছুটা ক্ষতি হবে তবুও আশা করছি লাভের মুখ দেখবো।উপজেলার পাকুটিয়া এলাকার সরিষা চাষী শহিদুল ইসলাম জানান, গত বছরের ন্যায় এবারও মৌসুমে সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি ফলন ঘরে তুলতে পারব।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছরোয়ার হোসাইন ভালো ফলনের জন্য করণীয় বিষয়ে বলেন, সরিষার চাষে বোরন ব্যবহার করলে দানা পুষ্ট হবে ও ফলন বৃদ্ধি পাবে। জাত ভেদে সরিষা আবাদের মাত্র ৮০-১০০ দিনেই ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি কেজি সরিষা থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম তেল পাওয়া যেতে পারে। সরিষা চাষের জমিতে বোরো ধানের আবাদ ভাল হয়। স্থানীয় জাতের পরিবর্তে বারি ও বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা আবাদ করে কৃষক বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো অঙ্কের মুনাফা অর্জন করতে পারবে। তবে কেবল সরিষাই নয় সকল প্রকার সবজি ও আবাদে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতায় মাঠে কৃষকদের সাথে কাজ করে যাচ্ছি।

নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মতিন বিশ্বাস চলন বিলের আলোকে জানান, এ উপজেলার মাটি সরিষা আবাদের জন্য অনেক উপযোগী। উপজেলায় গত বছরের তুলনায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ৯ হাজার ৮১৮ হেক্টর আবাদ হলেও এবার হয়েছে ১০ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি এবং বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেই। সর্বোপরি এ বছর করোনা এবং বন্যায় কৃষকরা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিধায় সরকারের নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে দুই হাজার কৃষককে সরিষা চাষের কৃষি প্রণোদনা বিতরণসহ সার্বিক সহযোগিতায় তাদের পাশে আছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ দিকে এবার সাতক্ষীরা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য ১ হাজার ২০০ মৌবক্স নিয়ে প্রস্তুত আছে মৌ চাষীরাও বলেও জানান তিনি।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর