মো, মাহমুদুল হাসান:
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার প্রায় প্রতিটি সরিষা ক্ষেতে হলুদের সমারোহ। সরিষার চারা যতই বড় হচ্ছে গ্রামের মাঠজুড়ে সরিষা আবাদ হলুদ চাদরে মোড়াচ্ছে। আর এই সরিষাক্ষেতে মৌ চাষ করে কৃষক এবং মৌ চাষী উভয়ই লাভবান হচ্ছে। কারণ সরিষাক্ষেতে মৌ চাষ করলে সেই এলাকার জমির ফলনও বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন জমির সরিষা থেকে মৌমাছির সাহায্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
চৌহালীর খাষপুকুরিয়া, বাঘুটিয়া, খাষকাউলিয়া, উমারপুর,ঘোরজান,স্থল ও সদিয়াচাদপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় মৌচাষীরা সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশির ভাগ মৌচাষী এসেছেন সাতক্ষীরা, ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কথা হয় সাতক্ষীরা ও সুন্দরবনের মৌচাষী আব্দুল আলীম ও মামুনের সাথে। সে উপজেলার খাষকাউলিয়া ইউনিয়নের কুরকী গ্রামে তার মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করে। এ সকল মৌচাষীদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় কৃষক রফিক মিয়া আক্ষেপের সূরে বলেন, আমাদের যদি কৃষি অফিস মৌ চাষের প্রশিক্ষন দিত তাহলে আমরা সরিষার সাথে মৌ চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারতাম।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চৌহালী উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষাক্ষেতে মধু চাষের ওপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ না দিলেও কৃষকদের মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। তাছাড়া সরিষাক্ষেতে মৌ চাষ করলে ফসলের কোন প্রকার ক্ষতি হয় না বরং উল্টো সরিষার ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে। সরিষাখেতের আশপাশে মধুর জন্য বিভিন্ন স্থানে মৌবাক্স বসানো হয়েছে। সরিষার পরাগায়ন ঘটিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকে মৌমাছি। ফলে সরিষার ফলন ভালো হয় ও বাড়তি মধু পাওয়া যায়। প্রতিটি বাক্সে মাত্র একটি রাণী মৌমাছি থাকে। ুু সরিষার খেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে ফুলের পরাগায়নে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। সরিষার ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মৌ চাষের কারণে এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় বেশি আয় হবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকেরা।
জানা যায়, আগে এ উপজেলার কৃষকেরা ফলন নষ্ট হবে ভেবে তাঁদের আবাদি জমিতে মৌ বাক্স (কলনী)বসাতে দেওয়া হয়নি। অথচ মৌ চাষের ফলে সরিষার ২০ ভাগ ফলন বাড়ে। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরনের রবিশস্যের ফলন বৃদ্ধি করে। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবাদি জমির পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করতে সহযোগিতা করছেন সাধারণ কৃষকরা। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে এক থেকে তিন কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ বেশি হয়। ১৮০টি বাক্সে ১৮০ থেকে ২৬০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। মৌ চাষে অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ করে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।
মৌ চাষি লাবলু ও মামুন বলেন, এবছরে দির্ঘমেয়াদি বন্যা হওয়ায় সরিষা আবাদ নামী তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মধুর উদপাদন কম হবে,তবে সামনের দিনগুলোর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমার এপ্রকল্প থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩৬০ কেজি মধু সংগ্রহ করা সম্ভাব হবে। যার বাজারমুল্য প্রায় ৬০হাজার টাকা। সারা বছর মৌমাছি পালন ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন খরচ আছে আবহাওয় অনুকুলে থাকলে ভালকিছু আশাকরা সম্বাব।
চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জেরিন আহমেদ ডেউলী সানকে জানান, উপজেলায় ২১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়, যার অর্জন ২২১০ হেক্টর। চৌহালীতে স্থানীয় ভাবে কোনো মৌ চাষ প্রকল্প নেই। তাই এখানে মৌ চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নাই। যারা মৌ চাষ করছেন তারা সকলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা চাষী। কৃষকদের ফসলের সাথে মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলার ৭টি ইউপিতেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশের নানা এলাকার মৌচাষিদের সাফল্যের কথা শুনে ও মৌ চাষ দেখে এখানকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
CBALO/আপন ইসলাম