রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মহানবী (সা.) ছিলেন অত্যন্ত লাজুক

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ১:৪০ অপরাহ্ণ

কয়েক দিন হলো মক্কাজুড়ে অন্য রকম এক খুশির আমেজ বিরাজ করছে। কারো খাওয়া-ঘুম নেই। পবিত্র ঘর কাবা শরিফের পুনর্নির্মাণের কাজে ব্যস্ত সবাই। কি যুবক কি বৃদ্ধ, বসে নেই বাচ্চারাও। পুরুষদের কাজে যত দূর সম্ভব সহযোগিতা করছে মহিলারা। এমন পুণ্যের কাজে কে পেছনে থাকতে চায়!

কাবাঘর। আল্লাহর ঘর। আরবের সৌরভ। মক্কাবাসীর গৌরব। এই ঘরই তো তাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। বংশ পরম্পরায় তারাই এ ঘরের প্রতিবেশী। সুতরাং এ ঘরের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ মক্কাবাসীর কর্তব্যের শামিল।

সিদ্ধান্ত হলো কারা কী কাজ করবে। কেউ পাথর বয়ে আনছে। কেউ বা সযত্নে পাথরগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছে। পাথরে পাথরে মিলিয়ে সুন্দরভাবে স্থাপন করাটা দুঃসাধ্য হলেও অসাধ্য নয়। নিপুণ হাতে সে কাজটিও আঞ্জাম দিচ্ছে একদল দক্ষ লোক।

হাতে ধরে পাথর বহন করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তবে কোনো কাপড়ের ওপর পাথর রেখে কাঁধের ওপর বহন করা তুলনামূলক সহজ। বেশির ভাগ লোকই তা-ই করছে। নিজের পরনের লুঙ্গি খুলে তাতে করেই পাথর বহন করছে। এ সমাজে এটা তেমন কোনো ব্যাপার না। যত্রতত্র কাপড় খুলে উলঙ্গ অবস্থায় চলাফেরা করা কেউ বাঁকা চোখে দেখে না। মূর্খতা ও জাহিলিয়াতের ঘোরে নিমজ্জিত এ সমাজ, লাজ-শরমের মাথা খেয়ে বসেছে অনেক আগেই।

পাথর বহনকারীদের মধ্যে শামিল আছেন মক্কার গণ্যমান্য অনেকেই। আছে কিশোর এবং যুবকরাও। তবে সবাই নিজ নিজ পরিধেয় বস্ত্র খুলে তাতে করেই পাথর বহন করছে। ব্যতিক্রম শুধু একটি বালক। বয়স তাঁর পনেরোর কোঠা পেরোয়নি এখনো। হাতে করে পাথর বহন করতে তাঁর বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তথাপি তাঁর পরনে লুঙ্গি আছে ঠিকই। চাইলে তিনিও অন্যদের মতো পরনের কাপড় খুলে পাথর বহন করতে পারতেন। কিন্তু শত কষ্ট হলেও তিনি তাঁর আব্রু অনাবৃত করতে নারাজ।

বিষয়টি দৃষ্টি কেড়েছে আব্বাসের। কোরাইশের সর্বজনবিদিত সম্মানিত মানুষ। ছোট বালকের এমন আচরণে তিনি কিছুটা কৌতূহলী হলেন। কে এই কিশোর? এই বয়সেই তিনি এত আত্মসম্মানী। ধীরপায়ে বালকের কাছে এগিয়ে গেলেন আব্বাস। ও আচ্ছা! এ যে তাঁর নিজের ভাতিজা। কলিজার টুকরা মুহাম্মদ।

এ জমিনে এমন ছেলে একটাই। মক্কার আল-আমিন। ছোটদের প্রাণের প্রিয়। বড়দের নয়নের মণি। ওর পক্ষেই সম্ভব এমন প্রতিকূল স্রোতেও অবিচল থাকা। মানব শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম ভূষণ লজ্জা। এত সহজে এ শ্রেষ্ঠত্ব ম্লান করার মতো ছেলে তিনি নন। আব্বাস এসব ভাবতে ভাবতে ভাতিজা মুহাম্মদের সামনে এসে দাঁড়ালেন।

চাচার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলেন মুহাম্মদ। একে তো সম্মানিত চাচা, অন্যদিকে তাঁর স্বভাবজাত মুরব্বিবোধ তাঁকে আব্বাসের চোখে চোখ রাখার অনুমতি দিলো না। আনত-নয়নে চাচার দিকে নিবিষ্ট হলেন তিনি। কেবল তাঁর আদেশের অপেক্ষায়।

কী ভাতিজা! এত কষ্ট করার কী আছে? লুঙ্গি খুলে কাঁধে করে পাথর নিলেই তো পারো। আব্বাস একটু মজা করেই কথাগুলো বলেন। দেখছ না, সবাই কেমন লুঙ্গি খুলে সহজে পাথর বহন করছে। তুমি তো ছোট মানুষ।

চাচার কথাগুলো যেন ভাতিজার কানে বজ্রাঘাতের ন্যায় পতিত হলো। কিন্তু পিতৃতুল্য চাচার কথা অবহেলা করারও সাধ্য ছিল না তাঁর। লুঙ্গির বাঁধনে হাত রেখেছেন মাত্র। কিছুটা খোলাও হয়েছে।

কিন্তু এত মানুষের সামনে কিভাবে পরনের কাপড় খুলব! কেমন দেখাবে আমাকে! ছিঃ কী লজ্জা। কথাগুলো ভাবতেই বেসামাল হয়ে পড়লেন কিশোর মুহাম্মদ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন। সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল তার পবিত্র চিত্ত। চোখ দুটো আকাশের দিকে স্থির হয়ে রইল।

দীর্ঘক্ষণ পর তাঁর নিথর দেহে হুঁশ ফিরে এলো। চারপাশে তাকিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলেন মরুভূমির ধূলিতে। উলঙ্গ হওয়ার আতঙ্ক তখনো তাঁকে পীড়া দিচ্ছিল। মুখে বলছিলেন, আমার পরনের কাপড় দাও? আমার লুঙ্গি দাও।

শিক্ষক : ইমদাদুল উলম রশিদিয়া, ফুলবাড়ী গেট, খুলনা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর