শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

চলনবিলের শুটকি রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

চলনবিলের আলো অফিস:
দেশের বৃহত্তর জলাভূমি চলনবিলে এখন থইথই পানি, চলনবিলের শুটকি মাছ বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উজেলার মহিষলুটি মাছের আড়তের শুটকি মাছ।এ জনপদের তিনটি জেলার ৯টি উপজেলার নারী শ্রমিকের হাতের জাদুর তৈরি চলনবিলের শুঁটকি এখন দেশ ছেড়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে দেশীয় পদ্ধতিতে শুটকি তৈরি করা হচ্ছে।পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই শুটকি প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন শুটকি চাতাল মালিকরা।

 

ভোরের আলো ফোটা থেকে শুরু হয়  মাছে লবণ মাখানো, মাপজোখ করা, বহন করে মাচায় নেওয়া, শুটকি উল্টে-পাল্টে নাড়া, শুটকি বাছাই করা আর এসব কাজই হয় নারীর হাতে। এসব চাতালে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, টেংরা, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। চলনবিলের মিষ্টি পানির মাছের শুটকির জন্য বেশ নাম আছে জায়গা গুলোর।তাড়াশের মহিষলুটি মাছের আড়ত, চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারি, নাটোরের সিংড়া বাজার সহ বিভিন্ন আড়ত থেকে পাইকাররা শুটকির জন্য কিনে আনেন শত শত মণ মাছ।

 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটিকুমরুল-বোনপাড়া হাইওয়ে রোড় সংলগ্ন রাস্তার পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বসে শুটকি মাছ তৈরির চাতাল। এখন সেপ্টেম্বর মাস বিল থেকে পানি নামতে শুরু করছে, মাছের ভরা মৌসুম। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্ব মাস পর্যন্ত চলে শুটকির মাছ সংগ্রহ। বর্ষার পানিতে চলনবিলাঞ্চলে যেসব মাছ বেড়ে ওঠে, সেসব মাছ ধরা চলে এসময় পর্যন্ত। চলনবিলাঞ্চলে বিভিন্ন শুটকি চাতালে এ মৌসুমে প্রতিদিন শুটকি মাছ দাঁড়ায় ৫০-৬০ মণ।

 

শুটকি চাতাল মালিক শরিফুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানা জায়গা লিজ নিয়ে তৈরী শুটকি শুকানোর কাজ আর এ কাজ করছেন প্রায় তিনশত থেকে চারশত নারী শ্রমিক।তারা আরও বলেন মাছে লবণ মাখানো পর শুকাতে দেয়া হয় এতে মাছ দ্রুত শুকায়ে যায়, লবণ মাখানো হলেই কাঁখে করে নারীরা নিয়ে যান মাচায়। মাচায় নেওয়ার পর মাছগুলো সুন্দর করে বিছিয়ে রোদমুখী করা হয়।সারাদিন বেশ  কয়েকবার উল্টে-পাল্টে দেওয়া হয়। রোদ কম থাকলে শুকাতে লাগে তিন-চার দিন। আবার রোদ বেশি থাকলে একদিনেই শুটকি হয়ে যায়।তবে বড় কিছু মাছে আবার একটু সময় বেশি লাগে।

 

শুটকি আকারভেদে দাম হয় ভিন্ন ভিন্ন। ছোট আকারের মাছের শুঁটকি প্রতিমণ ১৬ থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বড় আকৃতির মাছের শুটকি ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা মণ।

প্রতিদিন একজন নারী শ্রমীকের মুজুরী ৩০০ টাকা ও পুরুষ শ্রমীকদের ৫০০ টাকা সঙ্গে নিয়মিত শ্রমিকদের খেতে দেন মহাজন তাতে কম মজুরিতে কাজ করেও খুশি শ্রমীকরা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বলেন, বৃত্তর চলনবিল অঞ্চল শস্য ও মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত এই অঞ্চলের ফসলাদি ও মৎস্য সুস্থভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নতি লাভ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, চলনবিলের শুটকির সুনাম ও চাহিদা দুটোই রয়েছে। ফলে আমরা এই শুটকির মান বৃদ্ধির জন্য চাতাল মালিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এই অঞ্চলের শুটকি ব্যবসা আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।চাতাল মালিকরা অস্থায়ী হওয়ায় তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর