মুহাইমিনুল (হৃদয়) টাংগাইল সংবাদদাতা:
গেল কয়েক দফা বন্যার রেস কাটতে না কাটতেই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে আবারও শুরু হয়েছে পানি বৃদ্ধি।গেল ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চল।লোকালয়ে আবারও ঠুকতে শুরু করেছে পানি।পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনার পূর্ব পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদ, মন্দির সহ শত শত ঘর-বাড়ি নদীতে বিলিন হওয়ার শঙ্কায় আছে।এ সব ঘর-বাড়ি নদীতে বিলিন হলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে।
নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের ধান, সবজি, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা।ইতিমধ্যে জেলার বেশ কিছু এলাকার ধান পানিতে ঠুবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
সম্প্রতি বন্যার পানিতে জেলার ভূঞাপুর উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষ তাদের বাসস্থানে ফিরেছে।ঘর-বাড়ি গুলোতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েই গেছে।তার মধ্যে আবারও পানি বৃদ্ধি। এ যেন মরার উপর খারার ঘাঁ।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া,চিতুলিয়াপাড়া সহ ভাঙ্গন আতংকে রাত কাটাচ্ছে বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।
গত সপ্তাহে এসব গ্রামে আকস্মিক ভাঙন দেয়।এতে হুমকির মুখে পড়ে বেশ কয়েকটি মসজিদ,মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় সহ শত শত পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি।আকস্মিক এই ভাঙনে অনেকটাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন।পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেখা না পেয়ে ভালকুটিয়া জামে মসজিদ রক্ষায় এলাকাবাসী নিজস্ব উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে নদীতে ফেলছে।
গাবসারা ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন বলেন, একদিকে করোনা, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। দুই মিলিয়ে আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তার মধ্যে আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মহীন হয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ভালকুটিয়া গ্রামের আজাহার বলেন,দীর্ঘ বন্যার পর যমুনার পানি কমতে শুরু করায় একটু স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলাম।হঠাৎ আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকটা আতংকে রাত কাটাচ্ছি।
স্থানীয়রা আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পর হঠাৎ করে আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে তারা এখন দিশেহারা।স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন রোধে বাঁধ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবে রুপ নিচ্ছে না।নেয়া হচ্ছে না ভাঙন রোধে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা। প্রতিবছর টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড লোক দেখানো কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও তা কোন কাজেই আসছে না। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের বিষয়টি মাত্র শুনলাম।পরিদর্শন করে ঝুকিপূর্ণ মনে হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
#CBALO/আপন ইসলাম