রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দলের দুঃসময়ের প্রকৃত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে রাজাকার পুত্র ও বিএনপি নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এতে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১২সেপ্টেম্বর) বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে হাবিবুর রহমান উজির সিকদারকে সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ এমাদুল হক মনিরকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়।
দীর্ঘ দশ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তোড়জোর শুরু হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। অতিসম্প্রতি ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনার পর থেকেই কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে রাজাকার পুত্র এবং বিএনপি থেকে সদ্য যোগদান করা এক নেতাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে দলের নিবেদিতদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা। যা নিয়ে রাজনীতির বাহিরেও সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজাকার পুত্র এবং বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা এক বির্তকিত নেতাকে কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। ফলে কমিটি থেকে বাদ পরেছেন দলের ত্যাগী নেতারা। নবগঠিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপজেলার চিহ্নিত রাজাকার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পিচ কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদের পুত্র তরিকুল ইসলাম বুলবুলকে। তার বাবাকে এলাকাবাসী রশিদ রাজাকার হিসেবেই চেনেন। সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন আল আজাদ বাদল একসময়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে কৌশলে উপজেলা আওয়ামী লীগে যোগদান করে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতারা বলেন, সদ্য ঘোষিত উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যে আলাউদ্দিন আজাদ স্থান পেয়েছে সে পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির একজন সক্রিয় নেতা এবং রাজাকার পুত্র তরিকুল ইসলাম বুলবুলকে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কখনো আন্দোলন-সংগ্রামে পাওয়া যায়নি। আগামীতেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, যারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে নয়; তারা কেবল নিজেদের অতীত কর্মকান্ডকে ঢেকে রেখে কৌশলে আওয়ামী লীগে বিরোধ সৃষ্টির জন্য অনুপ্রবেশ করেছে।
এদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে এরজন্য চরম খেসারত দিতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান উজির সিকদার বলেন, বুলবুল রাজাকারের পুত্র কিনা আমি জানিনা। যদি রাজাকারের পুত্র হয় তাহলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ পরবে। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মোঃ শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাবা রাজাকার হলে ছেলেও কি রাজাকার? কিছু নেতাকর্মী কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগকে বির্তকিত করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।