সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

পাবনায় ঐতিহাসিক ভুট্টো আন্দোলনের মাধ্যমে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:২৩ অপরাহ্ণ

রফিকুল ইসলাম সজীব, স্টাফ রির্পোটারঃ

উপদেষ্টা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, পাবনা জেলা শাখা ও নির্বাহী সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এবং সভাপতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন পাবনা জেলা শাখা, সাবেক কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক পারমাণুবিক শক্তি সংস্থা, প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৩-৭৫)। বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকনের পাবনায় ঘটিত ১৯৬৭ সালে ঐতিহাসিক ভুট্টা আন্দোলনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন ১৯৬৬ সালে ৮ এপ্রিল বাঙ্গালী জাতিকে পাকিস্তানি সৈরাশাসক থেকে মুক্ত করার লক্ষে ছয় দফার প্রবক্তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাবনা আসেন এবং পাবনা টাউন হল ময়দানে পাবনার সাধারণ মানুষের মাঝে ছয় দফার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন।

 

আমি বঙ্গবন্ধুর মুখে সেই ছয় দফার বিষয়বস্তুগুলো শুনার পর থেকে আমায় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার অনুপ্রেরণা জাগায়। তারপর ১৯৬৭ সালে ভুট্টা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যেমে রাজনীতিতে প্রবেশ করি। ১৯৬৭ সালে ভুট্টা আন্দোলনের সময় আমি পাবনা রাধানগর মজুমদার একাডেমির ৮ম শ্রেণির ছাত্র। আন্দোলনের দিন আমি যথারীতি স্কুলে যাই। আমাদের স্কুলে সাথেই অবস্থিত এডওয়ার্ড কলেজ। আমি স্কুলে পৌছাতেই বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে। এর্ডওয়াড কলেজ মাঠে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একত্র হচ্ছে মিছিল নিয়ে শহরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই মুহুতে জানতে পারলাম রেশনের ভুট্টা খেয়ে যারা অসুস্থ ছিল তাদের মধ্যে আরো ৮ জন মারা গেছে। হাসপাতালে (বর্তমান ডায়বেটিক হাসপাতাল তখন ছিল পাবনা সদর হাসপাতাল) রুগী রাখার জায়গা নাই, হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। আমি ছাত্রলীগের মিছিলের সাথে শহরে আসলাম।

 

তখন চারিদিক থেকে শত শত ছাত্রজনতা, এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। হাসপাতালে কোন জায়গা নাই, রাস্তায় দাড়ানোর জায়গা নাই। কতো লোক মারা গেছে তা কারও জানা নাই, সময় যত যাচ্ছে ততো রুগির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আন্দোলনে বেশির ভাগ অংশ গ্রহন করেছিল ছাত্র ও হোসিয়ারি শ্রমিক। আমি সহ চুপ্পু, মরহুম রফিকুল ইসলাম বকুল ভাই, ছোবা ভাইসহ আরো ছাত্রলীগের নেতাবৃন্দ। তৎকালীন পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মরহুম আমজাদ হোসেন (চাচা), আব্দুর রব বগা (চাচা) সহ অন্যান্য জেলা আওয়ামীলীগের নেতাবৃন্দের নির্দেশক্রমে পাবনার শহরের কার্ফু ভঙ্গ করে শহর অবরোধ করে রাখি। ইতি মধ্যে লোকজন দৌড়াদোড়ি শুরু করলো, পরে শুনতে পারলাম পাবনা মুসলিমলীগ নেতা পাকিন্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও খাদ্য কমিটি সেক্রেটারী আজগর হোসেন জায়েদী নিহিত ও আহতদের হাসপাতলে দেখতে এসেছে। এই জন্য উত্তাল জনতা তাকে টাউন হলে গিয়ে মাইকে দোষ স্বীকর করতে বললে সে রাজী হয় না।

 

দোষ স্বীকার না করলে উত্তাল জনতা তাকে লাঞ্চিত করে এবং একসময় সে দৌড় দিয়ে তার বাড়িতে (বর্তমান শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ) গিয়ে উঠে। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার থেকে রেশনের মাধ্যমে ভুট্টা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ও সাধারন মানুষদের মাঝে বিতরণ করে। সেই ভুট্টা খেয়ে পাবনাসহ পূর্ব বাংলা শতশত মানুষ বিশক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্ভি হয় ২ জন মৃত্যুবরণ করে। তৎকালীন মুসলিমলীগ নেতা ও খাদ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সেক্রেটারী এবং পাবনা থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন জায়েদীর বাড়ি পাবনার সর্বস্তরের জনগণ ঘেড়াও করে । উত্তালজনতাকে রুখে দিতে ক্যাপ্টেন জায়েদী গুলিবর্ষণ করলে তার গুলিতে শেফালি নামের এক ৮/৯ বছরের মেয়ে নিহিত ও ছাত্রনেতা আহমেদ রফিক , আওয়ামীলীগ (শ্রমিক) নেতা রাজন, ইমাম আলী সহ ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলে। উত্তাল জনতা শহরের হামিদ রোডে অবস্থিত ২ টি বন্দুকের দোকান ভেঙ্গে বন্দুক নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য ক্যাপ্টেন জায়েদীকে উত্তাল জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবনা জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম ও পুলিশবাহিনী কর্মকতাদের নির্দেশে দাঙ্গা পুলিশের সহযোগিতায় ক্যাপ্টেন জায়েদীকে নিয়ে যাওয়ার পথে পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে উত্তাল জনতার সংঘর্ষে পুলিশের ২ সদস্য সোলেমান ও নুরল ইসলাম আহত হয়। শহর সেদিন পরিনত হয়েছিল রনক্ষেত্র আন্দোলনে মরিয়া ছিল পাবনা মানুষ।

 

উক্ত ঘটনার পরে পাবনা জেলা প্রশাসন র্কাফু জারী করে এবং শত শত নেতকর্মী ও সাধারন মানুষদের গ্রেপ্তার করে। তখনকার সামরিক শাসক আইয়ুব খানের ১০ বছর শাসন আমালে এই ভুট্টা আন্দোলন ছিল গোটা দেশ জুড়ে আলোচিত। এই আন্দোলনের নাম দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভুট্টা আন্দোলন নামে। পরে বিি ভন্ন সূত্রে জানতে পারলাম ভুট্টা খেয়ে শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল গফুর ও তার সহধর্মিনী মারা গিয়েছিল। আরো অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসতালে ভর্তি ছিল। এর পর পুলিশ ২ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করেছিল। এর মধ্যে ২ টি মামলা করে ৬৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট করে ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমজাদ হোসেন, এ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, এ্যাডভোকেট গোলাম হাসনাই, এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, আবু তালেব খন্দকার, মরহুম মোঃ নাসিম, ন্যাপ নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা মতিউর রহমান বাচ্চু, সাংবাদিক আনোয়ারুল হকসহ আরো নেতাকর্মীকে দোষী করে ১ হাজার করে টাকা ও ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল।

 

পাবনার ইতিহাসে এই ভুট্টা আন্দোলন স্বর্ণক্ষারে লেখা থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমার ভুলে গেছি সব কিছু। আন্দোলনে জীবন বির্সজন দেওয়া ও আহত ব্যাক্তিদের নামটা ও হয়তো জানে না অনেকে। আজকের তরুনরা তো জানেই না ভুট্টা আন্দোলন কি? রাজনৈতিক দলের সবাইকে অনুরোধ দিনটি যেন যথাযর্থ মর্যাদায় পালন করার ব্যবস্থা এবং তরুন প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানানোর ব্যবস্থা করে। ১৬ মার্চ ভুট্টা আন্দোলন দিবস হিসাবে পালন করলে আমরা মুক্তিকামি জনতা গর্র্বিত হতাম।

 

#CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর