রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি,বরিশাল:
করোনার কান্তি লগ্নে বরিশাল তথা দণিাঞ্চলের কিডনি রোগীদের জন্য সু-খবর দিয়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল কর্তৃপ। দীর্ঘ প্রতিার পর এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালটিতে কিডনি রোগীদের জন্য চালু করা হয়েছে নেফ্রোলজি বিভাগ।
প্রাথমিক পর্যায়ে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন ব্লকে বিভাগটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধণ করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন।
বুধবার সকালে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী দিনে (মঙ্গলবার) কিডনি রোগে আক্রান্ত খসরু আলম সিকদার নামের এক রোগীর পরীামুলকভাবে কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। এতে সফলও হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপ। এর মধ্যদিয়ে কিডনি রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় শেবাচিম হাসপাতাল আরও একধাঁপ এগিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘবছর পর ২০০৪ সালে শেবাচিম হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন বিভাগের অধিনে একটি কিডনি বিভাগ চালু করেছিলেন তৎকালিন কর্তৃপ। এজন্য তখনকার সময়ে দুইটি হেমো ডায়ালাইসিস মেশিনও সরবরাহ করা হয়েছি। কিন্তু কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে কিছুদিন পরেই ওই বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্যাকেট বন্দী অবস্থাতেই বিকল হয়ে পরেছে মেশিন দুটিও।
শেবাচিম হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন দায়িত্ব গ্রহনের পর বিভাগটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ গ্রহন করেন। কিন্তু বিকল হয়ে পরা দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন সচল করা সম্ভব না হওয়ায় সেই উদ্যোগ থমকে যাওয়ার উপক্রম ঘটে। তবে হাল ছাড়েননি পরিচালক। দীর্ঘ সময় চিঠি চালাচালির পর সফলতা এসেছে। এবার শুধু কিডনি ওয়ার্ড নয়, শেবাচিম হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ চালুর অনুমতি পায় হাসপাতাল কর্তৃপ।
এজন্য চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর (সিএমএইচডি) থেকে নিপরো কোম্পানির ১০টি জাপানি ডায়ালাইসিস মেশিন প্রেরণ করা হয় শেবাচিম হাসপাতালে। যার মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ডায়ালাইসিস মেশিনের পাশাপাশি ১৭ লাখ ৩২ টাকা মূল্যের পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের অটোমেটিক ডাইলাইজার রিফ্রেসর মেশিন ও ১২ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি ডায়ালাইসিস বেড বরাদ্দ করা হয়েছে। এসব মূল্যবান মেশিন সরবরাহ করেছে মেসার্স জেএমআই এন্ড মেডিক্যাল ডিভাইস লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি কিডনি ডায়ালাইসিসের যন্ত্রপাতি বরিশালে আসলেও স্থান সংকূলান না হওয়ায় নেফ্রোলজি বিভাগটি চালু করা সম্ভব হচ্ছিলো না। পরে হাসপাতালের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় পূর্বের কিডনি ওয়ার্ডটিই নির্ধারণ করা হয় নেফ্রোলজি বিভাগের জন্য। সেখানে মেশিন স্থাপনের পর মঙ্গলবার থেকে পরীামুলকভাবে বিভাগটিতে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সূত্রমতে, বিভাগটিতে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আলী রুমি। এছাড়া তার সহযোগি হিসেবে রয়েছেন নেফ্রোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ মানবেন্দ্র দাস। এরমধ্যে পূর্ব থেকেই শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে দায়িত্বরত ছিলেন ডাঃ মানবেন্দ্র দাস। আর সম্প্রতি গোপালগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বরিশালে বদলী হয়ে এসেছেন ডাঃ মোহাম্মদ আলী রুমি।
বিভাগটি উদ্বোধণের পর প্রথম সেবা গ্রহনকারী পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা খসরু আলম সিকদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন কিডনি সমস্যায় ভুগছি। এ কারণে গত ১০ মাস ধরে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। প্রাইভেট কিনিক বা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে প্রতি ছয় মাসের প্যাকেজে আমার আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু শেবাচিম হাসপাতালে একই প্যাকেজ মাত্র ২০ হাজার টাকা। ছয় মাসের এই প্যাকেজে প্রতি সপ্তাহে দুইটি এবং ছয় মাসে মোট ৪৮টি ডায়ালাইসিস দেয়া হবে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে প্রতি সপ্তাহের চারদিন কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হবে এই বিভাগে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সপ্তাহের সাতদিনই এখানে ডায়ালাইসিস করার পরিকল্পনা করেছে সংশ্লিষ্টরা।