২০০৮ সালের সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে বিলুপ্ত করা হয় সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী) আসন। এর ফলে শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটি চরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন ও চৌহালী উপজেলা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে উন্নয়নের মূল ধারার বাইরে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে শুধু প্রশাসনিক সীমানাই পরিবর্তিত হয়নি, বরং জনগণের মৌলিক অধিকারও সংকুচিত হয়েছে। উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে, জনগণ কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আর অবহেলার শিকার হয়ে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়েছে এই জনপদ। চৌহালী আসন বিলুপ্ত নয়-দরকার পুনর্বহাল দাবি জনতার।
চৌহালী একসময় নিজস্ব সংসদীয় আসনভুক্ত থাকায় সরাসরি সরকারি বাজেট বরাদ্দ ও উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা পেত। ১৯৯৬-
২০০১-২০০৬ মেয়াদে সরকারের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আনসার আলী সিদ্দিকী, মেজর (অব.) মনজুর কাদের প্রফেসর শাহজাহান এই অঞ্চলের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নত করতে ভূমিকা রাখে। তবে ২০০৮ সালে নতুন সীমানা নির্ধারণে এতে দেখা যায়, বেলকুচি উপজেলায় তুলনা মূলক ভাবে উন্নয়নের ধারা বজায় থাকলেও চৌহালী উপজেলায় সেভাবে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত ১৭ বছরে তিনজন সংসদ সদস্য চারবার নির্বাচিত হলেও চৌহালীতে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। বরং এই সময়ে যমুনার অব্যাহত ভাঙনে চৌহালীর বিস্তীর্ণ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত নদীশাসন, দুর্বল অবকাঠামো এবং প্রশাসনিক অবহেলার ফলে এই এলাকার জনগণ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশায় তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এমতাবস্থায়, সিরাজগঞ্জ-৬ শাহজাদপুর পূর্ব অঞ্চলের একাংশ নিয়ে সাবেক নির্বাচনী এ আসন চৌহালী পুনর্বহালের দাবি দিন দিন জোরালো হয়ে উঠছে। সম্প্রতি চৌহালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন নির্বাচন কমিশন বরাবর আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছেন, যাতে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন পুনর্বহালের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন দপ্তরে চৌহালী আসন পূর্ব বহালের দাবিতে আবেদন করা বা জমার সাথে অনেকেই রয়েছে।
একটি প্রশাসনিক সীমানা বিলুপ্ত হওয়া মানে শুধু একটি এলাকা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং এর জনগণও উন্নয়নের দিক থেকে বঞ্চিত হয়। চৌহালী একসময় স্বতন্ত্র আসন হিসেবে সরাসরি সরকারি বরাদ্দ পেত, কিন্তু গত ১৭ বছরে আমরা উন্নয়নের ন্যূনতম সুবিধা পাইনি। নদী ভাঙ্গনের ফলে অর্ধেকের বেশি এলাকা যমুনার গর্ভে হারিয়ে গেছে, অথচ কোনো দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা পরিষদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ সকল স্থাপনাগুলো ভাসমান,শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খারিজ যোগ্য মৌজায় খাজনা চালু ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমরা যে পিছিয়ে পড়েছি, তার মূল কারণই হলো রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব। তাই সরকারের রাজস্ব আয় ও উন্নয়নের স্বার্থে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এবং অঞ্চলটির ভবিষ্যৎ রক্ষার স্বার্থে আমরা আবারও সিরাজগঞ্জ-৬ আসন পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শাহজাদপুর পূর্ব অঞ্চল নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৬ সাবেক চৌহালী আসন পূর্ণবহালে ভোটারদের এই দাবিকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সচেতন ও অভিজ্ঞ মহল, জনপ্রতিনিধি এবং ভুক্তভোগী জনগণ একত্রিত হয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী) আসন পুনর্বহালের আবেদন
জানাচ্ছেন। তাদের মতে, এই আসন পুনর্বহাল করা হলে চরাঞ্চলে দিয়ারা জরিপ যোগ্য ১৭৪টি মৌজায় খাজনা চালু সরকারের রাজস্ব বাড়বে, চৌহালী ও চরাঞ্চলীয় এলাকার জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এবং উন্নয়নের পথে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
নদীর তীর হবে যমুনা সৈকত বিনোদন কেন্দ্র এবং চরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে উন্নয়নের আলো।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসন পুনর্বহালের বিষয়টি শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়; এটি একটি জনপদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত এই অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বর্তমান সরকার এবং নীতি-নির্ধারকদের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।