পাবনায় সরকারি আইন কর্মকর্তা পিপি ও জিপি পদে নিজ অনুগতদের নিয়োগ দিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনজীবীদের মতামতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আওয়ামী মতাদর্শী আইনজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে আইনজীবীরা জানান, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৫ বছর ধরে সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও পাবনা জেলার আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে পিপি, জিপি ও অন্যান্য সরকারি পদে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। এতে জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে আন্তরিক সুসম্পর্ক বজায় থাকে। কিন্তু সম্প্রতি, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি কোন আইনজীবীদের মতামত না নিয়েই ব্যক্তি স্বার্থে নিজ অনুগত আইনজীবী আমিনুল ইসলাম পটলকে পিপি ও আক্তারুজ্জামান মুক্তাকে জিপি পদে ডিও লেটার দিয়ে নিয়োগ দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জিপি পদে ডেপুটি স্পীকারের সুপারিশকৃত অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মুক্তার বর্তমান বয়স ৬৭ বছর। তারই সুপারিশে ইতিপূর্বে অ্যাডভোকেট মুক্তা ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত পিপি ছিলেন। তাকেই আবার ২০২৪-২৮ সালের জন্য জিপি হিসেবে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আবার পিপি হিসেবে ডেপুটি স্পীকারের প্রস্তাব পাঠানো অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম পটল অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। এই ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট পটল। সেই মানুষকে কিভাবে তিনি পিপি করতে চান, কি উদ্দেশ্যে তা কারোরই বোধগম্য নয়।
আওয়ামী আইনজীবি সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবি সমন্বয় পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পাবনা থেকে আইন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য একটি তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলেও ডেপুটি স্পীকারের হস্তক্ষেপের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আইনজীবি নেতারা।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আইনজীবীদের ঐক্য ধরে রাখতে আইন কর্মকর্তা নিয়োগে ডেপুটি স্পিকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে, সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনজীবীদের আবেগ ও অনুভূতির মূল্যায়নে আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন আইনজীবীরা।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অতীতে প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন আইনজীবী সমিতিতে অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ করেননি, বিপুল অর্থ ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও তিনি তাতে কোন রকম সহযোগীতা করেননি। আমরা বিগত দিনে আইনজীবী সমিতির রাজনীতিতে কখনোই ব্যক্তি বলয় সৃষ্টি হতে দেইনি। ডেপুটি স্পিকার সেই ঐক্যের বন্ধন বিনষ্ট করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট দেওয়ান মজনুল হক, সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু, অ্যাডভোকেট হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ খান রতন, অ্যাডভোকেট তৌফিক ইমাম খান, অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুর রকিবসহ কর্মরত সকল আইনজীবিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর মুঠোফোনে মঙ্গলবার বিকেলে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়া ডেপুটি স্পিকারের সুপারিশকৃত জিপি পদের অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মুক্তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।