নাটোরের নলডাঙ্গায় জমে উঠেছে মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বিভিন্ন রাস্তায়, সরকারি কলেজ গেইট ও বিভিন্ন মোড়ে প্রতিদিন কাঁচা তাল নিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও মৌসুমী ফল তাল বিক্রিতে মেতে উঠে আর ক্রেতারা পায় নতুন স্বাদ।
প্রতি পিস তালের শাঁস (কাঁচা তাল) বিক্রি হচ্ছে দশ টাকা, তিন পিস নিলে ২৫ টাকা। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার তাল গাছ রয়েছে। তালে কুশ বা শাঁস অন্যতম ভিন্নধর্মী রসালো ফল তালের আঁটি নামে বেশি পরিচিত। নরম সাদা অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালকুশ’ বা তালের আঁটি বলা হয় । প্রচুর গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে দিন দিন খুবই প্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় তালগাছগুলোতে কচি তালে ভরে গেছে। কৃষকদের গাছের তালের শাঁস যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিশুসহ সব বয়সী লোকের মধ্যে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, সদর বটতলা, কলেজ রোড, তালতলা ও বাসুদেবপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে। তালের শাঁস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাফিজুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও আছতুল আলী সহ অন্তত আরও দশ জন।
তাল শাঁস বিক্রেতা বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আছতুল আলী বলেন- দশ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়েই সংসার। প্রতি বছরই এসময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালাই। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করেন।
তিনি আরও বলেন, তাল গাছে ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পিস শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস পাঁচ থেকে দশ টাকা দরে বিক্রি করছি (আকার অনুযায়ী)। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে বারো’শ টাকা লাভ হয়।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মানোয়ারুল ইসলাম শাঁসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দুর করে। এছাড়া ভিটামিন, মিনারেল, জিংকসহ নানা ধরনের ভিটামিন আছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তালে শাঁস ডায়বেটিকস্ রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয় বলেও জানান তিনি।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কিশোয়ার হোসাইন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ও কৃষি জমিতে বজ্রপাত প্রতিরোধে ও মাটির ক্ষয়রোধে তালের বীজ ইতিপূর্বে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৪০০ পিস বীজ রোপণ করা হয় এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরেও ৪০০ পিস, মোট ৮০০ পিস তালের বীজ রোপণ করা হয়েছে। তাল গাছ রোপন এবং পরিচর্যায় কৃষকের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা কৃষি অফিস সর্বদা কৃষকদের পাশে আছেন।