মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারের পথে বাংলাদেশ

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ১১ মে, ২০২০, ৯:২৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক খুঁজছেন সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা একটি প্রতিষেধক বের করেছেন। ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে তারা সাফল্যও পেয়েছেন। তবে সব প্রক্রিয়া শেষে তা মানুষের কাজে লাগতে আরও বছরখানেক বা তার বেশিই সময় লেগে যাবে। অন্যদিকে, ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল নামে হায়দরাবাদের এক কোম্পানি জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় তারাও তৈরি করেছে একটি প্রতিষেধক। যা নেজাল ড্রাপ। করোফ্লু নামে বাজারে আসবে। মানবদেহে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এ বছরেই শুরু করা যাবে বলে মনে করছে ওই সংস্থা। এদিকে করোনা মহামারী ঠেকানোর বৈশ্বিক দৌড়ে শামিল হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রথম পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। দুটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে মেলবোর্নের কাছে একটি পরীক্ষাগারে কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিএসআইআরও) প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

খবর আজকাল, ইউএসএ টুডে, স্পুটনিক ও এএফপির। পিটর্সবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের লেখাটি বেরিয়েছে বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত ল্যান্সেট গোষ্ঠীর ‘ইবায়োমেডিসিন’ জার্নালে। ভ্যাকসিনটিকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে, ‘পিটকোভ্যাক’। আঙ্গুলের ডগার মতো ছোট্ট একটি প্যাচ। ইঁদুরের শরীরে লাগিয়ে দেখা গেছে, ১৪ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে সার্স ও কোভ-২ এর অর্থাৎ যে করোনাভাইরাসটি আজ মানবজাতির সঙ্কট ডেকে এনেছে তার এ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে আবির্ভূত সার্স এবং ২০১৪ সালের মার্স ভাইরাসও করোনা গোষ্ঠীর। গবেষণাপত্রের অন্যতম গবেষক এ্যান্ড্রিয়া গাম্বাট্টো জানান, এর আগে ওই ভাইরাসগুলোর ওপর গবেষণা করে তারা জানতে পারেন, এর বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষাকবচ দেয়ার জন্য দরকার একটি বিশেষ প্রোটিন, যার নাম স্পাইক। বর্তমানে ফ্লুয়ের যে টিকা চালু আছে, অনেকটা সে ধরনের। এই টিকা দেয়া হবে বিশেষ পদ্ধতিতে। ছোট্ট এক প্যাচ তৈরি করা হয়েছে, যাতে থাকছে ৪০০ ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সূচ। যা শুগার ও প্রোটিনের তৈরি।

ওই সূচগুলো চামড়ায় বিঁধে শরীরে ঢুকে যায় প্রোটিন। তবে কোন প্রকার ব্যথা অনুভূত হয় না। ব্যাপারটা অনেকটা ভেলক্রো লাগিয়ে দেয়ার মতো। ভ্যাকসিনটি ফ্রিজে রাখার দরকার পড়বে না। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই ঠিক থাকবে। গবেষকরা জানান, ইঁদুরের ওপর এর প্রতিক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ এখনও অসেনি। যদিও মার্স টিকার ক্ষেত্রে সে সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কোন রোগীর ওপর নতুন উদ্ভাবিত টিকা প্রয়োগ করতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। এদিকে হায়দরাবাদের জৈবপ্রযুক্তি সংস্থা ভারত বায়োটেক করোনাভাইরাস ঠেকাতে এক ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

‘নেচার ইন্ডিয়া’য় এ খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। নাকে ওই ভ্যাকসিনটি ফোটা ফোটা করে দিলে সুফল পাওয়া যাবে বলে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে। আগামীবছর পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগের কাজ শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্টদের সহায়তায় উইসকনসিনের একটি সংস্থা ফ্লুজেনের সঙ্গে ওই ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্লোরোফ্লু’। ভারত বায়োটেকের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান রয়াচেস এলা জানিয়েছেন, ভারত বায়োটেক ওই প্রতিষেধক তৈরি করবে এবং সারা পৃথিবীতে তিন কোটি ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে ফ্লুজেন। সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই প্রাণীদের ওপর ওই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে। সেই পর্ব মিটলে বছরের শেষের দিকে মানুষের শরীরে ‘ক্লোরোফ্লু’ পরীক্ষা হবে।

সাফল্য পেলে বাজারে ছাড়া হবে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সিএসআই-আরওর স্বাস্থ্য পরিচালক রব গ্রেনফেল জানিয়েছেন, তাদের পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যা সম্পন্ন হতে তিন মাস সময় লাগবে। তিনি বলেন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ ছাড়া কোন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়া যাবে না। সাধারণ গ্রাহকদের হাতে ভ্যাকসিন তুলে দিতে ১৮ মাস সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। অবশ্যই এর পরিবর্তন হতে পারে। কারণ, আমাদের অনেকগুলো কারিগরি বাধা দূর করে এগোতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার এ গবেষক বলেন, বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ৮ সপ্তাহে প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা স্তরে চলে এসেছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগে। তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের দুটি ভ্যাকসিন এ মাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের শুরুতে মানবদেহে প্রয়োগ শুরু হবে। সিএসআইআরও বলেছে, পরীক্ষায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করে দেখা হবে এবং উন্নত সুরক্ষার জন্য ইনজেকশন ও নাকের স্প্রে তৈরি করা হবে।

চীনের বাইরে সিএসআইআরও একমাত্র গবেষণা সংস্থা, যারা পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাসে আলাদা সংস্করণ তৈরি করতে পেরেছে এবং কোভিড-১৯ এর প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা মানুষের ওপর কোন ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালিয়েছে। গত মাসে সিয়াটলে এ পরীক্ষা শুরু হয়। মার্কিন সংস্থা মর্ডানা, জনসন এ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন তৈরিতে চুক্তি করেছে। এর বাইরে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে তারা। ইসরাইলও তাদের বায়ো-কেমিক্যাল পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের প্রোটোটাইপ ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করছে। ইতোমধ্যে ইসরাইলের বিজ্ঞানীদের একটি দল আশ্বস্ত হওয়ার মতো খবর দিয়েছে। তারা বলছে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির মাত্র কয়েকদিন দূরে রয়েছেন তারা।

যা দিয়ে চলতি বছরের ১ জুন মানব দেহে পরীক্ষা চালানো হতে পারে। গ্যালিলি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এমআইজিএএল) বায়োটেক নোলজি গ্রুপের প্রধান ড. চেন কেটজ বলেন, আমরা ভ্যাকসিন তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে গ্যালিলি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ইসরাইলী গবেষকরা বলেছিলেন, তারা ৯০ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর